আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পর গ্রামগঞ্জের কর্মী-সমর্থকেরা কী ভাবছেন
Published: 6th, June 2025 GMT
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর গ্রামগঞ্জে কর্মী-সমর্থকেরা কী ভাবছেন, তা খতিয়ে দেখা এ লেখার মূল লক্ষ্য। দৈবচয়ন পদ্ধতিতে রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া, রংপুর, বাগেরহাট, কক্সবাজার, সিলেট, বরিশাল ও শেরপুর জেলার আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ভাবনা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে।
কর্মী-সমর্থক ছাড়াও শিক্ষক, সাংবাদিক ও এনজিওকর্মীদের কাছ থেকেও (টেলিফোন ইন্টারভিউ) তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তথ্যদাতারা তাঁদের নাম প্রকাশে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তথ্য সংগ্রহকালে তথ্যদাতাদের ভেতর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বিশেষ দক্ষতা লক্ষ করা গেছে। পরিস্থিতি বিশ্লেষণে তথ্যদাতাদের মধ্যে রূপকাশ্রয়ী হওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। যেমন বাগেরহাটের তথ্যদাতা উল্লেখ করেছেন, আওয়ামী লীগের ঘর পুড়ুক বা বিএনপির ঘর পুড়ুক তার তাপ তো একই রকম। এ তাপ থেকে নির্বিবাদী প্রতিবেশীও মুক্ত থাকতে পারেন না। এ রূপকের ভেতর আজকের বাস্তবতায় রিকনসিলিয়েশন বা পুনর্মিলনের মূল চিন্তা লুকিয়ে রয়েছে।
অনলাইন দুনিয়ার সম্প্রসারণের ফলে মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এক বিশ্লেষণাত্মক জনমানসের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে, যাঁদের বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সিলেটের তথ্যদাতার প্রশ্ন হলো, শেখ হাসিনার পতনের পর দেশে কি দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ হয়েছে? একজনের বিবেচনায় আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট হলেও আরেকজনের আওয়ামী লীগকে পছন্দ করার অধিকার কি নিষিদ্ধ? বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিকাশে এ বিশেষণাত্মক জনমানস আস্থার একটি বিশেষ জায়গা।
মাঠপর্যায় থেকে পাওয়া তথ্য, পর্যবেক্ষণ ও মতামত কয়েকটি বর্গে সুনির্দিষ্ট করা হলো:
ভাবনার একরূপ: অনুশোচনা, ভুলভ্রান্তি ও বিচার প্রসঙ্গপাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা এক অভিন্ন অনুভবের ভেতর আছেন। একই ইকো চেম্বারে বাস করছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মানসিক ভূগোল এক ধরনের। আমেরিকান তাত্ত্বিক রেমন্ড ইউলিয়াম ১৯৫০-এর দশকে সাংস্কৃতিক জটিলতা এবং যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যায় ‘স্ট্রাকচার অব ফিলিং’ ধারণা তুলে ধরেন। রেমন্ড ইউলিয়ামের এ ধারণাটির আলোকে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের ফিলিং স্ট্রাকচারের স্বরূপটি খুঁজে দেখার সুযোগ রয়েছে। এ অভিন্ন ভাবকাঠামো আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অস্তিত্বের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
হুমকি-ধমকি, দমন-পীড়ন-হয়রানি, ক্ষোভ আর বঞ্চিত হওয়ার অনুভব নিয়ে তাঁরা বেশ অটুট আছেন। কর্মী-সমর্থকদের দুর্দান্ত প্রতাপে ছেদ পড়েছে, কণ্ঠস্বর নিচু হয়েছে, মাথা গুটিয়ে চলতে হচ্ছে; কিন্তু রাজনৈতিক অবস্থানে কোনো পরিবর্তন নেই। যেমন ছিলেন তেমনই আছেন।
রাজনৈতিক চাপ আর প্রান্তিকীকরণ কুরে কুরে খেলেও মানসিকভাবে তাঁরা অক্ষত। কোনো অনুশোচনা নেই, দলের নেতা-কর্মীদের ওপর করা মামলা-মোকদ্দমার প্রতি কোনো আস্থা নেই। তাঁদের বিবেচনায় সবই রাজনৈতিক হয়রানি! আওয়ামী লীগের ভুলভ্রান্তি তাঁরা স্বীকার করতে চান না।
তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে পাবলিক পরিসরে চলাফেরা করছেন। দলের প্রতি আনুগত্য কালিমালিপ্ত হয়নি। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততায় গড়ে ওঠা সম্পর্ক কেবল রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ নেই। সামাজিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক সুরক্ষা গণ্ডি পেরিয়ে গেছে। তবে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের সম্পর্ক ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, তবে অন্য অর্থে এখনো বেশ দৃঢ়ই আছে। অর্থাৎ বিচ্ছিন্নতার ভেতর এক অদেখা ঐক্য লক্ষ করা যাচ্ছে।
