এনসিপির নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখায় কী আছে
Published: 30th, May 2025 GMT
নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি রূপরেখা প্রস্তাব করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা আইনসভার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করার কথা বলেছে।
এনসিপির এই প্রস্তাব ২৫ মে ই-মেইলের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হলে প্রস্তাবটি সরাসরি হস্তান্তর করা হবে বলে এনসিপি সূত্র জানিয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানে ‘অন্তর্বর্তী সরকার’–এর বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে। এই সরকারের একটি রূপরেখাও তারা প্রস্তাব করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় প্রায় সব দলই নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছে। তবে এই সরকারের রূপরেখা কেমন হবে, তা নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ না নেওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৯০ দিন। প্রধান উপদেষ্টাসহ সর্বোচ্চ ১৫ জন সদস্য নিয়ে কাজ করবে উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবে নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা—এই তিন অঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত হবে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি)।
এই কাউন্সিলের ৯ সদস্যের মধ্যে ন্যূনতম ৭ জনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে। এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া না গেলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পর্যায়ক্রমে আরও ছয়টি পদ্ধতির কথা বলা আছে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে। উপদেষ্টা পরিষদের অন্য উপদেষ্টাদের মনোনয়ন দেবেন প্রধান উপদেষ্টা।
এনসিপির মতে, নির্বাচনকালীন এই সরকারের নাম হতে পারে ‘নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার’ বা ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার’। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাব হলো, আইনসভার নিম্নকক্ষ তথা সংসদ ভেঙে দেওয়ার অন্তত তিন সপ্তাহ আগে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হবে। প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে সর্বদলীয় কমিটিতে সংসদীয় দলগুলোর সদস্যসংখ্যা নির্ধারিত হবে। সংসদীয় কমিটিতে সদস্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে যেকোনো দলকে ন্যূনতম ৫ শতাংশ ভোটের অধিকারী হতে হবে।
আইনসভার যেকোনো কক্ষের (উচ্চকক্ষ, নিম্নকক্ষ) সদস্য এই কমিটির সদস্য হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। সরকারি দল, প্রধান বিরোধী দল এবং অন্যান্য বিরোধী দল নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী/তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনজন করে মোট ৯ জন নির্দলীয় প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে পারবে। কোন দল কোন কোন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করেছে, জনগণের কাছে তা খোলাসা করতে হবে।
প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে একটি নাম চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হবে। কমিটি ৮-৩ ভোটে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে একজন ব্যক্তির নাম চূড়ান্ত করবে।
এই প্রক্রিয়ায় প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করা না গেলে উচ্চকক্ষ ‘র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং’পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবে।
এনসিপি তাদের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু অযোগ্যতার কথাও বলেছে। সেগুলো হলো, কোনো ব্যক্তি দুর্নীতি বা কোনো ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হলে, নৈতিক স্খলনের বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ থাকলে; কোনো রাজনৈতিক দল বা অঙ্গসংগঠন, এর সমর্থক সংগঠন বা ছায়া সংগঠনের সদস্যপদ থাকলে এবং দলীয় বক্তব্যের নজির থাকলে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার অযোগ্য হবেন।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার প্রথম আলোকে বলেন, এবারের সংস্কারের এজেন্ডায় নিরবচ্ছিন্ন ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের রূপরেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অতীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসে অনির্বাচিত কায়দায় ক্ষমতায় থাকার অভিলাষ দেখা গেছে। এই দুরভিসন্ধি বন্ধ করতে হলে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে পেতে হবে। সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে নির্বাচনকালীন প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের সুপারিশ করেছে এনসিপি। এর ফলে সরকারি দলের প্রতি অনুগত ব্যক্তিদের দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পথ বন্ধ হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রস ত ব আইনসভ র দলগ ল র সরক র র এনস প র ঐকমত য য় কম ট র পর খ হওয় র সদস য ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
গণতন্ত্রের বিকাশে এনসিসি যেভাবে কাজ করবে
সংবিধান সংস্কার কমিশন ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল’ (এনসিসি) নামে একটি সমন্বিত রাষ্ট্রীয় সংস্থা প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে। কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে এনসিসি গঠন একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী প্রস্তাব।
