খামেনি ও পেজেশকিয়ানকে লক্ষ্য করে হামলার চেষ্টা
Published: 15th, June 2025 GMT
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লক্ষ্য করে হামলার চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরায়েল। নিউইয়র্ক টাইমস শনিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের রাজধানী তেহরানের পাস্তুর এলাকায় এই হামলার চেষ্টা হয়। ওই এলাকাতেই অবস্থান করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ও সর্বোচ্চ নেতা। হামলা প্রতিহত করতে ইরানি সেনাবাহিনী ব্যাপকভাবে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে।
পাস্তুর এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, হামলার আশঙ্কায় সেখানে নিয়মিতভাবে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে মিসাইল ছোড়া হচ্ছে। তাদের মতে, এসব ব্যবস্থা কার্যকরভাবে মোতায়েন করা হয়েছে যেন ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র কোনোভাবেই ওই এলাকায় আঘাত হানতে না পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে সরাসরি হামলার এই চেষ্টা মধ্যপ্রাচ্যের সংকটকে আরও ঘনীভূত করতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত ইসরায়েল সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই হামলার বিষয়টি স্বীকার করেনি, তবে পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
শুক্রবার ভোরে ইরানের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েল। এর পর সারাদিনই দেশটিতে হামলা অব্যাহত রাখে তারা। ভয়াবহ এ হামলায় ইরানের সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, সামরিক বাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামিসহ অন্তত ২০ জ্যেষ্ঠ কমান্ডারকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ অবস্থায় ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই বাহিনীটির নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
দায়িত্ব নিয়েই ইসরায়েলের উদ্দেশে কঠিন হুঁশিয়ারি দেন নতুন আইআরজিসিপ্রধান। তিনি বলেন, ইসরায়েলি হামলার জবাবে শিশু হত্যাকারী জায়নবাদী শাসকের জন্য শিগগিরই জাহান্নামের দরজা খুলে যাবে।
নতুন আইআরজিসিপ্রধানের এ বার্তার কয়েক ঘণ্টা না যেতেই ইসরায়েলে মিসাইল হামলা শুরু করে ইরান। স্বল্প সময়ের মধ্যে তিন দফায় মিসাইল হামলা করেছে তেহরান, যেখানে প্রথম দফায় ছোড়া হয়েছে শতাধিক মিসাইল। ইরানি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩ নামের’ এ অভিযানে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে এরই মধ্যে কয়েকশ মিসাইল ছোড়া হয়েছে। ইরানের এ হামলার পরই মূলত নতুন করে আবারও হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’
লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।
সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।