‘সবার ভাগ্য বদলায়, খালি হামার বদলায় না’
Published: 7th, June 2025 GMT
“বৃষ্টি মাথাত নিয়্যে এত কষ্ট করি আবাদ করি। সরকারি ধান ১৪০০ ট্যাকার উপরে, ওমরা দাম দেয় ৮০০ থাকি ৯০০ ট্যাকা। ব্যাপারী এর বেশি দেয় না। কৃষকের জন্যে বলে এত সুবিধা, কই হামরা তো পাইন্যা। চিরদিন খালি হামার উপর এই অত্যাচার। সবার ভাগ্য বদলায়, খালি হামার ভাগ্য বদলায় না।”
এভাবেই আক্ষেপ নিয়ে রাইজিংবিডি ডটকমকে কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার কিসমত বালুয়া গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, “হামার আবাদের ক্ষতি হয়্যা যায়, তাও সরকারি লোক দেখপার আসে না। পরামর্শ দেওয়ার জন্যেও কেউ আসে না। হামার বাড়িত বউ বাচ্চা নাই, খালি ব্যবসায়ীদের বউ, বাচ্চা আছে।”
আরো পড়ুন:
জানুয়ারির মধ্যে সরকার নির্বাচন দিতে পারত: সালাহউদ্দিন
প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর যা বলল ইইউ
বোরো ফসলের অফুরন্ত ভান্ডার হিসাবে পরিচিত গাইবান্ধায় এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষক।
বৃদ্ধ কৃষক আলমগীর হোসেন। রেজাউল করিমের পাশের জমিতেই ধান কেটে মারাই করছিলেন তিনি। এই কৃষক বলেন, “পোকার আক্রমণে এবার এক বিঘ্যা জমি থাকি খালি ১০ মণ ধান পাচি। ম্যালা ট্যাকার ক্ষতি হলো। ধানের এত ক্ষতি কেউ দেখপ্যারও আসেনাই। প্রথমে ধানের দাম পাচি ৮০০ ট্যাকা, এখন ৯০০ ট্যাকা।”
ধান নিয়ে ঘরে ফিরছেন কৃষক
প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোগ, সরকার দাম বাড়ালেও নানা শর্তের কারণে সরকারি গুদামে ধান দিতে পারছেন না তারা। আর্দ্রতা পরীক্ষা, ব্যাংক হিসাব খোলা, গুদামে ধান দিয়ে যাওয়ার খরচ, কৃষকের তালকায় প্রকৃত কৃষকের নাম না থাকা, চাষাবাদের সময় ইউনিয়ন পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তা না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে কৃষক মহাজন ও ফরিয়াদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। যাদের এক বিঘা জমিও নেই, তাদের নাম প্রতিবছর তালিকায় আসে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে কিষান-কিষানিরা দিন-রাত হাড় ভাঙা পরিশ্রম করছেন। কোথাও আবার ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। যদিও কিছু কিছু এলাকায় কারেন্ট পোকার আক্রমণে ফসলের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
কয়েকজন কৃষক বলেন, ধান রোপণ থেকে শুরু করে মাড়াই পর্যন্ত তিন মাসে একজন কৃষকের বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়। সার ও কীটনাশকের দাম বেশি ছিল। ধান কাটতেও নগদ টাকার প্রয়োজন পড়ে। ঠিক এই অর্থ সংকটের সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে পানির দরে নতুন ধান সংগ্রহে নেমেছেন ফরিয়াদের সমন্বয়ে একটি অসাধু চক্র।
সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের চাপাদহ দক্ষিণ পাড়ার কৃষক হোসেন আলী আক্ষেপের সুরে বলেন, “যার এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) জমিও নাই, তার নামে গোডাউনে ধান দেওয়ার স্লিপ আসে। তামার (তাদের) ঘরে কাছে থাকি একটা স্লিপ ৩ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীরা কিনি নিয়্যে যায়। আর হামার ১৫ বিঘা জমি থাকার পরেও কৃষকের তালিকাতে নাম আসে না। খাদ্য গুদাম পর্যন্ত যাওয়ারও সুযোগই পাইন্যা। এগল্যা সিন্ডিকেটের কারবার।”
তিনি জানান, প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র করে সরাসরি সরকার তাদের কাছে থেকে ধান কিনলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি বিপণন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ধান অন্যতম কৃষি পণ্য হলেও এটার ক্রয় বা বিক্রয়ের কোনো কমিটিতেই তাদের রাখা হয়নি। নিয়মের জটিলতায় সরকারি খাদ্যগুদামে সরাসরি প্রকৃত চাষিদের ধান সরবরাহেরও সুযোগ কম। এ কারণে কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ধান কেনার জন্য নাঠ পর্যায়ে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র নেই। এ কারণে অনেক কৃষক ধান চাষের পরিবর্তে ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন।
ফড়িয়া ও ব্যবসায়ীদের দাবি, ভেজা ধান কেনার পর সেই ধান শুকাতে হচ্ছে। লেবার খরচ আছে। শুকনোর পর ৫ থেকে ৭ কেজি ওজন কমে যায়। তাই তাদেরকেও অনেক হিসেব-নিকেশ করে ধান কিনতে হয়।
গাইবান্ধা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিজানুর রহমান বলেন, “জেলায় এ বছর বোরো ধান ৩৬ টাকা কেজি দরে ৩৫ হাজার মেট্রিকটন ধান ও সেদ্ধ চাল ৪৯ টাকা কেজি দরে ৯ হাজার ৩০০ মেট্রিকটন ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে। কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করা হয়। অ্যাপসের মাধ্যমেও কিছু কৃষক আমাদের কাছে আবেদন করেছেন। কৃষক নির্বাচনে আমাদের হাত নেই।”
গাইবান্ধা জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মোস্তাক আহমেদ বলেন, “কৃষকরা নির্লোভ ও সহজ সরল প্রকৃতির। অনলাইনে আবেদন বা অ্যাপস তারা বোঝেন না। কৃষকের উপকার করতে চাইলে, সরাসরি তাদের কাছে যেতে হবে। সব কৃষকের ধান শুকানোর মতো পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে না। সরকার যেভাবে মিলারের কাছে থেকে চাল ক্রয় করে, সেরকমই একটা ব্যবস্থা করে কৃষকের কাছে ধান কিনতে হবে। তা না হলে সিন্ডিকেট থেকে কৃষকের মুক্তি মিলবে না। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কৃষক নির্বাচনে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
“বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামীতে ক্ষমতায় গেলে আগের মতো ধান ক্রয়ের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে ক্রয় কেন্দ্র করা হবে। কৃষকরা সরাসরি ধান বিক্রি করে ন্যায্য দাম পাবেন। কৃষককে বাঁচাতে হলে, এর কোন বিকল্প নেই”, যোগ করেন তিনি।
এদিকে কৃষকের তালিকা ঘেটে দেখা গেছে, কৃষকের তালিকায় তাদের নাম আছে, যাদের জমি নেই। কৃষকের তালিকায় রিকশাচালক, মুদি দোকানদারের নাম রয়েছে। আবার চার-পাঁচ বছর আগে আবেদন করে লটারিতে নাম উঠেছিল, তার নাম এখনো তালিকায় আছে, অথচ তিনি জানেন না। তালিকায় এমনও নাম রয়েছে, যার কোন জমি নেই, এমনকি কৃষক তালিকার বিষয়েও কিছু জানেন না তিনি। তালিকায় অনেকের জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বরের জায়গায় মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে।
সদর উপজেলার তালিকার ৩ নম্বরে সোলায়মান ইসলামের নাম রয়েছে। তার বাড়ি কামারজানি ইউনিয়নে। কৃষক তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তালিকার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমার ছোট ভাই আবেদন করেছে হয়তো।”
একই ইউনিয়নের তালিকার ১৩ নম্বরে নাম রয়েছে সাহাদাৎ হোসেনের। তিনি বলেন, “আজ থেকে ৫ বা ৭ বছর আগে আবেদন করি। তালিকায় নাম এসেছিল। সেই নাম এখনো আছে, জানা ছিল না।”
সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের ফেনসি খাতুন। তালিকার ৪২৬ নম্বরে তার নাম রয়েছে। জানতে চাইলে তার স্বামী বাচ্চু মিয়া ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “কৃষক তালিকা করার জন্য কৃষি অফিসে গিয়েছিলাম। তারা বলেছে, আবেদনের সময় শেষ। আমরা প্রকৃত কৃষক। ২০০ মণ ধান পাই। তালিকায় স্ত্রীর নাম আছে সেটা জানা ছিল না।”
তালিকার ৪৩২ নম্বরে নাম রয়েছে বল্লমঝাড় ইউনিয়নের সজিনা আক্তারের। তিনি বলেন, “আমার ২০–২৫ শতাংশ জমি আছে। এই ধান দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। তালিকার বিষয়ে কিছু জানি না।”
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরাশেদ আলম বলেন, “কৃষকরা অনলাইনে আবেদনের পর ইউনিয়ন পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করে সেই তালিকা খাদ্য বিভাগকে পাঠান। পুরো জেলার কৃষক তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে, সদর উপজেলার ১৩ হাজার ৫০০ জন কৃষকের তালিকা খাদ্য বিভাগে পাঠানো হয়েছে। প্রকৃত কৃষক নির্বাচনে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের (এস এ ও) ভূমিকা রয়েছে। কৃষক নয়, এমন কেউ তালিকাভুক্ত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “প্রকৃত কৃষক নির্বাচনে পদ্ধতিগত ও প্রচার-প্রচারণায় ঘাটতি থাকায় মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিচ্ছে।”
গাইবান্দা জেলায় চলতি বছর ১ লাখ ২৯ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ১৫ হেক্টর। আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৯৮ শতাংশ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ সদর উপজ ল র কর মকর ত র জন য ব যবস সরক র বদল য় ক ষকর
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।