এনসিসি একটি টেকসই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মৌলিক পরিবর্তন আনবে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর শুরুতে এনসিসি নিয়ে অনেকের মধ্যেই যথেষ্ট কৌতূহল পরিলক্ষিত হয়েছে।
কিন্তু পর্যায়ক্রমে এ বিষয়ে যথাযথ ও সম্যক ধারণা তৈরি না হওয়ায় জনগণ এনসিসির গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি। এই নিবন্ধে এনসিসি–সম্পর্কিত কমিশনের প্রস্তাবের কিছু বৈশিষ্ট্যের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
এনসিসির গঠনএনসিসির কাঠামোগত গঠন নানান দিক থেকে অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ ও প্রতিনিধিত্বশীল। রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগেরই সর্বোচ্চ ব্যক্তিরা পদাধিকারবলে এনসিসির সদস্য হবেন। এতে এনসিসির সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং নিয়োগসংক্রান্ত চিরাচরিত জটিলতা থাকবে না।
আইনসভা থেকে ছয়জন (বিরোধীদলীয় নেতা, উভয় কক্ষের দুজন স্পিকার, দুজন বিরোধী দল মনোনীত ডেপুটি স্পিকার এবং একজন সংসদ সদস্য), নির্বাহী বিভাগ থেকে দুজন (রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, তিনি আইনসভারও সদস্য), বিচার বিভাগ থেকে একজন (প্রধান বিচারপতি) এনসিসির সদস্য হবেন।
কমিশনের প্রস্তাবে এনসিসিতে সরকারি ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্বেরও সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা হয়েছে। একদিকে প্রধানমন্ত্রী ও আইনসভার উভয় কক্ষের স্পিকার মিলে তিনজন সরকারি দল থেকে, অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতা ও আইনসভার উভয় কক্ষের দুজন ডেপুটি স্পিকারসহ তিনজন বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব করবে। বাকি তিনজন অনেকটা নিরেপক্ষ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি সাধারণত সরকারি দল থেকে নির্বাচিত হলেও পদাসীন হওয়ার পর তিনি দলনিরপেক্ষ হিসেবে বিবেচিত হন। তথাপি ভারসাম্যের স্বার্থে এমন একজন সংসদ সদস্য এনসিসির সদস্য হবেন, যিনি প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতার প্রতিনিধিত্বকারী সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের উভয় কক্ষের সদস্য ব্যতীত বাকি সব সদস্য দ্বারা মনোনীত। তিনি আইনসভার উভয় কক্ষের নির্বাচিত ছোট দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের প্রতিনিধিও বটে।
আরেকজন নিরপেক্ষ সদস্য হলেন প্রধান বিচারপতি, যিনি অত্যন্ত সম্মানিত, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সাংবিধানিকভাবে নিরপেক্ষ।
এনসিসি একটি জাতীয় ঐক্যের প্রতীকযেহেতু এনসিসি রাষ্ট্রের সব অঙ্গ নিয়ে গঠিত এবং সংসদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব এতে একসঙ্গে কাজ করবে, তাই তাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রকে ব্যাপকভাবে শক্তিশালী করবে ও এই গণতান্ত্রিক অনুশীলন দেশের সব রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সংবিধান দ্বারা এনসিসিকে অর্পণের প্রস্তাবিত যেসব জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়, সেসব বিষয়ে এনসিসি কর্তৃক সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হওয়ায় তা সুবিবেচনাপ্রসূত হবে এবং দেশের মানুষের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হবে।
এনসিসির কাজ কীগণতন্ত্রের বিকাশের জন্য নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় সরকার কমিশন (প্রস্তাবিত) ও পাবলিক সার্ভিস কমিশন ইত্যাদির মতো সাংবিধানিক সংস্থাগুলোকে সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বচ্ছ এবং স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করতে হবে।
অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ইত্যাদির মতো কিছু সাংবিধানিক সংস্থাকে (প্রস্তাবিত) সাহসিকতার সঙ্গে, আপসহীন হয়ে ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে; সরকার বা তার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অপব্যবহারের তদন্তের ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
যখন সাংবিধানিক সংস্থাগুলো সঠিকভাবে কার্যকর হয়, তখন জনগণ শক্তিশালী গণতন্ত্র ও সুশাসনের মাধ্যমে প্রকৃত সেবা পেতে এবং সুবিধা ভোগ করতে শুরু করে। সব রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আইনের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ে ও জবাবদিহি নিশ্চিত হয়। ফলে রাজনৈতিক সরকারও তার কার্যক্রম সঠিকভাবে ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারে।
যদি একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি সাংবিধানিক সংস্থার প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়, তাহলে সেই সংস্থা স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে।
বর্তমান সংবিধানের অধীনে এই ধরনের নিয়োগ মূলত প্রধানমন্ত্রীর একক বিবেচনার ভিত্তিতে করা হয়। ফলে সেই সংস্থাগুলোর ওপর নির্বাহী বিভাগের প্রভাব এবং ক্রমাগত হস্তক্ষেপ তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে, এনসিসি সব সাংবিধানিক সংস্থার কমিশনারদের নিয়োগ করবে। এতে সাংবিধানিক সংস্থাগুলো কার্যকর ও স্বাধীনভাবে কাজ করে সব প্রাসঙ্গিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ তদারক করবে এবং তাদের জবাবদিহির আওতায় আনবে; যা পর্যায়ক্রমে তাদেরকে দক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত এবং দেশ ও দেশের মানুষের প্রকৃত সেবক হতে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুনজাতীয় সাংবিধানিক কমিশন যে কারণে প্রয়োজন১০ এপ্রিল ২০২৫যদিও সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, তা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে তাকে কীভাবে নিয়োগ করা হবে, সে সম্পর্কে কোনো গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়নি। যেহেতু রাষ্ট্রপতি মূলত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে এই নিয়োগ করেছিলেন, তাই বিরোধীদের দ্বারা প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে সর্বদা প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
