অতিরিক্ত দর্শনার্থীর চাপ, কর্মীদের কর্মবিরতিতে সাময়িকভাবে বন্ধ ল্যুভর জাদুঘর
Published: 17th, June 2025 GMT
বিশ্বে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাদুঘর ল্যুভর সোমবার বন্ধ ছিল। যুদ্ধ বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নয়, বরং ক্লান্ত কর্মীদের প্রতিবাদে জাদুঘরটি বন্ধ রয়েছে। তাঁরা বলছেন, শিল্প, সৌন্দর্য ও স্থায়িত্বের বৈশ্বিক প্রতীক এ জাদুঘর আর সামলে নিতে পারছে না।
এটা ছিল অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির শিল্পকর্ম আর সহস্রাব্দব্যাপী সভ্যতার নিদর্শন যেখানে শোভা পায়, সেই জায়গাটিই এখন কি না অচল হয়ে পড়েছে। যাঁদের কাজ ছিল বিশ্ববাসীকে এ জাদুঘরে স্বাগত জানানো, তাঁদের মাধ্যমেই এ অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে।
তবুও ঘটনাটি নিছক শ্রমবিক্ষোভে সীমাবদ্ধ নয়। ল্যুভর বিশ্বব্যাপী অতিপর্যটনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। নিজ জনপ্রিয়তার ভারে নুয়ে পড়ছে ঝলমলে প্রাসাদটি। ভেনিস থেকে অ্যাকরোপলিসের মতো পর্যটন আকর্ষণকারী স্থানগুলোতে দর্শনার্থীর স্রোত নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলে। এবার বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিসম্পন্ন জাদুঘরও পৌঁছেছে তেমন এক সন্ধিক্ষণে।
জাদুঘরের কর্মীদের নিয়মিত বৈঠক থেকে হঠাৎ এ কর্মবিরতির ঘোষণা আসে। এ সময় গ্যালারিতে পর্যটকদের সহায়তা প্রদানকারী, টিকিট বিক্রেতা ও নিরাপত্তা প্রহরীরা দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানান। তাঁরা বলছেন, নিয়ন্ত্রণহীন ভিড়, ক্রমাগত কর্মী সংকট এবং শ্রমিক ইউনিয়নের ভাষায় ‘অসহনীয়’ হয়ে ওঠা পরিবেশের কারণেই এই কর্মবিরতি।
যুক্তরাষ্ট্রের মিলওয়াকি শহর থেকে আসা ৬২ বছর বয়সী কেভিন ওয়ার্ড বলেন, ‘এখানে এসে যেন মোনালিসার আর্তনাদ শুনছি।’ কেভিন ল্যুভরে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা হাজারো দর্শনার্থীর একজন। তিনি আরও বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছে। অথচ কোনো ঘোষণা নেই, কোনো ব্যাখ্যা নেই। মনে হচ্ছে, তারও (মোনালিসা) আজ একটা ছুটি দরকার।’
পর্যটকদের জন্য ল্যুভরের দরজা বন্ধ হওয়ার নজির খুব একটা নেই। এর আগে এমনটা ঘটে যুদ্ধ, মহামারি এবং কয়েকটি ধর্মঘটের সময়ে। ২০১৯ সালে ভিড়ের কারণে স্বতঃস্ফূর্ত কর্মবিরতি এবং ২০১৩ সালে নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কায় বন্ধ ছিল ল্যুভর। তবে এবারের পরিস্থিতি অনেকটা ভিন্ন। টিকিট হাতে দর্শনার্থীরা সারিবদ্ধভাবে প্লাজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই জাদুঘর হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। কেন এমন হলো তার কারণ কেউ স্পষ্ট জানে না।
আরও পড়ুনল্যুভর জাদুঘরের নেতৃত্বে প্রথম নারী২৭ মে ২০২১গত বছর ল্যুভর জাদুঘর ঘুরে দেখেছেন ৮৭ লাখ মানুষ, যা এর মূল অবকাঠামোর ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। প্রতিদিন ৩০ হাজার দর্শনার্থীর সীমা নির্ধারণ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। কর্মীদের মতে, প্রতিদিনের কাজ এখন এক কঠিন সহ্যশক্তির পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাদুঘরটিতে বিশ্রামের জায়গা খুবই কম। বাথরুমের সংখ্যা সীমিত, আর প্রবেশ দ্বারের সামনের কাচের পিরামিডের কারণে সৃষ্ট গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ায় উত্তাপ যেন আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
ল্যুভর জাদুঘরের পূর্ণ সংস্কার পরিকল্পনার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ইউরো। এই অর্থ জোগাড় হবে টিকিট বিক্রির আয়, ব্যক্তিগত অনুদান, রাষ্ট্রীয় তহবিল এবং ল্যুভরের আবুধাবি শাখা থেকে পাওয়া লাইসেন্স ফির মাধ্যমে। চলতি বছরের শেষ দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের পর্যটকদের জন্য টিকিটের দাম বাড়তে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
তবে কর্মীদের দাবি, দশ বছর মেয়াদি কোনো পরিকল্পনার চাইতে তাঁদের চাহিদা মেটানো অনেক বেশি জরুরি।
নটর ডেম ক্যাথেড্রালের মতো প্যারিসের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সংস্কারের পথে এগোলেও ল্যুভর এক অনিশ্চয়তার ফাঁদে আটকে রয়েছে। এর জন্য পূর্ণ অর্থায়ন নেই আর প্রতিষ্ঠানটিও পুরোপুরি কার্যকর নয়।
২০১৭ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর ল্যুভর জাদুঘরে ভাষণ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকেও তিনি ল্যুভরকে উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এই দশকের শেষ নাগাদ ল্যুভরকে একটি নিরাপদ ও আধুনিক জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সৈকতে নারী পর্যটকদের গোসলের ভিডিও ধারণ, কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কারাদণ্ড
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গোসলরত নারী পর্যটকদের ভিডিও ধারণ করার দায়ে রুবেল (৩০) নামে এক কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসিন সাদীক। এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
রুবেল বরগুনা সদর উপজেলার বাসিন্দা। তিনি মুদি দোকানের ব্যবসার পাশাপাশি কনটেন্ট তৈরি করেন।
সৈকতের ফটোগ্রাফার আরিফ মিয়া বলেন, ‘‘রুবেল নারীদের গোসলের ভিডিও করছিলেন। প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। বিষয়টি দেখত পেয়ে তাকে আটক করি।’’
অপর ফটোগ্রাফার রাসেল বলেন, “রুবেলের মোবাইল চেক করে দেখি, অনেক ভিডিও। সঙ্গে সঙ্গে ট্যুরিস্ট পুলিশকে খবর দেই। পরে তাদের কাছে সোপর্দ করি।’’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসিন সাদেক বলেন, “অনুমতি ছাড়া নারী পর্যটকদের ভিডিও ধারণের দায়ে রুবেলকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’’
ঢাকা/ইমরান/রাজীব