লেবাননে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় হিজবুল্লাহ কমান্ডার নিহত
Published: 1st, June 2025 GMT
লেবাননে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় হিজবুল্লাহর এক কমান্ডার নিহত হয়েছেন। দক্ষিণ লেবাননের গভীরে দেইর আল-জাহরানি শহরে শনিবার (৩১ সেপ্টেম্বর) এই হামলা হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। খবর চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার।
ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নিহত ওই কমান্ডারের নাম মোহাম্মদ আলী জাম্মুল।
লেবাননের জাতীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, শনিবার ভোরে একটি ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় মোহাম্মদ আলী জাম্মুল নিহত হোন।
আরো পড়ুন:
মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে লেবানন প্রেসিডেন্টের বৈঠক
এবার লেবানন থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৩ বছর বয়সী জাম্মুল অন্যান্য দিনের মতো শনিবার ভোরে নিজ শহরের মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য যাচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময় ড্রোনটি তার গাড়িতে হামলা চালায়। এতে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি নিহত হন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে দাবি করেছে, জাম্মুল হিজবুল্লাহর রকেট ইউনিটের স্থানীয় কমান্ডার ছিলেন। তিনি এর আগে ইসরায়েলি নাগরিক ও আইডিএফ সৈন্যদের লক্ষ্য করে রকেট হামলা এবং সম্প্রতি এলাকায় হিজবুল্লাহর অবকাঠামো পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় জড়িত ছিলেন।
হিজবুল্লাহ এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করে একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে, জাম্মুল ‘জেরুজালেমের পথে শহিদ হয়েছেন।’
এদিকে, লেবাননের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ লেবাননে ‘প্রকৌশলিক জরিপ অভিযান’ এবং ইসরায়েলি চুক্তি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
শনিবার এক বিবৃতিতে লেবাননের সামরিক বাহিনী বলেছে, “শুক্রবার একটি অভিযানের সময় তাদের বিশেষায়িত সামরিক ইউনিট দক্ষিণ-পূর্ব লেবাননের ব্লিদা-মারজায়ুন গ্রামের কাছে বির চৌইব এলাকায় একটি গোপন ইসরায়েলি নজরদারি ডিভাইস আবিষ্কার করেছে এবং সেটি ধ্বংস করেছে। এছাড়াও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মাটি দিয়ে তৈরি ১৩টি বাঁধও অপসারণ করা হয়েছে।”
২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যা গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর লেবানন সীমান্তে চলমান সংঘর্ষ বন্ধ করে দেয়। তবে অস্ত্রবিরতির মাঝেও ইসরায়েল মাঝে মাঝেই লেবাননে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এ ধরনের ঘটনা অস্ত্রবিরতির ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল ব নন ইসর য় ল কম ন ড র ল ব নন র ইসর য় ল ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে