কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা এখনো দেশে আয় পাঠাচ্ছেন। চলতি মাসের প্রথম ৩ দিনে দেশে এসেছে ৬০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ৭ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। এর ফলে চলতি অর্থবছরের প্রায় ১১ মাসে (জুলাই–মে) প্রবাসী আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় এসেছিল ২১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ৬ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার বেশি প্রবাসী আয় এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ এখন ২০ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। এর আগে গত মে মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২৯৭ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। গত মার্চে; অর্থাৎ রোজার ঈদের সময় প্রবাসীরা ৩২৯ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়েছিলেন। যদিও পরের মাসে; অর্থাৎ এপ্রিলে তা কমে নেমে আসে ২৭৫ কোটি ডলারে। তবে সার্বিকভাবে প্রবাসী আয়ের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে।

ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রবাসী আয়ের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং ডলারের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে। অবৈধ পথে অর্থ পাঠানোর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এবং বৈধ পথে প্রবাসী আয় প্রেরণকে উৎসাহিত করতে নানা প্রণোদনা প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে। সাধারণত ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো বড় ধর্মীয় উৎসব সামনে রেখেও প্রবাসীরা বেশি পরিমাণে অর্থ দেশে পাঠিয়ে থাকেন। দেশে বসবাসকারী পরিবারের সদস্যরা যাতে আনন্দে ঈদ উদ্‌যাপন করতে পারেন, সে জন্য এই সময়ে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠান প্রবাসীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ভালো পরিমাণে প্রবাসী আয় আসবে বলে ব্যাংকাররা আশা করছেন।

প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংক খাতে ডলারের যে সংকট চলছিল, তা অনেকটা কেটে যাচ্ছে বলে মনে করেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ডলারের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা ছিল, তা-ও কিছুটা কমে এসেছে। ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যেই প্রবাসী আয় কিনছে। তবে খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা দামে।

দেশে গত বছরের আগস্টে চাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর টানা ৭ মাস ধরে প্রতি মাসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁরা পাঠান প্রায় ২৫৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এর আগে জানুয়ারিতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় ৩ শতাংশ বেশি আসে।

প্রবাসী আয় হলো দেশে মার্কিন ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। কারণ, এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না বা কোনো দায় পরিশোধ করার দরকার পড়ে না। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার এলেও তার জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আবার বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয়। এ ছাড়া বিদেশি ঋণ পরিশোধেও ডলারের প্রয়োজন হয়। সার্বিকভাবে প্রবাসী আয় বাড়লে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের রিজার্ভ বা মজুত দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র একই সময় প রব স র প রব দ ধ পর ম ণ র প রব সময় র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকা
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন