সীমাহীন সংকটে হাইওয়ে পুলিশ, নিরাপদ সড়কের স্বপ্ন অধরা
Published: 11th, June 2025 GMT
ভাড়া বাড়িতে চলছে ময়মনসিংহ হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রম। নিজস্ব কার্যালয়, পর্যাপ্ত জনবল, প্রয়োজনীয় যানবাহন ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে সড়কপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে এই রিজিওনের হাইওয়ে পুলিশ। বিশেষ করে যানজট নিয়ন্ত্রণ, দুর্ঘটনা মোকাবিলা ও ভারতীয় সীমান্ত পথে মাদক চোরাচালান রোধে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে।
২০২৩ সালে স্বতন্ত্র রিজিওন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ময়মনসিংহ হাইওয়ে পুলিশ। এই রিজিওনের কর্মকর্তাদের মতে, সরকারি নিজস্ব অবকাঠামো না থাকাটা কেবল দাপ্তরিক কার্যক্রমকেই ব্যাহত করছে না, বরং এর কর্মপরিবেশ ও দক্ষতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে তাদের যেমন স্থানের সংকুলান হচ্ছে না, তেমনি কর্মপরিবেশও বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে তাদের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও বড় প্রভাব পড়ছে।
আধুনিক কমান্ড সেন্টার, সার্কেল অফিস, পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা ও জরুরি সরঞ্জাম সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান না থাকায় তাদের কর্মদক্ষতা অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। এই অবকাঠামোগত দুর্বলতা একটি নবগঠিত রিজিওনের সক্ষমতাকে গোড়া থেকেই সীমিত করে দিচ্ছে।
অফিস ভবনের সংকটের পাশাপাশি ময়মনসিংহ হাইওয়ে পুলিশের যানবাহনের অভাবও প্রকট। তাদের একটি কার্যকরী র্যা কার নেই। আগে একটি থাকলেও তা বর্তমানে বিকল। ফলে মহাসড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা বিকল হয়ে যাওয়া গাড়ি দ্রুত সরানোর প্রয়োজন হলে তাদের অন্য জায়গা থেকে র্যা কার আনতে হয়। এতে একটি ছোট গাড়ি সরাতেও তিন-চার ঘণ্টা সময় লেগে যায়। মালবাহী গাড়ি সরাতে আরও বেশি সময় লাগে।
ময়মনসিংহ হাইওয়ে রিজিওন চারটি থানা নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো– ভরাডোবা, শ্যামগঞ্জ, নান্দাইল ও বকশীগঞ্জ। প্রতিটি থানায় মাত্র একটি করে গাড়ি বরাদ্দ আছে, যা দেড়শ কিলোমিটার মহাসড়ক ও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় সীমান্ত এলাকার জন্য অপ্রতুল। তাছাড়া বকশীগঞ্জ হাইওয়ে থানার গাড়িটি গত বছরের ৫ আগস্টের পরে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। বর্তমানে সরকারি গাড়ি ছাড়াই চলছে এ থানার কার্যক্রম।
জানা গেছে, রিজিওন ও সার্কেল অফিস মিলিয়ে যে দুটি গাড়ি আছে– সেগুলোও বেশির ভাগ সময় নষ্ট অবস্থায় পড়ে থাকে। গাড়িগুলো অত্যন্ত ধীরগতির যা সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে চলে। অথচ চোরাকারবারি ও দুষ্কৃতকারীরা দ্রুতগতির যানবাহন ব্যবহার করে। যার ফলে হাইওয়ে পুলিশ তথ্য পেয়েও অনেক সময় তাদের আটক করতে ব্যর্থ হয়।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, ভরাডোবা থানার আওতায় ৫৪ কিলোমিটার, শ্যামগঞ্জ থানার আওতায় ৩০, বকশীগঞ্জ থানার আওতায় ৪৬ ও নান্দাইল থানার আওতায় ২৩ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। এই চারটি থানার মহাসড়ক এবং ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও বকশীগঞ্জে ভারতীয় সীমান্ত এলাকার দায়িত্বে আছেন মাত্র ১০০ জন পুলিশ সদস্য। এত অল্প জনবল দিয়ে মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যানজট নিয়ন্ত্রণ, দুর্ঘটনা মোকাবিলা এবং চোরাচালান রোধ প্রায় অসম্ভব।
রিজিওনাল অফিসের তথ্যমতে, ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ময়মনসিংহ হাইওয়ে পুলিশের প্রসিকিউশন অনুযায়ী চোরাচালান, দস্যুতা, মাদক ও সড়ক দুর্ঘটনা মিলে ১৯৪টি মামলা হয়েছে। তাছাড়া ময়মনসিংহ রিজিওনের আওতাধীন হাইওয়ে এলাকায় গত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ১৮৮টি। এসব দুর্ঘটনায় ২০৯ জন নিহত, আহত হয় ৫৮ জন। দুর্ঘটনা ও মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ভরাডোবা হাইওয়ে থানায়।
ময়মনসিংহ রিজিওনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রণজয় চন্দ্র মল্লিক জানান, প্রত্যাশা অনুযায়ী সরকার সুদৃষ্টি দিলে ময়মনসিংহ হাইওয়ে পুলিশ জনগণের ভোগান্তি নিরসন এবং একটি নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার কাজী মোহাম্মদ ছোয়াইব বলেন, ‘২০২৩ সালে ময়মনসিংহ রিজিওন গঠিত হলেও এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট একটি সরকারি অফিস পাইনি আমরা। ডিউটি করার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি নেই।’ তাঁর ভাষ্য, জনবল সংকটের কারণে বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েও সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হতে পারেন না তারা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ হ ইওয় প ল শ থ ন র আওত য দ র ঘটন হ হ ইওয সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।
হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।
যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।
একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।