একজন তথ্যদাতার অভিমত, মচকিয়েছি কিন্তু ভাঙিনি। দমন-পীড়ন আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে পারবে না। জয়পুরহাটের একজন আওয়ামী লীগ সমর্থকের প্রশ্ন, ভাইয়ের জন্য কজন ভাই রক্ত দিয়েছে, কিন্তু আদর্শের জন্য দুনিয়ায় কত মানুষ রক্ত ঝরিয়েছে।
তাঁর অভিমত আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়েছেন, কর্মী-সমর্থকেরা পালায়নি। আওয়ামী লীগ নেতা নয়, কর্মী-সমর্থকনির্ভর রাজনৈতিক দল। অনেক নেতা সুবিধাভোগী, সুযোগ–সন্ধানী।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলা সদরের এক শিক্ষকের অভিমত, কর্মী-সমর্থকেরা দল করতে করতে এক অচ্ছেদ্য জালের ভেতর ঢুকে পড়ছেন। আর তা থেকে বের হওয়া সহজ নয়। কর্মী-সমর্থকদের রাজনৈতিক অভ্যস্ততা এ বিশেষ আচরণে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের এ অনুভব–কাঠামো এক স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সত্তা।
এ অনুভব–কাঠামোর ওপর আওয়ামী লীগের দুঃশাসন ও ফ্যাসিস্ট ন্যারেটিভ বিশেষ কোনো প্রভাবে নেই। এ মনোভঙ্গি নারকোটাইজিং ডিসফাংশন তত্ত্বের মতো, যেখানে একজন ধূমপায়ী জানেন ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তারপরও তিনি ধূমপান করেন। কর্মী-সমর্থকেরা আওয়ামী লীগের মন্দ কাজ সম্পর্কে যে ওয়াকিবহাল নন তা নয়; কিন্তু তাঁরা এগুলো মেনেই আওয়ামী লীগের ছায়ার নিচেই থাকবেন। আদর্শিক এ ফ্রেম পরিবর্তন কেবল নতুন ন্যারেটিভ দিয়ে সম্ভব নয়। সেখানে কীভাবে কাজ করা যায় তা বিদ্যমান ও নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জই বলতে হবে।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণে প্রতিক্রিয়াগত ১০ মে ২০২৫ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। একজন আওয়ামী লীগ কর্মী পেশায় শিক্ষক রাজশাহী থেকে জানালেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার কোনো গুরুত্ব তাঁর কাছে নেই। এগুলো তিনি পাত্তা দিচ্ছেন না, আমলে নিচ্ছেন না। আওয়ামী লীগকে উপড়ে ফেলা যাবে না। এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা অনেকবার হয়েছি। তিনি আরও জানান, নিষিদ্ধ করে কোনো রাজনৈতিক দলের মৃত্যু ঘটানো যায় না। একটি রাজনৈতিক আদর্শের মৃত্যু ঘটে কেবল আরেকটি উন্নত রাজনৈতিক আদর্শের কাছে।
আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি সম্পর্কের প্রকরণগত দিকআওয়ামী লীগ কর্ম-সমর্থকেরা মাঠপর্যায়ে নিশ্চুপ। তাঁরা এখনই মামলা-মোকদ্দমায় ঝুঁকি নিতে চান না। নীরবে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। কোথাও কোথাও মামলা বা হামলার শিকার কর্মী-সমর্থকেরা নেতাদের কাছ থেকে আর্থিক ও আইনি সহায়তা পাচ্ছেন।
মাঠপর্যায়ে কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির ন্যূনতম যোগাযোগ হচ্ছে এমন অভিমত পাওয়া গেছে। যেমন রাজশাহী থেকে প্রাপ্ত তথ্য দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের ব্যাপারে বিএনপি কিছুটা নমনীয়। কিন্তু অন্য জেলায় এ মতামতের সপক্ষে তথ্য মেলেনি।
তথ্যদাতাদের অভিমত, মাঠপর্যায়ে বিএনপি মূলত দলীয় কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে। তারা হাট-বাজার-ঘাট, ঘের, ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্রসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে পদ-পদবি দখলে নিতে ব্যস্ত। উত্তরদাতাদের অভিমত ৫ আগস্টের পর বিএনপির প্রতি মানুষের একধরনের সহানুভূতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মাঠপর্যায়ে তাদের নানামুখী নেতিবাচক কার্যক্রমে জন–অসন্তুষ্টি বাড়ছে।
তথ্যদাতারা মনে করেন, জামায়াত ইসলামী এককভাবে বেশ পরিকল্পিত উপায়ে মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের দাওয়াতি কার্যক্রম অনেক বেড়েছে। জামায়াতের সঙ্গে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো সমঝোতামূলক সম্পর্ক মাঠঘাটে দেখা যাচ্ছে না।
বাগেরহাট ও সিলেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য দেখা গেছে, ৫ আগস্টের পরপর দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের অফিস, ঘরবাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট ও ভাঙচুরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকলেও তারা খুব দ্রুত এসব ‘অপকর্ম’ (তথ্যদাতাদের ভাষা) থেকে সরে এসেছে।
