ভিকারুননিসার ছাত্রী মেয়েকে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবা, ডুবে দুজনেরই মৃত্যু
Published: 9th, June 2025 GMT
ঈদুল আজহার ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল সে। সেই সুযোগে সাঁতার শিখতে নেমেছিল পুকুরে, শেখাচ্ছিলেন বাবা। একপর্যায়ে মেয়ে ডুবে গেলে রক্ষা করার চেষ্টা করেন বাবা। এ সময় দুজনই ডুবে মারা যান।
আজ সোমবার বিকেলে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত দুজন হলেন হামিদপুর গ্রামের বাসিন্দা ইটভাটা ব্যবসায়ী বাবুল আহমদ (৬০) ও তাঁর মেয়ে হালিমা মোহাম্মদ (১৭)। হালিমা ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। ২৬ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষার তার অংশগ্রহণের কথা ছিল।
স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, বাবুল আহমদের স্ত্রী তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। তাঁদের চার সন্তান সেখানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। বাড়ির কাছে মানিকসিংহ এলাকায় বাবুলের একটি ইটভাটা রয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে চার-পাঁচ দিন আগে তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা বাড়িতে বেড়াতে আসে। তাঁর সন্তানেরা সাঁতার জানে না। আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে মেয়ে হালিমাকে নিয়ে পুকুরে নেমে প্লাস্টিকের টিউবের সাহায্যে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবুল। একপর্যায়ে টিউব থেকে হাত ফসকে হালিমা পানিতে ডুবে যায়। এ সময় বাবুল মেয়েকে রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু দুজনই পানি থেকে উঠছিলেন না। আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে পুকুরে নেমে প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন। পরে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে দুজন মারা যান।
বিকেল পাঁচটার দিকে বাবুলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আলাদা দুটি কক্ষে বাবা-মেয়ের লাশ রাখা। লাশের পাশে বসে স্বজনেরা বিলাপ করছেন। প্রতিবেশীরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
বাবুলদের আত্মীয় ও জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আজাদ মিয়া জানান, আজ রাত ১০টায় বাবুল ও তাঁর মেয়ের জানাজা হবে। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে কোরবানি দিতে গিয়ে আহত ৭৬, হাসপাতালে ভর্তি ২৬ জন
সিলেটে কোরবানি দিতে গিয়ে হাত-পা কাটাসহ বিভিন্নভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭৬ জন। এর মধ্যে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন ২৬ জন। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। ঈদের দিন গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
হাসপাতাল থেকে আরও জানা গেছে, গতকাল সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪২ জন। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা, মারামারি, অসুস্থতার কারণে ভর্তি হয়েছেন অনেকে। এর বাইরে কোরবানি দিতে গিয়ে অসাবধানতাবশত আহত হয়েও অনেকে ভর্তি হয়েছেন। কোরবানি দিতে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ জন জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। অন্য ২৬ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের হাত ও পায়ের শিরা কেটে গেছে।
গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে কথা হয় চিকিৎসাধীন ওয়াসিম উদ্দিনের (২৪) সঙ্গে। তাঁর শয্যার পাশে বসে ছিলেন মা সমলা বেগম।
ওয়াসিম বলেন, গতকাল সকালে তাঁরা সিলেট নগরের চৌকিদেখি এলাকায় গরু কোরবানি দিচ্ছিলেন। তিনিসহ আরও দুজন গরুর মাথা চেপে ধরেছিলেন। এ সময় গরু হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠলে গরুর গলায় চালানো ছুরি তাঁর হাতে লেগে শিরা কেটে গেছে। হাসপাতালে আসার পর ব্যান্ডেজ দেওয়া হয়েছে। রাতে অস্ত্রোপচার করা হবে।
একইভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সিলেটের ওসমানীনগরের তাজপুরের বাসিন্দা সামাদ আহমদ (২৬) ও সিলেটের কালাগুল এলাকার শানুর মিয়া (৩৬)। তাঁদের দেখভাল করছিলেন স্বজনেরা।
সামাদ আহমদ বলেন, গতকাল বেলা ১১টার দিকে কোরবানির গরু জবাই করতে গিয়ে ছুরিতে বাঁ হাতের দুটি আঙুল কেটে গেছে। রক্তক্ষরণ থামছিল না, দ্রুত হাসপাতালে এসেছেন। চিকিৎসক জানিয়েছেন, কয়েক দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে।
হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, কোরবানি দিতে গিয়ে অনেকে অসাবধানতাবশত আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা চিকিৎসাধীন, তাঁদের অধিকাংশের শিরা কেটে গেছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি জরুরি চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। শিরা কেটে যাওয়ার বিষয়টি জটিল। যাঁদের শিরা কেটে গেছে, তাঁদের অস্ত্রোপচার করা হবে।