গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিতে জাতিসংঘে ভোট
Published: 12th, June 2025 GMT
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার গাজা যুদ্ধ নিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাবের ওপর ভোট দেবে। ওই প্রস্তাবে তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো হয়েছে। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার পর এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে।
রয়টার্স জানায়, ১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট সাধারণ পরিষদে এই খসড়া প্রস্তাব বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে গৃহীত হবে বলে আশা করছেন কূটনীতিকরা। যদিও ইসরায়েল এই প্রস্তাবকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ফলপ্রসূহীন প্রহসন’ বলে আখ্যা দিয়ে দেশগুলোকে এতে অংশ না নিতে চাপ দিয়ে আসছে।
সাধারণ পরিষদে ভোটের জন্য উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি, ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
এতে বাধাহীন ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘নাগরিকদের ক্ষুধার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার এবং মানবিক সহায়তার অবৈধ বাধা প্রদান ও তাদের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য জিনিস থেকে বঞ্চিত করা, যার মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সাহায্য সরবরাহ ও প্রবেশে বাধা দেওয়া অন্তর্ভুক্ত– এই কাজগুলোকে কঠোরভাবে নিন্দা করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪২ জন নিহত হয়েছে। এতে করে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। চিকিৎসকদের বরাতে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।
সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার নিহতদের মধ্যে ২৬ জন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) কর্তৃক বিতরণ করা খাদ্য ও অনান্য প্রয়োজনীয় জিনিস আনার জন্য অপেক্ষা করার সময় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় মারা গেছেন।
রয়টার্স জানায়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জোট সরকার পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার বিরোধীদের একটি উদ্যোগকে ঠেকিয়ে দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য এমন একটি বিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন, যা পাস হলে ইসরায়েলে আগাম নির্বাচনের পথ খুলে যেতে পারত। ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের ১২০ সদস্যের মধ্যে ৬১ জন বিলের বিপক্ষে ভোট দেন এবং ৫৩ জন পক্ষে ভোট দেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল প রস ত ব ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
কেমন হতে পারে ইরানের জবাব
ইসরায়েলের হামলার পর কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েলকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে হুমকিও দিয়েছেন। পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা ও ঊর্ধ্বতন সামরিক নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, এই গল্পের শেষ ইরানের হাতেই লেখা হবে। ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করা মানে সিংহের লেজ নিয়ে খেলা করা। এই ধরনের হামলার মুখে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রয়োজন অনুভব করতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
পাল্টা হামলায় প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলে ১০০ ড্রোন ছুড়েছে ইরান। প্রতিবেশী দেশ ইরাক জানিয়েছে, ইরানি ড্রোনগুলো তাদের আকাশসীমা অতিক্রম করে ইসরায়েলের দিকে ছুটে গেছে। তবে ইসরায়েল নিজ ভূখণ্ডের বাইরে এসব ড্রোন ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে। জর্দান জানিয়েছে, তাদের দেশে ইরানি ড্রোন বিস্ফোরণের আশঙ্কায় তারা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে কিছু ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, ইসরায়েল ইরানের আবাসিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করেছে। হামলায় নারী ও শিশু নিহত হয়েছে। তিনি এর জবাবে সামরিক ও কূটনৈতিক উভয় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানোর অঙ্গীকার করেছেন।
এদিকে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করছে ওয়াশিংটন। তবে ইরানি নেতারা সম্ভবত মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসন কেবল এই হামলা সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিল না, বরং গোপনে ইসরায়েলকে সমর্থনও দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা এই হামলায় জড়িত ছিল না। তবে তেহরান মনে করে, হামলাটি ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সমন্বিত হামলা। দেশটি এও মনে করে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সম্পূর্ণরূপে মার্কিন সামরিক সরঞ্জামের ওপর নির্ভরশীল।
ইরান ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই বিবৃতিতে ইসরায়েলকে সন্ত্রাসবাদের জন্য অভিযুক্ত করেছে। দেশটি জোর দিয়ে বলেছে, হামলাটি প্রমাণ করে, ইসরায়েল কোনো আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে না। তারা মাতালের মতো প্রকাশ্যে সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানের সমৃদ্ধি, পারমাণবিক প্রযুক্তি ও ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির বিষয়টি বিশ্ব এখন ভালোভাবে অবগত। কারা আগ্রাসী, কোন দেশ এই অঞ্চলের জন্য হুমকিস্বরূপ তাও বিশ্বের দেশগুলো এখন জানে।
ইরান জোর দিয়ে বলেছে, পারমাণবিক বোমা তৈরির কোনো গোপন পরিকল্পনা তাদের কখনও ছিল না। ইরানসহ পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সব দেশের বেসামরিক উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সার্বভৌম অধিকার রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি আছে– এমন কোনো প্রমাণ নেই। চলতি সপ্তাহে দেওয়া আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রতিবেদনেও তা নিশ্চিত করা হয়েছে।’ তবে আইএইএ জানিয়েছে, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে করছে কিনা, তা প্রমাণ করা সম্ভব না।
বিশ্লেষণে বল হয়, তেহরান ধারাবাহিকভাবে যুক্তি দিয়ে আসছে, বারাক ওবামার সময় করা চুক্তি অনুসারে তারা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে আসছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ধারবাহিক আলোচনা করে যাচ্ছে। ইরানের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা জানতেন, ইরানের পদক্ষেপ নিয়ে ইসরায়েল ক্রমশ ক্ষুব্ধ হচ্ছে। তবে আরব কূটনীতিকদের আশা ছিল, ওয়াশিংটন-তেহরান অবশেষে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। তারা মনে করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হামলার অনুমতি ইসরায়েলকে সহসাই দেবে না।
গত ২৩ এপ্রিল ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের চলমান আলোচনায় সন্তুষ্ট নয় ইসরায়েল। তারা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে ইরানের কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে বিপথগামী করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা পরিষেবাগুলো উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।
তবে আরাগচির এই বক্তব্য ভুল প্রমাণিত করে ইসরায়েল সফল হামলা চালিয়েছে। ইরানের কাছে থাকা রাশিয়ার তৈরি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
ইরানের অর্জন মূলত একটি। তা হলো, সম্প্রতি আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দেশটি সম্পর্ক উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে লেবানন, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরাকে যে প্রক্সি যুদ্ধ চালাচ্ছিল তেহরান, ইসরায়েল সেই প্রতিরক্ষা ভেঙে দিতে সক্ষম হয়। এই অবস্থায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরব রাষ্ট্রগুলো যৌথভাবে কোনো সামরিক পদক্ষেপের দিকে অগ্রসর হবে না।