জামায়াত আদর্শভিত্তিক প্রতীকগুলো সরাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। তথ্যদাতাদের অভিমত, জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনাকেন্দ্রিক প্রতীকগুলো সরিয়ে ফেলতে তৎপর হয়েছে।
একাধিক তথ্যদাতা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি ও বিএনপির নির্বিচার আচরণে গ্রামগঞ্জে মানুষজনের কাছে জামায়াতের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। তথ্যদাতারা জানান, জামায়াত ক্ষমতায় এলে বা ক্ষমতার অংশীদার হলে ভবিষ্যতে কী হবে সেটা জনগণ ভাবছে না, ভাবছে তাদের নিরাপত্তা ও সামাজিক স্বস্তির কথা।
তথ্যদাতাদের মতে, গ্রামগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তেমন কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না।
সেনাবাহিনী সম্পর্কে অনেকে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর প্রতি তাঁদের আস্থা নেই।
আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থক ও নৈঃশব্দ্যের ক্রমবিকাশ১৯৭৪ সালে জার্মান রাজনীতিবিজ্ঞানী এলিজাবেথ নলি নিউম্যান ‘স্পাইরাল অব সাইলেন্স’ অর্থাৎ নৈঃশব্দ্যের ক্রমবিকাশ বলে একটি মডেল আবিষ্কার করেন। এ মডেলে তিনি উল্লেখ করেন, কোনো ব্যক্তি যদি মনে করেন মতামত প্রকাশের কারণে তিনি সংখ্যালঘিষ্ঠ বা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারেন তাহলে তিনি মতামত প্রদানে নিশ্চুপ হয়ে পড়তে পারেন। অন্যদিকে ব্যক্তি যদি মনে করেন, তাঁর মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে তাহলে তিনি মতামত ব্যক্ত করতে আগ্রহী হতে পারেন।
আওয়ামী লীগের কর্ম-সমর্থকেরা বুঝেছেন তাঁদের মতামত জনপরিসরে এখনো প্রত্যাশিত নয়। সম্প্রতি আইনগতভাবে তাঁদের মতামত ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি এ নিষিদ্ধের পরিধি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। নিষিদ্ধকরণের আগেই আওয়ামী লীগের অনুগত বুদ্ধিজীবী যাঁরা নানাভাবে সুবিধা নিয়েছিলেন, তাঁরাও নিশ্চুপ হয়ে পড়েছেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিরাপদ আলোচনায় তাঁরা প্রকাশ-উন্মুক্ত হয়ে ওঠেন। আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী-সমর্থক, বুদ্ধিজীবীদের ভেতর গভীর নৈঃশব্দ্য বিরাজমান।
নির্বাচন আওয়ামী লীগ কর্মী, সমর্থকদের ভাবনাআওয়ামী লীগের কর্ম-সমর্থকেরা বিশ্বাস করেন, আবারও আওয়ামী লীগের সুদিন আসবে, আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়াকে তাঁরা রাজনৈতিক হয়রানি হিসেবে দেখছেন। আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে যে অচ্ছেদ্য মনোভঙ্গি গড়ে উঠছে তার মধ্যে চুল পরিমাণ ফাটল খুঁজে পাওয়াও কঠিন।
কর্মী-সমর্থকেরা রাজনৈতিক রূপান্তরের আশায় আছেন। তাঁদের বিশ্বাস, রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে নিষিদ্ধকরণ প্রত্যাহার হবে, আওয়ামী লীগের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে। কর্মী-সমর্থকেরা বিশ্বাস করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীন ন্যূনতম নিরপেক্ষতা বজায় রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ কমপক্ষে ৬০-৭০টি আসন পাবে। আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে অযোগ্য না হয় তাহলে এ আসনসংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকেরা আরও মনে করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচন করতে বাধ্য হয় সেটাও দলের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। কারণ, এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পরিচ্ছন্ন ও নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে। আর তা হলে আওয়ামী লীগের অপবাদগুলো মোছা সহজ হবে।
খান মো.
রবিউল আলম যোগাযোগ পেশাজীবী ও শিক্ষক
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমর থকদ র ন ষ দ ধ কর ল গ র কর ম র র জন ত ক ম ঠপর য য় গ র মগঞ জ ল গ কর ম পর স থ ত র আওয় ম ন আওয় ম ব এনপ র র ভ তর র জন য পর য য় প রক শ মত মত আদর শ ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।
খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।
আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।
আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।
আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে