‘গতকাল রাত ১০টায় গাবতলী থেকে আরাফাত পরিবহনের বাসে রওনা দেই। আর ঠাকুরগাঁওয়ে নামলাম বিকেল ৫টায়। পুরো ১৯ ঘণ্টা লেগেছে আসতে। পুরো রাস্তা শুধু জ্যাম আর জ্যাম। জীবনটাই শেষ! ৮ ঘণ্টার রাস্তা আসলাম ১৯ ঘণ্টায়। গাড়ি রংপুর দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও জ্যামের কারণে বগুড়ার শিবগঞ্জ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুর হয়ে ঠাকুরগাঁও আসতে হয়েছে। যমুনা সেতুর আগেই যানজটে আটকে ছিলাম ৮ ঘণ্টা। পরে সিরাজগঞ্জ মোড়, বগুড়া, পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ এলাকাতেও যানজট ছিল। শেষ পর্যন্ত যে বাড়ি আসতে পারছি, এটাই অনেক।’
 
টানা ১৯ ঘণ্টার যাত্রা শেষে এসব কথা বলেন রূপায়ণ গ্রুপের ব্যবস্থাপক (এডমিন) আসাদুল হক। তিনি বলেন, এতে তো তিনগুন ভাড়া দিতে হচ্ছে। তার ওপর মিলছে রাজ্যের ভোগান্তি। এসব নিরসনে সরকারের উদ্যোগ দরকার।

আসাদুলের মতো উত্তরবঙ্গের হাজারও মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন। তাদের চোখে মুখে আনন্দের ছাপ থাকলেও বিধ্বস্ত তাদের শরীর। জার্নিশেষে ঢাকায় কর্মরত সিরামিক কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক এ.

এইচ. এম তৌহিদুজ্জামান জানান, ‘গতকাল রাত ১০ টায় নাবিল পরিবহনের বাসে ঢাকা থেকে রওনা দেন তিনি। পথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনগরে জ্যাম থাকায় গাড়ি ভিতর দিয়ে মানিকগঞ্জ হয়ে আসে। এরপর টাঙ্গাইলের এলেঙ্গার যানজটের কথা শুনে গাড়িচালক ভুয়াপুরের ভেতর দিয়ে আসে। কিন্তু তারপরও এতো জ্যাম যে কাহিল হয়ে গিয়েছি। এরপরও গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে যানজটের খবরে গাড়ি মহাসড়ক দিয়ে না গিয়ে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল ও দিনাজপুেরর হাকিমপুর হয়ে আমাদের ঘোড়াঘাট পৌঁছে। অন্য সময় ঢাকা থেকে ৬/৭ ঘণ্টায় দিনাজপুর আসতে পারলেও এবার দ্বিগুণ সময় লেগেছে। যানজটে অতিরিক্ত ৭ ঘণ্টা লেগেছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিরাজগঞ্জ মোড় এলাকায় গাড়ির খুব ধীরগতি ছিল। তবে ঢাকা অভিমুখের ডানপাশের লেন প্রায় স্বাভাবিক ছিল। এদিকে গোবিন্দগঞ্জ-পলাশবাড়ীতে সওজের সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল কোঅপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের চলমান কাজের কারণে যানজট দেখা যায়। শুক্রবার সকালে যান-চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও দুপুর সাড়ে ১২টার পর দুই পাশের রাস্তায় দীর্ঘ যানজট দেখা যায়। 

যমুনা সেতু পশ্চিম থানার অফিসার-ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জামান শুক্রবার দুপুরে বলেন, ‘ঢাকা ও উত্তরাঞ্চল অভিমুখে উভয়দিকেই চাপ রয়েছে।  সেতুর ওপর দুর্ঘটনা ও টোল আদায় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ রাখায় মাঝেমধ্যে ঢাকা অভিমুখে যান চলাচলে অসুবিধা হয়েছে।’

যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আসাদউদ্দিন বলেন, যমুনা সেতুর ওপরে ৭ নম্বর পিলারের কাছে গাড়ি হঠাৎ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। যে কারণে উত্তরবঙ্গ-ঢাকাগামী লেনটি বন্ধ হয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।’

তিনি বিকেল পাঁচটার দিকে জানান,‘সাভার, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের এলেঙ্গাতে সমস্যার কারণে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী বাসে বেশি সময় লাগছে। সেতুর পূর্বপাড়ের জ্যামের কারণে পশ্চিমপাড়েও প্রভাব পড়ছে। ঢাকার অভিমুখে সেতুর পশ্চিমপাড়ের সয়দাবাদ গোল চত্বর থেকে মুলিবাড়ি পর্যন্ত তিন কিলোমিটার অংশে দীর্ঘ লাইন রয়েছে। 

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুর রউফ বেলা সাড়ে ১২ টায় জানান, ‘গত দুদিন থেকে উত্তরাঞ্চল ও ঢাকা অভিমুখে যানবাহনের বিশাল চাপ রয়েছে।’

হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজির পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে উত্তরা-দক্ষিণাঞ্চল অভিমুখে প্রায় ৬৪ হাজার ২শ ৮৩টি যানবাহন পারাপার হয়। যা ধারণ ক্ষমতার প্রায় চার গুণ। হঠাৎ করে এত সংখ্যক যানবাহন পারাপার হলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে দুরূহ হয়ে পড়ে।’

হাইওয়ে পুলিশ রংপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাসেক-২ প্রকল্পের কারনে গোবিন্দগঞ্জ-পলাশবাড়ীতে দুই পাশে সিঙ্গেল লাইন দিয়ে বর্তমানে যান চলাচল করছে। উত্তরাঞ্চলগামী চার লাইনের গাড়ি যখন এক লাইনে ঢুকে যায় তখন চালক যাত্রীদের কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই হয়। এর কোন বিকল্প নেই। চারশ গাড়ি আসছে, ঢুকতে পারবে একশ, আর বাকি তিন শো তখন যানজট তৈরি করে।’
 
সওজের সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল কোঅপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. ওয়ালিউর রহমান দুপুরে বলেন, ‘পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের কারণে দুইদিকে নির্মাণাধীন সার্ভিস রাস্তা সরু হয়ে গেছে। এছাড়া সড়কের পাশে যত্রতত্র ঝুপড়ি মুদি দোকান ও শত শত ব্যাটারিচালিত রিকশার অবৈধ দখলও যানজটের অন্যতম কারণ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য নজট স র জগঞ জ গ ব ন দগঞ জ প রকল প র য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

গাজীপুরে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অবরোধে ট্রেন চলাচল বন্ধ 

উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদ নিয়ে ষড়যন্ত্র ও বিএসসি প্রকৌশলীদের তিন দফার প্রতিবাদে গাজীপুরে রেল ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ঢাকার সঙ্গে ময়মনসিংহ ও উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। 

বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলী মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় মাঝিরখোলা রেল ক্রসিং অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। 

শিক্ষার্থী ও রেলওয়ে জংশন স্টেশন সূত্রে জানা গেছে,  শিক্ষার্থীরা জয়দেবপুর শিমুলতলী সড়কের পশ্চিম বুরুলিয়া এলাকায় বিক্ষোভ করছেন। এর পাশেই ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটের রেললাইনে অবস্থান নিয়েছেন৷ এতে ওই রুটে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছে৷ 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, দেশের ৪০ লক্ষাধিক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও প্রায় ৪ লাখ পলিটেকনিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিএসসি প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা যে তিন দফা দাবি উত্থাপন করেছেন, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এই দাবি জাতীয় কর্মক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে এবং শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়াবে। 

ডিপ্লোমা প্রকৌশলী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ৭ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এর পাশাপাশি বুধবার সকাল ১০টা থেকে গাজীপুরে মহাসড়ক ও রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। 

জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান বলেন, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা রেললাইন ব্লক করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। 

ঢাকা/রেজাউল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অবরোধে ট্রেন চলাচল বন্ধ