গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, একসঙ্গে আন্দোলন সংগ্রাম করায় সম্প্রীতি করতে গিয়ে বিএনপি আশীর্বাদের পরিবর্তে আমাদের যে একটি অভিশাপের চিঠি দিয়েছে সে জন্যই হাসান মামুন ও তার সমর্থকরা এই সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আজকে গলাচিপা দশমিনার ঘটনা থেকেই আমরা বলতে পারি সারা বাংলাদেশে কি পরিস্থিতি চলছে। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে সেটি বিএনপির জন্য অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিতে পারে।

শুক্রবার বিকেলে গলাচিপা উপজেলা পরিষদ ডাক বাংলোর সামনে বিএনপি নেতা হাসান মামুনের অনুসারী কর্তৃক গলাচিপা, দশমিনা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গণঅধিকার পরিষদের অফিস ভাংচুর, নেতা-কর্মীদের উপর হামলা ও দোকান-বাড়ি ভাংচুরসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। 

নুরুল হক নুর বলেন, ‘‘পটুয়াখালীর দশমিনা গলাচিপায় আমাদের নেতাকর্মীর উপরে হামলা হয়েছে তার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। মিছিলে বিএনপির হাসান মামুনের সমর্থকরা হামলার প্রস্তুতি নেওয়ায় তাদের নিবৃত্ত করতে না পেরে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। এটি প্রশাসনের ব্যর্থতা। এই অক্ষমতা প্রশাসন কাটিয়ে উঠতে না পারলে আগামীতে এদের দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’’

ভিপি নুর আরও বলেন, ‘‘হাসান মামুনের অনুসারীরা অভিযোগ করছেন বিএনপির অফিস নাকি ভাংচুর করা হয়েছে। বিএনপি এত বড় একটি দল কার সাহস আছে তাদের অফিস ভাংচুর করার? এই হাসান মামুনের মত বিতর্কিতদের জন্য দলের নেতাকর্মীরা আজ উশৃঙ্খল হচ্ছে। আমরা হামলার শিকার হয়েছি। আমার নেতাকর্মীরা আহত হয়েছে। আমার কর্মীদের মোটর সাইকেল ভাংচুর করেছে। আবার শুনেছি আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়া হচ্ছে।’’ 

‘‘২৪-এর শতশত তাজা প্রাণের বিনিময়ে এই গণঅভ্যুত্থানের পরে সুবিধা নিচ্ছে হাসান মামুনের মতো নেতাদের পরিবার। আমি বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছি, তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, এখন দেখার পালা! গণঅধিকার পরিষদ ভেসে আসেনি, অনেক লড়াই সংগ্রাম করে এই দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ফ্যাসিষ্ট সরকার হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছি। প্রয়োজনে আবারো আমজনতাকে সাথে নিয়ে ফ্যাসিস্টের  বিরুদ্ধে লড়াই করে একটি রাষ্ট্র উপহার দেওয়ার চেষ্টা করবো।’’

সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের জেলা, উপজেলা ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য গতকাল রাতে পাতাবুনিয়া গ্রামে ভিপি নুরকে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং তার গ্রামে গনঅধিকার পরিষদ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায়  চরম উত্তেজনা বিরাজ করায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।

মো.

ইমরান//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন ত কর ম কর ম দ র পর স থ ত ব এনপ র কর ম র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গলাচিপায় ভিপি নুরকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ 

পটুয়াখালীর গলাচিপায় বিএনপির নেতাকর্মীরা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে (ভিপি নুর) অবরুদ্ধ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাত ১০টার দিকে গলাচিপা উপজেলার পাতাবুনিয়া বটতলা বাজারে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। রাত ১টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ওই বাজারে গিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে থাকা গণঅধিকার পরিষদ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

অন্যদিকে, চর বিশ্বাস বাজারে সরকারি চান্দিনা ভিটির ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিপ্ট বা ভূমি কর ব্যতিত অন্যান্য সরকারি পাওনা আদায়ের রশিদ) পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে ভিপি নুরের ভাই আমীনুল ইসলামসহ দুই পক্ষের ১০ জন আহত হন। পরে চর বিশ্বাস বাজারে ইউনিয়ন বিএনপির অফিস ভাঙচুর করেন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। 

নুরুল হক নুরের ছোট ভাই আমীনুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, বাজারে দুই শতাধিক দোকান আছে। ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাকের বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান প্রতিটি দোকান থেকে ৩০ হাজার টাকা করে দাবি করেন ডিসিআর পাইয়ে দেওয়ার নামে, যা সরকারের নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অনেক বেশি। অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা নুরুল হক নুরের সহযোগিতা চান। গত ১০ জুন নুর এলাকায় গেলে বিষয়টি নিয়ে দোকানিরা অভিযোগ করেন। তিনি তাদের অতিরিক্ত টাকা না দিতে বলেন এবং প্রশাসনের মাধ্যমে ডিসিআর পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর থেকেই স্থানীয় বিএনপির নেতাদের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

অভিযোগ অস্বীকার করে চর বিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেছেন, “আমরা কর্মীসভা করছিলাম। সে সময় ভিপি নুরের ভাই আমীনুল ও তার লোকজন এসে আলোচনা বন্ধ করতে বলেন। আমরা আলোচনা বন্ধ করলেও অকারণে তারা আমাদের ওপর চড়াও হন এবং চেয়ার ছুড়ে মারেন। এতে আমাদের ৮–১০ জন নেতাকর্মী আহত হন। আমরা কারো কাছ থেকে টাকা নিইনি। ভিপি নুরের শ্যালক এনিম আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মিলে টাকা তুলেছেন। এখন এর দায় আমাদের ওপর চাপানো হচ্ছে।”

নুরুল হক নুর বলেছেন, “আমি নেতাকর্মীদের নিয়ে পাতাবুনিয়া বাজারের বাদল মেম্বারের স্মরণসভায় গিয়েছিলাম। রাত পৌনে ১০টার দিকে সেই স্মরণসভা শেষে গলাচিপা বাজারে ফেরার পথে শুনতে পাই, বিএনপির নেতাকর্মীরা গাছের গুড়ি এবং দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। পরে আমাদের কয়েকজন কর্মী সেখানে বিষয়টি দেখার জন্য গেলে বিএনপি নেতা হাসান মামুনের অনুসারীরা একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। এছাড়া, দশমিনার কয়েকটি অফিস তারা ভাঙচুর করেন। হাসান মামুনের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। আমরা যখনই গণসংযোগ করি, তখনই বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাদের নেতাকর্মীদের হুমকি দেন। আমাদের সঙ্গে ৫০০ থেকে ৭০০ নেতাকর্মী ছিলেন। আমরা এ ঘটনা মোকাবিলা করতে পারতাম। কিন্তু, এলাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্ট হোক, সেটা আমরা চাইনি।”

সার্বিক বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিএনপি নেতা হাসান মামুন। সেখানে তিনি লিখেছেন, আওয়ামী লীগ নেতারা গণঅধিকারের ঘাড়ে পা দিয়ে বিএনপি অফিস ভাঙচুর করেছেন। হামলাকারী ও হামলার নির্দেশদাতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। 

পরে কয়েকটি পোস্টে তিনি ভিপি নুরকে উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া, তিনি বিএনপি নেতাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।

গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেছেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

ঢাকা/ইমরান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গলাচিপা ও দশমিনায় ১৪৪ ধারার আদেশ অব্যাহত
  • পটুয়াখালীতে বিএনপি-জিওপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, ১৪৪ ধারা জারি
  • গলাচিপায় ১৪৪ ধারা জারি
  • গলাচিপায় ভিপি নুরকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