এবারের ঈদে টানা ১০ দিনের সরকারি ছুটি। বেশ কিছু দেশের ভিসা জটিলতায় বিদেশভ্রমণ সীমিত হয়ে আছে কয়েকটি দেশে। তবু লম্বা ছুটিতে প্রত্যাশিত বুকিং পাচ্ছে না দেশের বিভিন্ন হোটেল-রিসোর্ট। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে তাই ছাড়ের ছড়াছড়ি এবার। রুমের ভাড়ায় ৫৫ শতাংশ ছাড়ের পাশাপাশি দুই দিন থাকলে তৃতীয় দিন ফ্রি থাকার সুযোগও দিচ্ছে কেউ কেউ।

কয়েক বছর ধরেই বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। লম্বা ছুটির কারণে বিদেশে বেড়ানোর ঝোঁকটা এবারও বেশি। প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভিসা বন্ধ অনেক দিন ধরে। আরব আমিরাতের ভিসাও বন্ধ। জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার ভিসা পেতে জটিলতা বেড়েছে সম্প্রতি। এর ফলে আশপাশের চারটি দেশে বেড়ানোর ঝোঁক বেড়েছে। এগুলো হচ্ছে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভুটান।

বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব), অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সিজ অব বাংলাদেশ (আটাব), প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, কক্সবাজার কলাতলী হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতি ও একাধিক ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।

টোয়াবের সদস্যরা বলছেন, বিদেশে যেতে নানা বাধার কারণেই দেশের ভেতরে এবার আগ্রহ দেখাচ্ছেন পর্যটকেরা। ঈদে লম্বা ছুটির প্রথম তিন দিন চলে যাবে ঈদ উৎসব পালন করতে। মূলত ঈদের পরদিন থেকে বেড়াতে যাওয়া শুরু করবেন পর্যটকেরা। এবারের বৃষ্টিমুখর আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় ছাড় দিয়ে পর্যটক আকৃষ্ট করতে চাইছে হোটেল-রিসোর্টগুলো।

টোয়াবের সাবেক সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশে যেতে ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। পর্যটনের সবচেয়ে বড় গন্তব্য ভারত পুরোপুরি বন্ধ। থাইল্যান্ড ভিসা দিতে আগের চেয়ে দ্বিগুণ সময় নিচ্ছে। অনেকে ভিসা পাচ্ছেন না। তাই আগ্রহটা দেশের ভেতরেই বেশি দেখা যাচ্ছে।

দেশের মধ্যে বেড়ানোর শীর্ষে আছে সমুদ্র শহর কক্সবাজার। এবারও সবচেয়ে বেশি পর্যটককে সেবা দিতে তৈরি হয়েছে এখানকার হোটেল-রিসোর্ট। বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেটে আগ্রহ কমেছে। পাহাড়ধসের ঝুঁকি এড়াতে বান্দরবানের লামায় সম্প্রতি ৬০টি রিসোর্ট সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। সুনামগঞ্জের হাওর ও সুন্দরবনে কিছুটা ঝোঁক আছে পর্যটকদের। এর বাইরে মৌলভীবাজার, গাজীপুরের রিসোর্টগুলোতেও ছাড় দিয়ে পর্যটক আকৃষ্ট করার চেষ্টা চলছে। 

পরিবার নিয়ে কেনিয়ায় বেড়াতে যাচ্ছেন ফারজানা নীলা। তিনি বলেন, ছুটি পেলেই দেশের বাইরে কোথাও বেড়াতে ইচ্ছে করে। উড়োজাহাজের টিকিটের দামের কথা চিন্তা করে সব সময় যাওয়া হয় না। এবার লম্বা ছুটি থাকায় জমানো টাকা খরচ করে আফ্রিকার দেশটিতে যাচ্ছেন। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঈদুল আজহায় বেড়ানোর প্রবণতা একটু কম থাকে। এ ছাড়া জুনে বর্ষার সময় বলে অনেকে বেড়াতে যেতে চান না। এবার তো আগাম বর্ষা শুরু হয়েছে। দেশের পর্যটন এলাকায় অধিকাংশ হোটেল, রিসোর্ট ফাঁকা থাকতে পারে। বিদেশে আগের চেয়ে আগ্রহ কিছুটা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল-রিসোর্টে ছাড় চলছে। এর বাইরে নানা রকম প্যাকেজ ছাড়া হয়েছে তুলনামূলক কম খরচে। ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ছুটির সময়টাতেই এসব অফার দিয়েছে তারা। কক্সবাজারের পাঁচ তারকা সায়মন বিচ রিসোর্ট ৩১ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে ৮ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত। ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে বেওয়াচ হোটেল। রুম ভাড়া কমিয়ে অফার দিয়েছে মারমেইড বিচ রিসোর্ট। 

এবারও ভিড়টা হবে কক্সবাজারে

ঈদের আগের দিন কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছেন ফারহানা হোসেন। তিনি বলেন, মারমেইড বিচ রিসোর্টে তিন দিনের জন্য বুকিং দিয়েছেন। ভালো ছাড় থাকায় পরিবার নিয়ে সমুদ্রসৈকতে কয়েকটা দিন কাটানোর সুযোগটা নিয়েছেন। সুযোগ পেলেই বেড়াতে যান তাঁরা। 

কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট আছে। এসব হোটেলে দিনে ধারণক্ষমতা দুই লাখের বেশি। স্থানীয় হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস মালিক সমিতি বলছে, ঈদের পরদিন থেকে মূলত বুকিং শুরু হয়। গত বছরের তুলনায় এবার বুকিং অনেক কম। সেন্ট মার্টিন বন্ধ, মহেশখালী ও সোনাদিয়াতেও বেড়ানো যাচ্ছে না এখন। সমুদ্র উত্তাল আছে। তাই আগ্রহ কম থাকতে পারে। 

কক্সবাজার কলাতলী হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের ছুটিতে মূলত ৯ থেকে ১১ জুনের বুকিংয়ে চাপটা বেশি। প্রথম সারির তারকা হোটেলগুলোতে ৪ জুন পর্যন্ত ৮২ শতাংশ বুকিং হয়েছে। অন্যান্য হোটেলে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত রুম বুকিং হয়েছে। সব মিলে এবার ৫ থেকে ৬ লাখ পর্যটক আসতে পারে কক্সবাজারে। 

সিলেটের নাজিমগড় রিসোর্টে দুটি রুম নিলে একটি রুম ফ্রি অফার দিয়েছে। ছাড় দিয়ে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে মৌলভীবাজারের দুসাই রিসোর্ট। কমলগঞ্জের ব্যাকইয়ার্ড রিট্রিট দিয়েছে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, তিন রাতের বুকিং দিলে এক রাত ফ্রি থাকার সুযোগ। ৫৫ শতাংশ ছাড় দিয়েছে গাজীপুরের ছুটি রিসোর্ট। তাদের অন্য দুটি রিসোর্টেও থাকছে একই রকম ছাড়। জুন মাসজুড়েই বিভিন্ন রকমের প্যাকেজ অফার দিয়েছে হবিগঞ্জের দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট।

প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব তৌফিক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশে আগ্রহ থাকলেও উড়োজাহাজের টিকিটের চড়া দাম ও ভিসা জটিলতায় অনেকে যেতে পারছেন না। নেপালে তো ঈদের পরদিন থেকে ছুটির সময় উড়োজাহাজ টিকিট দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কোনো টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে কক্সবাজারে যাচ্ছেন পর্যটকেরা, অন্য এলাকায় আগ্রহ কম এবার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অফ র দ য় ছ প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খুলছে শনিবার, জাহাজ চালাবেন না মালিকরা