বিসিবিতে ক্রিকেট বাদে সবকিছুই হচ্ছে: তামিম
Published: 30th, May 2025 GMT
নাটকীয়তার পর বিসিবি সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ফারুক আহমেদকে। তাঁর জায়গায় নতুন সভাপতি হিসেবে আরেক সাবেক ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম একরকম চূড়ান্ত। আজ বিকেলে বিসিবিতে সভা ডাকা হয়েছে, সেখানেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মনোনীত পরিচালক হয়ে সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার কথা তাঁর।
এদিকে আজই পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি–টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয়টিতে সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ। এমন সময় পাকিস্তানে ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। বোর্ডে চলমান বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। ক্রিকেটকে ঘিরে সবার আগ্রহ কমছে বলে মনে করেন তামিম।
আরও পড়ুনফারুকের নামে ‘কপি–পেস্ট’ অভিযোগে অনাস্থা আনা যায় তাঁদের বিরুদ্ধেও৫৫ মিনিট আগেতামিম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, এটা হলো ক্রিকেটের বোর্ড একটা, ক্রিকেট বাদে সবকিছু হচ্ছে। কে আসবে, কে যাবে, কে সভাপতি হবে, কে হবে না, কে নির্বাচন করবে, কে করবে না। ঠিক আছে, এগুলো একটা অংশ…আজকে দেখেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে আসছে। আমার কাছে মনে হয় কে সভাপতি হবে, এগুলো আমার বলাতে, না বলাতে কোনো কিছু যায় আসে না। আমি একটাই অনুরোধ করব, যাঁরা আছেন বা যাঁরা আসবেন, ক্রিকেটটা নিয়ে একটু ভাবেন। কারণ, ক্রিকেট তার আকর্ষণ হারাচ্ছে।’
কে সভাপতি হবে, কাকে সভাপতি বানানো হচ্ছে, এগুলো আমার কাছে মনে হচ্ছে অগুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিয়ে আমরা বেশি সিরিয়াস। ক্রিকেটে উন্নতি কীভাবে হবে, কীভাবে আমরা এগিয়ে যাব, এটা নিয়ে আমাদের কারও কোনো ভাবনা নাই।তামিম ইকবালএনএসসির পরিচালক হয়ে বোর্ডে এসেছিলেন ফারুক। তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হলেও ফারুক তা না করায় শেষ পর্যন্ত সরিয়ে দেওয়া হয়। এখন এনএসসির মনোনয়নেই সভাপতি হওয়ার দৌড়ে আছেন আমিনুল। এসব ঘটনা বিদেশে বাংলাদেশ ক্রিকেটের খারাপ ভাবমূর্তি তৈরি করতে পারে কি না, এ নিয়ে জানতে চাওয়া হয় তামিমের কাছে। তাঁর উত্তর, ‘দেখেন, আমার মনে হয় না যে দেশের বাইরে কে কী ভাবছে, দেশের ভেতরে কে কী ভাবছে, তা চিন্তা করা উচিত।’
আরও পড়ুনকাউন্সিলর অনুমোদন পেয়েছেন আমিনুল, বিকেলে বোর্ড সভা২ ঘণ্টা আগেমাঠের ক্রিকেটেও ভালো করতে পারছে না বাংলাদেশ। আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজ হারের পর পাকিস্তানেও প্রথম ম্যাচে হেরেছে তারা। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে ধারাবাহিকতাও দেখাতে পারছে না। তামিম মনে করেন, শুধু মাঠে নয়, পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেটই ভুগছে।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খেলার নামে আদম পাচার ঠেকাতে তৎপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ
বিদেশে খেলোয়াড় পাঠানোর নামে মানব পাচারের ঝুঁকি রোধ এবং যোগ্য খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত করতে নতুন নিয়ম চালু করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ৯ অক্টোবর এনএসসি এক চিঠিতে ফেডারেশনগুলোকে জানিয়েছে, এখন থেকে বিদেশে ক্রীড়া দল পাঠানোর আগে ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে ফ্লাইটের কমপক্ষে ১০ দিন আগে জিওর (সরকারি আদেশ) জন্য প্রস্তাব পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচিত খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও পারফরম্যান্স–সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্রও এনএসসিকে দিতে হবে।
অভিযোগ আছে, কিছু ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন অনেক বছর ধরেই দলের সঙ্গে ভুয়া খেলোয়াড়-কর্মকর্তা পাঠিয়ে আদম পাচার করে আসছে। দুই একটা ঘটনা সামনে এলেও এসবের বেশির ভাগই থেকে যায় আড়ালে। ছোট খেলাগুলো থেকেই এ ধরনের অভিযোগ বেশি আসে। এনএসসির একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত এ ধরনের অপকর্ম ঠেকাতেই বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ফ্লাইটের অন্তত ১০ দিন আগে জিওর প্রস্তাব পাঠানোর নিয়ম করা হয়েছে। এনএসসির পরিচালক (ক্রীড়া) আমিনুল এহসান সরাসরি তা না বললেও তাঁর কথায়ও সে আভাস আছে, ‘আমি বলব না শুধু আদম পাচার রোধ করতে এই নিয়ম করেছি। তবে কোথাও কোথাও এসব খেলার নামে মানব পাচারের প্রশ্ন চলে আসে।’
অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।ফারহাদ জেসমিন, সাবেক অ্যাথলেট ও বিএও অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যানএনএসসির কাছে ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন এত দিন জিওর জন্য খেলোয়াড়দের নামই শুধু পাঠাত। যাঁর নাম দেওয়া হতো, তিনি আসলেই খেলোয়াড় কি না বা খেলোয়াড় হলে তাঁর যোগ্যতা কী বা যোগ্য কাউকে বাদ দিয়ে অযোগ্য কাউকে নেওয়া হচ্ছে কি না, এসব যাচাই–বাছাই করা হতো না। এনএসসি তাই জানত না কিসের ভিত্তিতে একজন খেলোয়াড়কে দলে নির্বাচিত করা হয়েছে। নতুন নিয়মে এনএসসিকে এসব দিতে হবে।
জিওর জন্য আবেদনকারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে সময় লাগে বলে ১০ দিন আগে তালিকা চাওয়ার যুক্তি আছে। কিন্তু পারফরম্যান্স আর ফিটনেসের তথ্যপ্রমাণও পাঠানোর নিয়মটা একটু অভিনবই, যা নিয়ে অবশ্যই নানা রকম প্রশ্ন তোলা যায়। তবে জিওর জন্য ফ্লাইটের ১০ দিন আগে নাম চাওয়ার নিয়মটাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক অ্যাথলেট ফারহাদ জেসমিন লিটি বলেছেন, ‘অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।’
আরও পড়ুনবিশ্বকাপের আগে সৌদি লিগে খেলতে চেয়েছিলেন মেসি, সৌদি সরকারের ‘না’১১ ঘণ্টা আগেআদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।ক্রীড়াঙ্গনে স্বজনপ্রীতি ঠেকাতেও এ নিয়ম ভূমিকা রাখবে বলে ফারহাদ জেসমিনের আশা, ‘অনেক ফেডারেশন অনেক সময় যোগ্যতার বিচার না করে নিজেদের পছন্দের খেলোয়াড় নিয়ে যায়। দেখে মনে হয়, বিদেশভ্রমণই মুখ্য, পারফরম্যান্স মুখ্য নয়।’ বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ। কারণ, এনএসসির জানার অধিকার আছে, বিদেশে টুর্নামেন্টে আমরা কাদের নিয়ে যাচ্ছি।’ সম্প্রতি হকি তারকা রাসেল মাহমুদকে বয়সের অজুহাতে বাদ দেয় হকি ফেডারেশন। এ নিয়ে সমালোচনা হলে এনএসসিকে বিষয়টি তদন্তও করতে হয়।
এনএসসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেট-ফুটবলসহ সব খেলাতেই বিদেশে দল পাঠানোর জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। কিন্তু আদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।
আরও পড়ুনআগে চা পরে লাঞ্চ—বদলে যাচ্ছে ক্রিকেটের শতবর্ষ পুরোনো এক রীতি১৫ ঘণ্টা আগেএনএসসির পরিচালক আমিনুল এহসান অবশ্য তা মনে করেন না, ‘প্রায় প্রতিদিনই এনএসসির কাছে অনেক খেলোয়াড় অভিযোগ করেন, কোনো না কোনো কর্মকর্তার অপছন্দের কারণে নাকি তিনি দল থেকে বাদ পড়েছেন। এ কারণেই খেলোয়াড় নির্বাচনের তথ্যগুলো এনএসসির জানা থাকলে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে একটা উত্তর দেওয়া যায়। এটা ফেডারেশনের কাজে হস্তক্ষেপ নয়। স্বচ্ছতার স্বার্থে এনএসসি তা জানতে চাইতে পারে।’