‘সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদ কারাগারে, তবু থামেনি তাঁর বাহিনী
Published: 30th, May 2025 GMT
চট্টগ্রামে আলোচিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ গ্রেপ্তারের আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও তাঁর বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্য এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়ার পরও তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয়নি একটিও আগ্নেয়াস্ত্র। ফলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছোট সাজ্জাদের বাহিনী।
পুলিশের একাধিক তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, সাজ্জাদের পাঁচ সহযোগী—রায়হান, মোবারক হোসেন ওরফে ইমন, বোরহান, খোরশেদ ও ভাতিজা মোহাম্মদের এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় নগরে বাড়ছে খুনোখুনি ও অস্ত্রের ব্যবহার। সর্বশেষ ২৩ মে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে সন্ত্রাসী আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায়ও উঠে এসেছে সাজ্জাদের বাহিনীর নাম।
ছোট সাজ্জাদ মূলত চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত আট ছাত্রলীগ নেতা খুনের মামলায় অভিযুক্ত (পরে খালাসপ্রাপ্ত) ও বর্তমানে বিদেশে পলাতক শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ ১৭টি মামলা রয়েছে। বড় সাজ্জাদের হয়ে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারীতে আধিপত্য বজায় রাখতে অপরাধ সংঘটিত করতেন ছোট সাজ্জাদ।
পুলিশ জানায়, ছোট সাজ্জাদের বাহিনীতে রয়েছেন ২৫ জন সক্রিয় সদস্য। তাঁকে গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বাহিনীর হাল ধরেন পাঁচ সহযোগী।
কারা এই পাঁচ সহযোগী
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে সংঘটিত খুনের ঘটনায় উঠেছে সাজ্জাদের ঘনিষ্ঠ সহচর মোহাম্মদ রায়হানের নাম। তিনি রাউজানের মৃত বদিউল আলমের ছেলে। মাদকের মামলায় একাধিকবার কারাগারে যান। সেখানে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। গত ৩০ মার্চ বাকলিয়া এক্সেস রোডে জোড়া খুন, ১১ এপ্রিল রাউজানে যুবদল কর্মী ইব্রাহিম হত্যা, ২৩ মে ঢাকাইয়া আকবর খুনসহ আট মামলার আসামি রায়হান।
সাজ্জাদের আরেক সহযোগী মোবারক হোসেন ওরফে ইমন। ফটিকছড়ির কাঞ্চনগরের মো.
মোহাম্মদ বোরহানও জোড়া খুন ও ঢাকাইয়া আকবর হত্যাসহ আট মামলার আসামি। তিনি বড় সাজ্জাদের নির্দেশে নির্মাণাধীন ভবন ও কারখানা থেকে চাঁদা আদায় করেন। চাঁদা না দিলে অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানো এবং গুলি করার কাজ করেন দলের সদস্যরা। বোরহান নগরের ২ নম্বর গেট এলাকার খায়রুল আলমের ছেলে।
অন্যদিকে রাউজানের খোরশেদ এবং বায়েজিদের চালিতাতলির মোহাম্মদ ওরফে ভাতিজা মোহাম্মদের বিরুদ্ধেও হত্যা ও অস্ত্র মামলাসহ পাঁচটি করে মামলা রয়েছে। তাঁরা এখনো পলাতক।
আরও পড়ুনঅস্ত্র উঁচিয়ে চাঁদা দাবি, ছোড়েন গুলি২০ অক্টোবর ২০২৪অস্ত্র হাতে মোবারক হোসেন ওরফে ইমনউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ স ন ওরফ ম হ ম মদ নগর র সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।