ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর উপজেলা সদরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পাঠানপাড়া ও উত্তরপাড়ার লোকজনের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় একাধিক দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে আঞ্চলিক মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপজেলা সদরের পাঠানপাড়ায় অবস্থিত এরাবিয়ান হেবসা অ্যান্ড ফুচকা হাউস নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ফুচকা খেতে যান উত্তরপাড়ার দুই কিশোর। খাওয়া শেষে হাত মোছার টিস্যু পেপার চাওয়া নিয়ে দুই কিশোরের সঙ্গে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারীর বাগ্‌বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে দুই কিশোরকে মারধর করা হয়।

এর জেরে কিছুক্ষণ পর উভয় পক্ষের লোকজন দা, বল্লম, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে পাঠানপাড়া ও উত্তরপাড়ার এলাকায় সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর টর্চলাইট জ্বালিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। রাত আটটার পর উভয় পক্ষ মসজিদের মাইকে লোকজনকে সংঘর্ষে জড়িত হওয়ার জন্য আহ্বান জানায়। একপর্যায়ে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে আঞ্চলিক মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে। দুর্ভোগে পড়েন যানবাহনের হাজারো যাত্রী। পরে পুলিশ দফায় দফায় লাঠিপেটা করে রাত ১০টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত করে। আহত ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সংঘর্ষের একপর্যায়ে উত্তরপাড়ার লোকজন দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। এরাবিয়ান হেবসা অ্যান্ড ফুসকা হাউসের মালিক মুজিবুর পাঠান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জীবনের সব অর্জন দিয়ে শিশুদের জন্য একটি খুদে বিনোদনকেন্দ্র ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়েছি। মুহূর্তের মধ্যে সব শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আমার অন্তত চার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অর্থও লুট করে নিয়েছে।’
স্বপ্নপূরী ফুচকা হাউস নামের অপর একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক শামীম পাঠান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এক লাখ টাকা লুট করে নিয়েছে। সেই সঙ্গে ভাঙচুর করেছে কয়েক লাখ টাকার মালামাল।’

উত্তরপাড়ার একাধিক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের পাড়ার দুটি ছেলেকে প্রথমে মারধর করা হয়েছে। পরে তাদের অভিভাবক বিষয়টি জানার জন্য সেখানে গেলে তাঁদেরও মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনা কেউ মেনে নিতে পারেননি। এ ঘটনার জন্য ফুচকার দোকানের লোকজনই দায়ী।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন আছে। এ ব্যাপারে কোনো পক্ষই অভিযোগ দেয়নি। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থানায় বসে বিষয়টি মীমাংসার কথা আছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশারফ হোসাইন বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনায় এমন ঘটনা ঘটতে পারে না। আমরা সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান করছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক র ল কজন র জন য স ঘর ষ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর হেনস্তাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন (৪৫) ওই বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে এক তরুণী তাঁর পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করছেন। বাসে ওঠার পর সামনের আসনে বসা ওই ব্যক্তি তাঁর পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণী প্রতিবাদ জানাতে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনার সমস্যা কী?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ওই ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে তরুণীকে চড় মারেন। মুহূর্তেই তরুণী জুতা খুলে পাল্টা আঘাত করেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনই বাসের সামনের দিকে পড়ে যান। তরুণী নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ করেন।

ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তরুণীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঘটনাটিতে উভয় পক্ষের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

নাজিম উদ্দিনকে আটক করার সঙ্গে যুক্ত র‍্যাব-৪–এর মেজর আবরার ফয়সাল সাদী প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর হেনস্তকারী ব্যক্তিকে আটক করতে র‍্যাব-৪–এর একটি দল অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যায় নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক প্রথম আলোকে বলেন, হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আজ শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিন ধানমন্ডি ১৫ থকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলাচলরত রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দুজনের মধ্যে মারামারি হয়। ছাত্রীটি মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।

আজ সন্ধ্যায় পাঠানো র‍্যাব-৪–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রমজান পরিবহনের একটি বাস ধানমন্ডি ১৫ থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় যাচ্ছিল। বাসটি বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের সামনে পৌঁছালে চালকের সহকারী মো. নিজাম উদ্দিন বাসটির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দিন তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাঁকে চড় মারেন। একপর্যায়ে তরুণীও আত্মরক্ষার্থে নিজের পায়ের জুতা খুলে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে আঘাত করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই শিশুর ঝগড়ায় জড়ালেন বড়রা, বড় ভাইয়ের হাতে খুন ছোট ভাই
  • রাজশাহীতে ‘প্রেমিকার’ সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার কিশোরের মৃত্যু
  • প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার কিশোরের মৃত্যু
  • মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার