কোরবানির ঈদ ঘিরে সারা দেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের কথা জানিয়েছে র‌্যাব। কোরবানির পশুর হাট কিংবা বাসা বাড়িতে যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা রুখতে র‌্যাব সচেষ্ট রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী। 

সোমবার (৩ মে) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।  

এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, “কোরবানির হাটে পশু ক্রয়-বিক্রয়ে প্রচুর আর্থিক লেনদেন হয়। এক্ষেত্রে অসাধু চক্রের মাধ্যমে জাল টাকার ছড়াছড়ির আশঙ্কা থাকে। জাল টাকা তৈরি ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত চক্রের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। হাটগুলোতে জাল টাকা শনাক্তে মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।”

“কোরবানির হাট কেন্দ্রিক ও মার্কেটে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, প্রতারক চক্র, দালাল, মলম পার্টি এবং অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা রুখতে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “হাটে র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অনিয়ম পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। পশুর হাটগুলোর হাসিল ঘরে সিটি কর্পোরেশন বা স্থানীয় সরকার থেকে নির্ধারিত হাসিল তালিকা আকারে প্রদর্শিত থাকতে হবে। নির্ধারিত হারের বেশি হাসিল নেওয়া প্রতিরোধে র‌্যাবের নজরদারি থাকবে।”

এক হাটের গরু জোর করে অন্য হাটে নামানোসহ পশুর হাট কেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরনের চাঁদাবাজি ঠেকাতে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

এ বছর অনলাইনে প্রচুর কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রে অনিয়ম ও প্রতারণা প্রতিরোধে র‌্যাব সাইবার মনিটরিং সেল সার্বক্ষণিক ভার্চুয়াল জগতে নজরদারি করছে। অনলাইনে পশু কেনা বেচার লেনদেনের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বনের জন্য র‌্যাব ফোর্সেস পরামর্শ দিচ্ছে। এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ থাকলে র‌্যাব কন্ট্রোল রুমে জানাতে বলা হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “কোরবানির পশুর চামড়ার বাজার ধস নামাতে মুনাফালোভী সিন্ডিকেটের কারসাজির বিরুদ্ধে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি  রয়েছে। তাদের এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

হাটে হেনস্থার শিকার হলে র‌্যাবকে জানানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কোরবানির পশুর হাটে আগত নারীদে উত্যক্ত, ইভটিজিং হয়রানি রোধে মোবাইলকোর্টসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেউ কোনো ধরনের হেনস্থার শিকার হলে অবশ্যই র‌্যাব কন্ট্রোল রুম ও র‌্যাব টহল দলকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।”

ঢাকা/এমআর/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ নজরদ র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ব্যাংক খুলেছে, নেই নগদ অর্থ

ইসরায়েলের আগ্রাসনের শিকার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির ফলে কিছু কিছু ব্যাংক খুলেছে। তবে নগদ অর্থের ঘাটতির কারণে বড় সমস্যায় পড়েছেন গাজাবাসী। নগদ অর্থসংকটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

দুই বছর ধরে গাজায় নির্বিচার হামলায় ঘরবাড়ি, স্কুল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো অনেক ব্যাংক ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ছয় দিন পর ১৬ অক্টোবর থেকে কিছু ব্যাংক খোলা শুরু করে। এসব ব্যাংক থেকে অর্থ তুলতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভিড় করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর তাঁদের বেশির ভাগকে হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরও গাজায় ইসরায়েলের সেনাদের হামলায় দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৫২৭। যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ত্রাণসহ যেকোনো কিছু ঢুকছে ইসরায়েলের নজরদারিতেই।

নগদ অর্থের জন্য মধ্য গাজার নুসেইরাতে ব্যাংক অব প্যালেস্টাইনের বাইরে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওয়ায়েল আবু ফারেস (৬১)। তিনি বলেন, ব্যাংকে কোনো অর্থ নেই। নগদ অর্থের সঞ্চালন নেই। হতাশার সুরে ছয় সন্তানের এই বাবা বলেন, ব্যাংকে এসে কাগজপত্রের লেনদেন করে চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

গাজায় খাবার কেনা বা বিভিন্ন পরিষেবার বিল দেওয়ার মতো প্রায় সব দৈনন্দিন লেনদেন নগদ অর্থে করতে হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরু হওয়ার পর গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ইসরায়েলি সেনারা। ফলে সেখানে নিত্যপণ্য ও অন্যান্য সরঞ্জামের মতো নগদ অর্থও ঢুকতে পারছে না। যদিও যুদ্ধবিরতির পর এখন কিছু কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকছে।

