ইরানের ৮৬ বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন। মঙ্গলবার এক বিশেষ প্রতিবেদনে রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিত পাঁচজন ব্যক্তির মতে, খামেনি তার প্রধান সামরিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হতে দেখেছেন, যা তার অভ্যন্তরীণ বৃত্তে বড় ধরনের শূন্য স্থান তৈরি করেছে এবং কৌশলগত ভুলের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
খামেনির সাথে নিয়মিত বৈঠকে যোগদানকারী এই সূত্রগুলির মধ্যে এক জন তেহরানের প্রতিরক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার বিষয়ে ইরানের ভুল গণনার ঝুঁকিকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বলে বর্ণনা করেছেন।
শুক্রবার থেকে বেশ কয়েকজন সিনিয়র সামরিক কমান্ডার নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে ইরানের অভিজাত সামরিক বাহিনী রেভুলিউশনারি গার্ডের সামগ্রিক কমান্ডার হোসেইন সালামি, এর মহাকাশ প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ যিনি ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি রয়েছেন।
সূত্র অনুসারে, এই ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ নেতার অভ্যন্তরীণ বৃত্তের অংশ ছিলেন যাদের মধ্যে রক্ষী বাহিনীর কমান্ডার, ধর্মগুরু এবং রাজনীতিবিদরা ছিলেন। এই তিনজন ব্যক্তি প্রধান বিষয় নিয়ে নেতার সাথে বৈঠকে যোগ দিতেন এবং দুজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা এসব বৈঠকে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন।
এই দলটি খামেনির কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেন। তারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের আদর্শের প্রতি অটল অনুগত ছিলেন।
ইরানের সরকার ব্যবস্থার অধীনে খামেনি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ড, যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা রাখেন এবং সামরিক কমান্ডার ও বিচারকসহ ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের নিয়োগ বা বরখাস্ত করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খামেনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন, যদিও তিনি পরামর্শকে মূল্য দেন, বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং প্রায়শই তার পরামর্শদাতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত তথ্য খোঁজেন।
ওয়াশিংটনের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের ইরান প্রোগ্রামের পরিচালক অ্যালেক্স ভাতাঙ্কা বলেন, “খামেনি সম্পর্কে আপনি দুটি কথা বলতে পারেন: তিনি অত্যন্ত একগুঁয়ে কিন্তু অত্যন্ত সতর্ক। তিনি অত্যন্ত সতর্ক। এ কারণেই তিনি এতোদিন ধরে ক্ষমতায় আছেন। খামেনি মৌলিক খরচ-সুবিধা বিশ্লেষণ করার জন্য বেশ ভালো অবস্থানে আছেন যা আসলে মৌলিকভাবে অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের দিকে নিয়ে যায়: শাসনব্যবস্থার টিকে থাকা।”
ইসরায়েলি হামলা সেসব বিপ্লবী গার্ড কমান্ডারদের ধ্বংস করে দিয়েছে যাদেরকে খামেনি ১৯৮৯ সালে সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার পর থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছিলেন। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক কৌশল উভয়ের জন্যই তিনি এদের উপর নির্ভর করেছিলেন।
ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক মুহূর্তে খামেনি এই অঞ্চলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টাদের হারানোর কারণে নিজেকে আরো নিঃসঙ্গ মনে করে থাকতে পারেন। কারণ ইরানের ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ জোট ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ, যিনি ব্যক্তিগতভাবে ইরানি নেতার ঘনিষ্ঠ ছিলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন এবং ডিসেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে বিদ্রোহীরা উৎখাত করেন।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’
জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত ১১ দলের ১১টি নতুন প্রযোজনা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’। জাতীয় নাট্যশালায় গত ৩১ জুলাই শুরু হওয়া এই নাট্যোৎসব চলবে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসবে নাট্যরূপে উঠে আসছে ইতিহাস, আন্দোলন ও সময়ের গল্প।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল শুক্রবার জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’। তীরন্দাজ রেপার্টরি প্রযোজিত নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় দীপক সুমন। গতকালই ছিল এ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মঞ্চস্থ নতুন এ নাটক নিয়ে আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে উল্লেখযোগ্য দর্শকের উপস্থিতি ছিল। দর্শকদের অনেকেই বলছেন, এই নাটকে যেন এক নাগরিকের নির্জনতা, এক প্রেমিকের না-পাওয়া, এক বিপ্লবীর বিষণ্নতা আর এক সাধারণ মানুষের অসহায়তা একসূত্রে বাঁধা পড়েছে।