চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২০ টাকা কেজির আম ঢাকায় ৮০ টাকা, আমচাষির টাকা কোথায়
Published: 14th, June 2025 GMT
আমের প্রত্যাশিত দাম পাচ্ছেন না চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে এখন আমের দাম গড়পড়তায় প্রতি কেজি ২০ টাকা। আমের মানভেদে দাম ১৬-১৭ টাকায় শুরু হয়, ওঠে ৩০ টাকা পর্যন্ত। আমের মান ও দর-কষাকষির ওপর দাম নির্ভর করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন হিমসাগর আমের ভরা মৌসুম।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কানসাটের বাজারে আমচাষি, আড়তমালিক, আমের ব্যাপারীদের ভিড় লেগেই থাকে। মৌসুমি আম ক্রেতারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, বানেশ্বরের পাশাপাশি রাজশাহীতে ছুটছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট বাজার সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে। কানসাট বাজার দেশের সবচেয়ে বড় আমের বাজার হিসেবে পরিচিত। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ ওই অঞ্চলে এখন আমের ভরা মৌসুম। চাষি পর্যায়ে এবার আমের দাম বেশ কম। তাঁরা প্রত্যাশিত দাম পাচ্ছেন না। কারণ, ঈদের লম্বা ছুটি ও অতিরিক্ত গরম।
অন্যদিকে রাজধানীর ঢাকার বাজারে হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে গড়ে প্রতি কেজি ৮০ টাকা। তবে ৬০-৭০ টাকায়ও হিমসাগর মিলছে।
কানসাট থেকে যে দামে আম কেনা হয়, এর চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি দামে ঢাকার বাজারে বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য এর সঙ্গে পরিবহন খরচ যুক্ত হয়।
সরেজমিন কানসাট বাজার
গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কানসাট বাজারে যান প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, শত শত ভ্যানগাড়িতে আম আনছেন আমচাষিরা। বাজারের আশপাশের গলিপথে শুধু আমবোঝাই ভ্যান আর ভ্যান। আশপাশের শিকারপুর, মোবারকপুর, বাজিতপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আমচাষিরা আম নিয়ে এসেছেন। ভ্যানের ওপর প্লাস্টিকের ক্যারেট (প্লাস্টিকের চার কোনাকৃতির ঝুড়ি), বাঁশের ঝুড়িতে আম বোঝাই করে বাজারে আম আনা হয়।
জানা যায়, প্রতিদিনই কানসাট বাজারের মূল সড়কে এক-দুই কিলোমিটারজুড়ে যানজট তৈরি হয়। বিভিন্ন জেলায় আমের চালান নেওয়ার জন্য প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান আসে কানসাটে। কুরিয়ার সার্ভিসের জমজমাট ব্যবসাও আছে।
আমের আড়তগুলোয় গিয়ে দেখা গেছে, আমের ম–ম গন্ধ। আড়তদারেরা সকাল থেকেই আমচাষিদের নিয়ে আসা ভ্যানবোঝাই আম কিনছেন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত চলে জমজমাট ব্যবসা। ক্রেতাদের আম দিয়ে অ্যাপ্যায়নও করেন বিক্রেতারা। বিকেল হতেই বেচাকেনা কমতে থাকে। এখন কানসাটে হিমসাগর আমের ভরা মৌসুম চলছে। ল্যাংড়াসহ অন্যান্য আমও ওঠা শুরু হয়েছে।
দাম কত
কানসাট বাজারে মণ হিসেবে আমের দরদাম ঠিক করা হয়। ৫০ কেজিতে এক মণ ধরা হয় এখানে। জানা গেছে, আমের দাম নির্ধারণ হয় তিনভাবে। চার-পাঁচ দিন পরে পাকবে বা খাওয়ার উপযোগী হবে, এমন আমের দাম প্রতি মণ ১ হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা। এক কেজির দাম পড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এসব আম আকারে বড় ও তাজা। দু-তিন দিনের মধ্যে পাকবে, এমন আম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। প্রতি কেজির দাম পড়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা। এ ধরনের আম বেশি বেচাকেনা হয়। একদম পাকা আমের দাম প্রতি মণ আট শ থেকে এক হাজার টাকা।
বিক্রেতারা জানান, আম পেকে গেলে দ্রুত পচন ধরে। ফলে কম দামেই আম বিক্রি করতে বাধ্য হন। এ ছাড়া আমের আকার ও জাত অনুসারেও দাম ওঠানামা করে।
কানসাট এলাকার আমচাষি গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, এবার ঈদের লম্বা ছুটির কারণে আম বেচাকেনা কম হয়েছে। এ ছাড়া ছুটির সময় বেশ গরম পড়েছে। তাই আম দ্রুত পেকে যাচ্ছে। ছুটির কারণে চাহিদাও কম। এসব কারণে এখন লোকসান এড়াতে কম দামেই আম বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে জানান গোলাম মোস্তফা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কানসাট থেকে এখন প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েক শ টন আমের চালান যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যাঁরা আম বিক্রি করেন, তাঁদের প্রতিনিধিরা কানসাটে গিয়ে আম কিনে কুরিয়ারে গ্রাহকের কাছ পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আবার মৌসুমি আম বিক্রেতারাও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে আম কিনতে আসছেন।
আবার ঈদের লম্বা ছুটির কারণে অনেকে বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলে ঘুরতে এসেছেন। তাঁদের অনেকেই কানসাট কিংবা বানেশ্বর এসে আম কিনছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কানসাট বাজারে মোতাহারুল ইসলাম নামের এমন একজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। বেসরকারি চাকরিজীবী মোতাহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এবার ১০ দিন ছুটি হওয়ায় বন্ধুরা মিলে রাজশাহী অঞ্চলে ঘুরতে এসেছেন। কানসাটে এসে আম কিনে কুরিয়ারে আত্মীয়স্বজনের বাসায় পাঠিয়েছেন। তিনি জানান, ২০ ও ২৫ টাকা দরে তিনি আমদানি কিনেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট বাজারের আমের আড়ত থেকে তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম র দ ম আম ব ক র আমচ ষ র র আম র আম ক ন
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