গাজাভিত্তিক অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ আবু জাইয়্যাব বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ব্যাংক খোলা আছে, শীতাতপ যন্ত্রও চালু আছে। কিন্তু ইলেকট্রনিক লেনদেন ছাড়া মূলত আর কিছুই হচ্ছে না। কারণ, কোনো আমানত নেই। তাই নগদ অর্থ তোলা সম্ভব হচ্ছে না।

আবু জাইয়্যাব বলেন, ব্যাংক যেহেতু নগদ অর্থ দিতে পারছে না, তাই বেতন ক্যাশ করতে মানুষজন কিছু লোভী ব্যবসায়ীর কাছে যাচ্ছেন। তাঁদের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি অর্থের বিনিময়ে বেতন ক্যাশ করতে হচ্ছে।

‘আমরা আর পারছি না’

গাজায় একসময় ব্যাংক লেনদেন এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যেত জানিয়ে সাত সন্তানের মা ইমান আল-জাবারি বলেন, ‘এখন ব্যাংকে লেনদেন করতে আপনাকে দুই বা তিন দিন যেতে হয়। একাধিকবার যাতায়াত করতে হয়। পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এত কিছু করে আপনি ৪০০-৫০০ শেকেলের (১২৩-১৫৩ ডলার) মতো তুলতে পারবেন। বর্তমানে অতি উচ্চমূল্যের বাজারে এই অর্থ দিয়ে কী কেনা যায় বলেন? আমরা আর পারছি না।’

নগদ অর্থের ঘাটতি অধিকাংশ গাজাবাসীর জন্য সমস্যা সৃষ্টি করলেও কিছু মানুষ এই সংকটকে জীবিকার উপায় হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। মানাল আল-সাইদির মতো কেউ কেউ ছেঁড়া-ফাটা ব্যাংক নোট জোড়াতালি দেওয়ার কাজ করছেন। এতে তাঁদের রুটি-রুজি জুটছে। ৪০ বছর বয়সী এই নারী বলেন, ‘কাজ করে আমি দৈনিক ২০-৩০ শেকেল (৬-৯ ডলার) আয় করতে পারি। যা আয় হয়, তা দিয়ে আমি একটি রুটি, অল্প শিম ও ভাজাপোড়াসহ টুকটাক কিছু কিনতে পারি।’

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় সবজির দাম আকাশছোঁয়া। মানাল আল-সাইদি বলেন, ‘সবজি বা এ জাতীয় অন্য কিছু কেনার মতো অর্থ আমি আয় করতে পানি না। আমার যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে দিন চলে যায়।’

নগদ অর্থসংকটে জর্জরিত গাজার অনেক মানুষকে ডিম বা চিনির মতো প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্যও ব্যাংক অ্যাপের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক লেনদেনে ভরসা করতে হচ্ছে। এই সংকটে বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম আদায় করছেন।

নগদ অর্থ কখন ব্যাংকে আসবে ঠিক নেই

গাজায় বর্তমানে ত্রাণ সরবরাহ নজরদারি করছে ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর ‘কো-অর্ডিনেটর অব গভর্নমেন্ট অ্যাকটিভিটিজ ইন দ্য টেরিটরিজ (সিওজিএটি)’ নামের একটি শাখা। কখন বা কীভাবে নগদ অর্থ গাজায় প্রবেশের অনুমোদন দেওয়া হবে, তা জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

নগদ অর্থের ঘাটতি গাজাবাসীর সংকটকে নানা দিক থেকে আরও নাজুক করে তুলেছে। তাঁবু, খাবার ও ওষুধ কিনতে অনেকে এরই মধ্যে সব সঞ্চয় শেষ করে ফেলেছেন ও হাতের কাছে যে সম্বল ছিল, তা-ও বিক্রি করে দিয়েছেন। কিছু মানুষ টিকে থাকার জন্য বিনিময় পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করছেন।

ফিলিস্তিনি ব্যবসায়ী সামির নামরাউতি (৫৩) জানান, এমন কিছু টাকা হাতে আসছে, যা অতিব্যবহারের ফলে চেনার উপায় নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এসব টাকা নিচ্ছেন। নামরাউতির ভাষায়, ‘আমার কাছে নোটের সিরিয়াল নম্বর গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ সিরিয়াল নম্বর আছে, ততক্ষণ আমি নোটকে টাকা হিসেবে বিবেচনা করি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ব্যাংক খুলেছে, নেই নগদ অর্থ