কমিশন সুপারিশ করেছে যে এনসিসি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে মনোনীত করে রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়োগের জন্য নাম প্রেরণ করবে। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ গ্রহণযোগ্য হতে হলে অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এবং সরকারি ও বিরোধী দলের যৌথ সিদ্ধান্তে হওয়া বাঞ্ছনীয়।
যেহেতু এনসিসিতে আইনসভায় নির্বাচিত অধিকাংশ দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে এবং সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চর্চা ও সংস্কৃতি তৈরি হবে, সেহেতু প্রধান উপদেষ্টার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে মনোনয়নে এনসিসি হবে সবচেয়ে উপযুক্ত সংস্থা।
প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগপ্রক্রিয়ায় এনসিসির সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি ন্যায্য ও টেকসই ব্যবস্থায় রূপ নেবে।
ওপরে উল্লিখিত বিষয় ছাড়া এনসিসি সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত অন্য সুনির্দিষ্ট কার্যাবলি ও আইন দ্বারা অর্পিত কার্যাদি সম্পাদন করতে পারবে।
এনসিসি প্রধানমন্ত্রীর কাজে প্রতিবন্ধক নয়, বরং সহায়কএনসিসি কেবল সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করবে। এনসিসি কোনো নির্বাহী কর্তৃত্ব প্রয়োগ করবে না বা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাও হরণ করবে না।
এনসিসি কর্তৃক সরকারের কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করা কিংবা আপত্তি জানানোর সুযোগ নেই। এনসিসিতে যেহেতু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সদস্য হিসেবে থাকবেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় এনসিসি সরকারের সহায়ক ও সম্পূরক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
সরকারকে সঠিক পথে চালানোর জন্য যেসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যদি তাদের প্রধানদের সরকার বা সরকারপ্রধানের ইচ্ছেমতো নিযুক্ত করা হয়, তাহলে সরকার নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিতর্কিত হয়ে ওঠে।
তাই ওই সব নিয়োগ এনসিসির মাধ্যমে হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে এবং সরকার বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকবে। এ রকমটা করতে পারলে সার্বিকভাবে দেশের জন্যে আশীর্বাদ বয়ে আনবে।
জাতীয় সংকটের সময় সরকার এনসিসিকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে পারবে। বিতর্কিত বিষয়গুলো এনসিসির কাছে অর্পণ করে সরকার রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের পাশাপাশি তার ভাবমূর্তি বজায় রাখতে পারে। যেহেতু বেশির ভাগ শীর্ষ নেতৃত্ব এনসিসির অংশ হবেন, তাই এটি কার্যকরভাবে সরকার এবং তার বিরোধী দলের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিরোধী দলগুলো সাধারণত অভিযোগ করে যে জাতীয় ইস্যুতে তাদের কণ্ঠস্বর সর্বদা উপেক্ষা করা হয়। এনসিসির মাধ্যমে বিরোধী দলের কথা সিদ্ধান্তে রূপ নিতে পারে। এর ফলে গণতন্ত্র মজবুত হয়ে সরকার ও দেশেরই লাভ হবে।
এনসিসি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবেএনসিসি হবে নিরবচ্ছিন্ন একটি কার্যকর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। সংসদ ভেঙে গেলে বা সরকার পতন হলেও এনসিসি বহাল থাকবে। এতে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও শাসনব্যবস্থা চলমান রাখতে এনসিসি একটি কার্যকর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানরূপে ভূমিকা পালন করতে পারবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিরপেক্ষতার স্বার্থে কোনো রাজনৈতিক দলীয় ব্যক্তি এনসিসিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে না।
শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, শাসনব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য এবং জনগণের আস্থা একটি স্থিতিশীল গণতন্ত্রের চালিকা শক্তি। এটা সত্য যে সরকার নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের দ্বারা পরিচালিত হতে হবে, তবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুষ্ঠু যাত্রার জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যোগ্য, সৎ এবং নির্দলীয় ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হওয়া অত্যাবশ্যকীয়।
দলনিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘ মেয়াদে সব রাজনৈতিক দলের জন্যই সুফল বয়ে আনে। এনসিসি হবে একটি অনন্য সম্মিলিত সংস্থা, যেখানে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ দেশ গঠন এবং শাসনব্যবস্থার জন্য একসঙ্গে কাজ করবে। এটা গণতন্ত্রের বিকাশে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে বলে যৌক্তিকভাবেই আশা করা যায়।
ব্যারিস্টার মঈন ফিরোজী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মতামত লেখকের নিজস্ব