দীর্ঘদিন ধরে মৎস্যজীবীদের দাবি ছিল, সমুদ্রে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় কমিয়ে ভারতের নিষেধাজ্ঞার সময়সীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য করা হোক। তা না হলে এই সুযোগে ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যান। অন্তর্বর্তী সরকার মৎস্যজীবীদের সে দাবি মেনে নিষেধাজ্ঞার সময় কমিয়ে এনেছে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, মৎস্যজীবীরাই সেই নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। এতে নিষেধাজ্ঞার সুফল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

দেশের সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় সরকার প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। উদ্দেশ্য একটাই—মাছের প্রজনন, বৃদ্ধি ও টেকসই আহরণ নিশ্চিত করা। এ বছরও সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের এ নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, মাঠপর্যায়ে এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নানা দুর্বলতা দেখা গেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কুয়াকাটা, পাথরঘাটা, তালতলীসহ বরিশালের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলের অসাধু ব্যবসায়ী ও জেলেরা অভিনব কৌশলে সাগরে গিয়ে মাছ শিকার করছেন। এরপর এসব মাছ ছোট ট্রলারে করে বন্দরে এনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করা হচ্ছে। এমনকি যাত্রীবাহী বাসে করেও ঢাকাসহ বিভিন্ন বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে নিষিদ্ধ সময়ে ধরা এসব মাছ।

এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃত মৎস্যজীবী ও সচেতন ব্যবসায়ীরা নিষেধাজ্ঞার সুফল নিয়ে সন্দিহান। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতির বক্তব্যে উঠে এসেছে হতাশা। তিনি বলেছেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে আনার পেছনে তাঁরা অনেক শ্রম দিয়েছেন, আন্দোলন করেছেন। সরকার তাঁদের দাবি মেনে নিষেধাজ্ঞার সময় কয়েক দিন কমিয়ে দিলেও অনেক ট্রলারমালিক ও জেলে নিষেধাজ্ঞা মানছেন না।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের ব্যাপারে তাঁদের কোনো ঢিলেমি নেই। তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু জনবলসংকট থাকায় সব কাজ তাঁদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সড়কপথে মাছ পাচার রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তাঁরা জানান।

প্রজননের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন অবাধ শিকারে মৎস্যসম্পদ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ারই কথা। এ মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা প্রায় শেষ হয়ে গেলেও আগামী বছরগুলো থেকে এ ব্যাপারে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ ও কঠোর নজরদারি জরুরি। নৌ ও সড়কপথে মাছ পাচার প্রতিরোধে আন্তবিভাগীয় সমন্বিত অভিযান চালাতে হবে। নজরদারিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সচেতনতা ও বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে তাঁদের নিষেধাজ্ঞা মানতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি সহায়তা থেকে কোনো জেলে যেন বঞ্চিত না হন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যাঁরা নিষেধাজ্ঞা ভাঙবেন, তাঁদের সতর্কীকরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপে শাস্তি দিতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ষ ধ জ ঞ র সময় মৎস য সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে

চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।

সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।

মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে
  • কালীগঞ্জ পৌর শহর যেন মশার স্বর্গরাজ্য
  • বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে বডি ক্যামেরা পাচ্ছে বিএসএফ