শুক্রবার হইতে ইরানের উপর কোনো প্রকার উস্কানি ব্যতিরেকে ইসরায়েল যেই হামলা চালাইয়া যাইতেছে, উহাতে জায়নবাদী রাষ্ট্রটির আগ্রাসী চরিত্রই পুনরায় ফুটিয়া উঠিয়াছে। বিশ্বের অন্যান্য শান্তিপ্রিয় ও যুদ্ধবিরোধী রাষ্ট্র, জাতি ও জনগণের ন্যায় আমরাও জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সকল সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘনকারী এই আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাই। ইরানি কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুসারে, ইসরায়েলের এই হামলায় একাধিক সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৭৮ জন ইরানি নাগরিক নিহত হইয়াছেন; আহত হইয়াছেন ৩২৯ জন। আমরা ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইরানিদের প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা এবং আহত ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি জানাই। আমরা জানি, ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলেও বেশ কয়েকজন হতাহত হইয়াছেন। এই সকল প্রাণহানির দায়ও ইসরায়েলি যুদ্ধোন্মত্ত সরকারকে বহন করিতে হইবে। 

স্মরণ করা যাইতে পারে, মূলত দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত হইবার কারণে ইসরায়েল বিশেষত আরব ও সমগ্র বিশ্বের ন্যায়ানুরাগী মানুষের নিকট অবৈধ রাষ্ট্র হইলেও, মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও বিশ্বশান্তির স্বার্থে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধপূর্ব সীমানার ভিত্তিতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রস্তাব আরব নেতৃবৃন্দসহ অধিকাংশ রাষ্ট্র সমর্থন করিয়া থাকে। এমনকি ১৯৯০-এর দশকে ইসরায়েলি নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি নেতৃবৃন্দও এই বিষয়ে এক প্রকার সমঝোতায় উপনীত হইয়াছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলের বর্তমান চরম রক্ষণশীল নেতৃত্ব হীনস্বার্থ চরিতার্থ করিবার লক্ষ্যে উক্ত সমঝোতা উপেক্ষা করিয়া গত কয়েক বৎসর যাবৎ গাজায় নির্মম গণহত্যা ও অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চালাইয়া আসিতেছে। যাহার ফলে এক চিলতে গাজায় নারী-শিশুসহ অর্ধলক্ষাধিক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন বহু মানুষ। তদুপরি উক্ত আগ্রাসনকে নির্বিঘ্ন করিবার লক্ষ্যে বিশ্ব জনমতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করিয়া ইসরায়েল লেবানন ও সিরিয়ায়ও এই সময়ে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করে। ইরানের উপর চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনও যে অভিন্ন নীলনকশার অংশ– তাহা হলফ করিয়াই বলা যায়। কারণ বরাবরের ন্যায় ইরান গাজায় পরিচালিত সাম্প্রতিক ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও সোচ্চার থাকিয়াছে। এই বিষয়ে বিশ্বজনমত গঠনেও তৎপর।

অধিকতর উদ্বেগজনক হইল, যুক্তরাষ্ট্রসহ যেই সকল পশ্চিমা রাষ্ট্র নিজেদের আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পাহারাদার ভাবেন, তাহারা সকলেই গাজার ন্যায় চলমান ইরান আগ্রাসনেও ইসরায়েলকে সমর্থন-সহযোগিতা চালাইয়া যাইতেছেন। এই নীতির মাধ্যমে তাহারা বস্তুত সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকেই অগ্নিকুণ্ডে পরিণত করিতে যাইতেছেন। এমনকি বিশ্ব অর্থনীতিকে নিক্ষেপ করিতেছেন টালমাটাল পরিস্থিতিতে। বিশেষত বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহে ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অগ্রগণ্য ভূমিকা সর্বজনবিদিত। বৈশ্বিক বাণিজ্যে ইরানের প্রভাবাধীন হরমুজ প্রণালির ভূমিকাও অজানা নহে। সর্বোপরি সামরিক শক্তিতেও ইরান উপেক্ষণীয় নহে। আমাদের বিশ্বাস, এই সকল কারণ বিবেচনায় রাখিয়াই ইতোপূর্বে বিশ্বশক্তিসমূহ পারমাণবিক অস্ত্র ইস্যুতে শক্তি প্রয়োগের পরিবর্তে ইরানের সহিত আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি সম্পাদন করিয়াছিল। এমনকি বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অগ্র-পশ্চাৎ না ভাবিয়া উক্ত চুক্তি বাতিল করিবার পরও সম্প্রতি একই প্রশ্নে ইরানের সহিত আলোচনাকেই প্রাধান্য দিয়াছেন, যাহার অংশরূপে ১৫ জুন ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ দফা পারমাণবিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হইবার কথা ছিল। কিন্তু ইরানে ইসরায়েলি আগ্রাসন সেই আলোচনাকে বানচাল করিয়া দিল। 
আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘকে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করিতে হইবে। চলমান সংঘাতের অবসান এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আনিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। বিশ্বনেতাদের মধ্যে এ বিষয়ে শুভবুদ্ধির উদয় ঘটাইতে দেশ দেশে যুদ্ধবিরোধী মানুষের সোচ্চার হইবার সময় সমুপস্থিত বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। ইসরায়েলি যুদ্ধযন্ত্রকে যেই কোনো মূল্যে থামাইতে হইবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত হইয় ছ ইসর য় ল আগ র স

এছাড়াও পড়ুন:

কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 

বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না।  মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন  করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও  এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?

ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো।  বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে। 

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার ‍বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ

রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা 

রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে। 
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। 

১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত। 

জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। 

বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই। 

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।  

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের কাজ কি শুধু ভাইভা নেওয়া
  • কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-গ্রামবাসীতে বিদ্বেষ কেন
  • চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড: ট্রাম্প কি দাঙ্গা–ফ্যাসাদকেই নীতি হিসেবে নিয়েছেন