ফেনীতে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের মরদেহ ডোবা থেকে উদ্ধার, পরিবারের দাবি হত্যা
Published: 12th, June 2025 GMT
ফেনীর সদর উপজেলায় নিখোঁজ হওয়ার এক দিন পর জোবায়ের রাবিন (১০) নামের এক স্কুলছাত্রের মরদেহ বাড়ির পাশের একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের নগরকান্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত জোবায়ের চট্টগ্রামের বিএএফ শাহীন কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। সে নগরকান্দা গ্রামের মোহাম্মদ ওমরের ছেলে। ছুটিতে যমজ ভাই জারের রামিনের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে এসেছিল সে। দুই ভাই একই শ্রেণিতে পড়ে।
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার দুপুরে জোবায়ের বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হয়। খোঁজাখুঁজির পর সন্ধ্যায় ফেনী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। আজ সকালে বাড়ির পাশের একটি ডোবার পানিতে ভেসে থাকতে দেখা যায় জোবায়েরের মরদেহ। পাশেই ছিল তার সাইকেল ও স্যান্ডেল। তার মুখে ফেনা ও রক্তের দাগ ছিল বলে জানিয়েছে পরিবার।
নিহত জোবায়েরের বাবা মোহাম্মদ ওমর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দুই ছেলে সাঁতার জানে। অল্প পানির ডোবায় জোবায়ের ডুবে যেতে পারে না। আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। দ্রুত দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার চাই।’
খবর পেয়ে ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, এটি হত্যা, না দুর্ঘটনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।
ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইকবাল হোসেন বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পরে তা স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। সাইকেল চালানোর সময় পানিতে পড়ে তার মৃত্যু হতে পারে। তবে তিনি জানান, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভুয়া র্যাবকে ধাওয়া দিল আসল র্যাব, পথে দুই পক্ষকেই পেটাল জনতা
জোরে হর্ন দিতে দিতে দ্রুতগতিতে ছুটছিল একটি মাইক্রোবাস। সেটির কিছুটা পেছনে ছুটছিল আরেকটি মাইক্রোবাস। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় মহাসড়কে গাছ ফেলে প্রথম মাইক্রোবাসটিকে থামান স্থানীয় লোকজন। গাড়িতে থাকা ব্যক্তিরা নিজেদের র্যাব বলে পরিচয় দেন। তবে তাঁদের কারও গায়ে র্যাবের পোশাক ছিল না। সন্দেহ হয় স্থানীয় লোকজনের। ওই ব্যক্তিরা পালাতে চেষ্টা করলে তাঁদের আটকে মারধর শুরু করেন স্থানীয় লোকজন।
এমন সময়ে সেখানে পৌঁছে যায় দ্বিতীয় মাইক্রোবাসটি। এতে ছিলেন র্যাবের প্রকৃত সদস্যরাই। যদিও কয়েকজনের গায়ে ইউনিফর্ম ছিল না। তাঁরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক ব্যক্তিদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তবে স্থানীয় লোকজনের রোষের মুখে পড়ে তাঁরাও পিটুনির শিকার হন। একপর্যায়ে স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে শান্ত করে এই দুই পক্ষকেই উদ্ধার করেন।
ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চর যশোরদী ইউনিয়নের জয় বাংলার মোড় এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে; গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আমীরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জনতার হাত থেকে র্যাব ও ভুয়া র্যাব সদস্যদের উদ্ধার করে নগরকান্দা থানায় নিয়ে আসা হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁদের নিয়ে ফরিদপুর র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার উদ্দেশে যান।
মারধরের শিকার ভুয়া র্যাব পরিচয়দানকারী ব্যক্তিরা হলেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ছাব্বিশপাড়া গ্রামের স্বপন খান (৪৫), চাঁদপুর সদরের মদনা গ্রামের মিন্টু গাজী (৪৫), গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কুনসিবাড়ি গ্রামের মো. সাইফুল ইসলাম (৩০), মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আন্ডারচর এলাকার মো. জামিল (৩২) এবং ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিদাডাঙ্গা গ্রামের দিদার (২৯)। তাঁদের থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে র্যাব-১০–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আসামিরা দুজন সোনা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ডাকাতি করেছিলেন।
র্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার তারিকুল ইসলাম বলেন, র্যাব-১০–এর হেডকোয়ার্টার থেকে একটি টিম ডাকাত দলকে ধাওয়া করে আসছিল। স্থানীয় লোকজন ভুল বুঝে উভয় পক্ষের ওপর চড়াও হন। কিছু র্যাবের সদস্যরা সাদাপোশাকে থাকায় উত্তেজিত লোকজন তাঁদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রকৃত র্যাব বলে চিনতে ভুল করেন।
র্যাব-১০ মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভুয়া র্যাবের দলকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ধাওয়া করে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ের টোল দিয়ে বের হয়ে যেতে পারলেও শেষ পর্যন্ত তাদের ধরা গেছে।’ নিজেরাও মারধরের শিকার হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণ যখন ভুয়া র্যাব পরিচয়কারীদের মারপিট করছিলেন, তখন তাঁদের যাতে মেরে না ফেলেন, এই আশঙ্কায় আমরা জনগণের পিটুনি থেকে তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করি। তবে প্রথম পর্যায়ে জনগণ আমাদেরও ভুয়া র্যাব মনে করেছিলেন। এ কারণে আমাদের সঙ্গে কিছু ঘটনা ঘটেছিল, তবে তা আমলযোগ্য নয়।’