কলম্বিয়ার বিপক্ষে হার এড়াল ১০ জনের আর্জেন্টিনা
Published: 11th, June 2025 GMT
আর্জেন্টিনা ১ : ১ কলম্বিয়া
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কলম্বিয়ার বিপক্ষে হারতে হারতে কোনো রকমে বাঁচল আর্জেন্টিনা। শুরুতে গোল খাওয়ার পর একপর্যায়ে ১০ জনের দলে পরিণত হয় আর্জেন্টিনা। দল পিছিয়ে থাকা অবস্থায় বদলি করা হয় লিওনেল মেসিকেও। কিন্তু এরপরও হাল না ছেড়ে ঠিকই হার এড়িয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। থিয়াগো আলমাদার গোলে প্রায় হারতে বসা ম্যাচটিতে ১-১ গোলে ড্র করেছে তারা। এর আগে ম্যাচের প্রথমার্ধে কলম্বিয়ার হয়ে গোল করেন লুইস দিয়াজ।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কলম্বিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। তাই এই ম্যাচটা আর্জেন্টিনার জন্য ছিল প্রতিশোধের। আগের ম্যাচে বদলি হিসেবে নামা মেসি আজ বুধবার শুরু থেকেই ছিলেন একাদশে। কিন্তু মেসিকে নিয়েও কলম্বিয়ার বিপক্ষে সংগ্রাম করতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে। লম্বা সময় পর্যন্ত পিছিয়েও ছিল তারা। যদিও শেষ পর্যন্ত হারের হতাশায় মাঠ ছাড়তে হয় লিওনেল স্কালোনির দলকে।
বুয়েনেস এইরেসের মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে মেসির দুর্দান্ত এক আক্রমণ দিয়ে শুরু হয়েছিল ম্যাচটা৷ তবে অল্প সময়ের মধ্যে আর্জেন্টিনার আক্রমণের জবাব দিতে শুরু করে কলম্বিয়া। বল দখলে পিছিয়ে থাকলেও প্রতি-আক্রমণ থেকে সুযোগ তৈরি করে আর্জেন্টিনাকে বেশ চাপেই রেখেছিল তারা। এমনকি গোলের প্রচেষ্টায় আর্জেন্টিনার চেয়ে এগিয়েই ছিল তারা। তেমনই এক আক্রমণ থেকে ম্যাচের ২৪ মিনিটে কলম্বিয়াকে এগিয়ে দেন লুইস দিয়াজ।
প্রতি-আক্রমণে সতীর্থ কেভিন কাস্তানোর কাছ থেকে মাঝমাঠের কাছাকাছি জায়গায় বল পান লিভারপুল তারকা। এরপর বাঁ প্রান্ত দিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গিয়ে ঢুকে পড়েন আর্জেন্টিনার বক্সে। বক্সের ভেতর তিন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারের ফাঁদ এগিয়ে জায়গা বের দুর্দান্ত এক শট নিয়ে করেন ম্যাচের প্রথম গোল।
ম্যাচের ৩০ মিনিটে অবশ্য আর্জেন্টিনা প্রায় সমতা ফিরিয়েই ফেলেছিল। কিন্তু বল জালে জড়ানোর পর রেফারি অফসাইডের পতাকা উড়ালে হতাশ হতে হয় আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। বিরতির আগে আরও একাধিকবার চেষ্টা করেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু কলম্বিয়ার সুদৃঢ় রক্ষণ-দেয়াল ভেঙে পাওয়া হয়নি কাঙ্ক্ষিত গোলটি।
বিরতির পর ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে আর্জেন্টিনা। একের পর এক আক্রমণে যায় তারা। কিন্তু কলম্বিয়ার ডিফেন্স দারুণভাবে আটকে রেখেছিল আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগকে। ৬৩ মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ হাতছাড়া করেন এনজো ফার্নান্দেজ। এরপর ৬৮ মিনিটে গোলের কাছাকাছি গিয়ে হতাশ হতে হয় স্বাগতিকদের। তবে আর্জেন্টিনার বিপদ বাড়ে ৭০ মিনিটে এনজো ফার্নান্দেজ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে। কলম্বিয়ান মিডফিল্ডার কাস্তানোর মাথায় বুট দিয়ে আঘাত করেই মূলত এই কার্ডটি দেখেন চেলসি মিডফিল্ডার।
১০ জনের দলে পরিণত হয়েও অবশ্য আর্জেন্টিনা হাল ছাড়তে নারাজ ছিল। ৭৭ মিনিটে আর্জেন্টিনা পিছিয়ে থাকা অবস্থাতেই মেসিকে তুলে নেন স্কালোনি। তাঁর বদলে মাঠ নামেন এজেকিয়েল পালাসিওস।
মেসি নেই, তারওপর একজন খেলোয়াড় কম; এমন পরিস্থিতিতে আর্জেন্টিনার ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে যখন শঙ্কা তৈরি হচ্ছিল তখনই চমক দেন আলমাদা। ৮১ মিনিটে দারুণ এক শটে গোল করে সমতায় ফেরান আর্জেন্টিনা। লিড হারিয়েও শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যায় কলম্বিয়া। ৮৬ মিনিটে সুযোগও পেয়েছিল। কিন্তু পোস্টের বাধায় আর গোল পাওয়া হয়নি। এরপর আর কোনো গোল না হলে ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় দুই দলকে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল আর জ ন ট ন আর জ ন ট ন র
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।