রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি সম্পর্কে মঙ্গলবার সমকালের প্রতিবেদনে যেই আশঙ্কা প্রকাশ হইয়াছে, তাহা সরকারের নীতিনির্ধারকদিগের জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনায় লওয়া উচিত বলিয়া আমরা মনে করি। প্রতিবেদনমতে, যেইখানে আবহাওয়া অফিস বলিয়াছে, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীসহ সমগ্র দেশে ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রহিয়াছে, এক দিনে এমনকি শতাধিক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হইতে পারে; সেইখানে বর্ষা মৌসুম সম্মুখে রাখিয়া অতীতে রাজধানীতে যেই সকল সংস্কার কাজ হইত, এইবার তাহার কিছুই হয় নাই। বিশেষত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এইবার খাল, বক্স কালভার্ট ও উন্মুক্ত ড্রেনের আবর্জনা পরিষ্কারের ন্যায় রুটিন কাজগুলিও করে নাই। দুই মাস ধরিয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উন্নয়নমূলক সকল কার্যক্রম বন্ধ। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) চলিতেছে লেজেগোবরে অবস্থা। উভয় সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় তাগিদ দিবারও কেহ নাই। 

আমরা জানি, রাজধানীতে ড্রেন রহিয়াছে দুই সহস্রাধিক কিলোমিটার। উন্মুক্ত ড্রেনগুলি দিয়া পানি প্রথমে বক্স কালভার্টে প্রবেশ করে, পরে খাল বা নদীতে চলিয়া যায়। খাল, উন্মুক্ত ড্রেন, পাইপ ড্রেন ও বক্স কালভার্টের অধিকাংশ এখনও আবর্জনায় পূর্ণ। ফলে যেই নগরীতে সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা, সেইখানে ভরা বর্ষায় ভারী বৃষ্টি হইলে অবস্থা আরও সঙ্গিন হইতে পারে। নগরবাসীর জন্য ইহা নিঃসন্দেহে বড় দুঃসংবাদ। জলাবদ্ধতা রাজধানীবাসীর নিকট অতি পুরাতন সমস্যা। অতএব, ইহার দুর্ভোগ সম্পর্কে নূতন করিয়া কিছু বলিবার নাই। স্বল্প সময়ের বৃষ্টিতেও এখানকার বহু সড়ক পানির নিচে চলিয়া যায়। তখন সড়কে চলাচল এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা লইয়া আসে। খানাখন্দে পড়িয়া আহত হইবার, নিদেনপক্ষে পরিহিত বস্ত্র নোংরা-ময়লা হইবার পাশাপাশি যানজট তীব্রতর রূপ পরিগ্রহ করে। বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সহিত বাড়িঘরেও পানি ঢুকিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও পরিবারের সমূহ ক্ষতির কারণ হইয়া দাঁড়ায়।

মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বাধাহীন দখল-দূষণ এবং বিজ্ঞানসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অনুপস্থিতিতে  দুর্বল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণেই চার শতাধিক বৎসরের এই ঢাকা শহর অদ্যকার দুরবস্থায় পতিত, আমরা জানি। আবার ইহাও জানি, পরিকল্পনাবিদগণ মনে করেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নিদেনপক্ষে খাল, নর্দমার বৃহৎ উন্নয়ন আবশ্যক। অনেকেরই স্মরণে থাকিবার কথা, এই উদ্দেশ্য সাধনেই ২০০০ সালে প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বলিয়া পরিচিত রাজধানীর খালসমূহ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার পরিবর্তে দুই সিটি করপোরেশনের উপর ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে উন্নতি যে আশাব্যঞ্জক ঘটে নাই– তাহা প্রতিবেদনেই সুস্পষ্ট। 

বিস্ময়কর হইল, ঢাকা ওয়াসার খাল ও ড্রেনেজ সার্কেলে প্রায় তিনশত জনবল নিযুক্ত থাকিলেও দুই সিটি করপোরেশনে বিশেষত খালগুলি রক্ষণাবেক্ষণে কোনো জনবল অদ্যাবধি নিয়োগ করা হয় নাই। এমনকি সিটি করপোরেশনে জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাও নাই। অন্যদিকে বর্তমান সরকার রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কালুনগর, হাজারীবাগ, শ্যামপুর ও জিরানি খালের যে আধুনিকায়নের উদ্যোগ লইয়াছিল, তাহাও ভ্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবনার (ডিপিপি) কারণে বন্ধ। তদুপরি ধোলাইখাল, মানিকনগর, হাতিরঝিল, কল্যাণপুর ও মিরপুর চটবাড়ি পাম্প স্টেশনের পানি নিষ্কাশনের অর্ধেক পাম্পই বিকল।

প্রতিবেদনে দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ হইতে উক্ত বিষয়ে যেই বক্তব্য প্রদান করা হইয়াছে, উহাতে আশ্বস্ত হইবার উপাদান নাই। ডিএসসিসির জলাবদ্ধতা নিরসন কার্য সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সমস্যাটির জন্য জনবল সংকটকে দায়ী করিয়া নিজেকে পরিত্রাণের পন্থা খুঁজিয়াছেন। ডিএনসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলিয়াছেন, যেই সকল স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হইতে পারে, সেইগুলি চিহ্নিত করিয়া ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চলমান। আমরা মনে করি, স্থানীয় সরকার বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ ব্যতীত এই অচলাবস্থা নিরসনের কোনো সম্ভাবনা নাই। জনস্বার্থে তাহারা বিষয়টি বিবেচনা করিবেন, এই আমাদের প্রত্যাশা।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ ন রসন

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষক–জনবল নিয়োগসহ ৪ দাবিতে ময়মনসিংহ আইএইচটি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

ময়মনসিংহের ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) শিক্ষক ও জনবল নিয়োগসহ চার দফা দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার সকালে পাঠ কার্যক্রম বন্ধ রেখে একাডেমিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি করা হয়।

নগরের মাসকান্দা এলাকায় আইএইচটির অবস্থান। কোনো জনবল নিয়োগ না হলেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজি বিভাগে ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে তিনটি ব্যাচে ১৫৬ শিক্ষার্থী আছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে শুরু থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান। গত ৪ মার্চ তিনি ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি হন। এরপর প্রশাসনিক দায়িত্বে আর কেউ নেই। তবে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষক সপ্তাহে দুই দিন করে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

ক্যাম্পাসে আছে একটি চারতলা একাডেমিক ভবন, একটি পুরুষ ও একটি নারী আবাসিক হল ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আবাসন। পুরো চত্বরে ঘাস বড় হয়ে জঙ্গলময় পরিস্থিতি। একাডেমিক ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে আছে প্যাকেটবন্দী কিছু জিনিসপত্র। নিচতলার একটি কক্ষকে শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেখানে কিছু চেয়ার ও একটি টেবিল রয়েছে। এ ছাড়া পুরো ভবনে কক্ষ থাকলেও নেই আসবাব ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগভিত্তিক কোনো শিক্ষক না থাকায় ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ প্রায় ছয় মাস। ছাত্রদের জন্য ব্যবহারিক কোনো যন্ত্রপাতি ও ক্লাসে পর্যাপ্ত আসবাব, যেমন চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ নেই। হলে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো আসবাব, বিছানা, চেয়ার ও টেবিল নেই; নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী। ২৫ জুন বেলা ১১টার দিকে ৯ লাখ টাকা বকেয়ার কারণে ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। পরে অবশ্য আবার সংযোগ দেওয়া হয়। এমন অবস্থায় শিক্ষাজীবন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকা শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন।

আজ পাঠ কার্যক্রম বর্জন করে সকাল ১০টা থেকে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের চারটি দাবির মধ্যে আছে, অবিলম্বে অধ্যক্ষ ও শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সব সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন ও মানসম্মত ক্যাম্পাস করতে হবে এবং ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আজ মানববন্ধনের পর স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে স্মারকলিপি ও পরে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মুফিদুল ইসলাম।

আরও পড়ুন১৫৬ শিক্ষার্থী থাকলেও নেই কোনো শিক্ষক–কর্মচারী ৮ ঘণ্টা আগে

শিক্ষার্থী দেবী দেবনাথ বলেন, ‘সরকারের আছে আমাদের প্রশ্ন, যদি শিক্ষার সুব্যবস্থা না দিতে পারে, তাহলে এত টাকা খরচ করে, এত সুন্দর ভবন কেন করা হলো। ভর্তি হওয়ার সময় অনেক টাকা খরচ করে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়েছি। আমরা যদি জানতাম, এখানে এসে ক্ষতি হবে, তাহলে ভর্তি হতাম না। রাষ্ট্র কেন আমাদের এত ক্ষতি করল? আমাদের সঙ্গে একপ্রকার দুর্নীতি করা হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মিছবাহ উদদীন আহমদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকসহ অন্যান্য জনবল কাঠামো অনুমোদন ও নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪৪তম বিসিএসের পদ বৃদ্ধির দাবিতে যমুনামুখী বিক্ষোভ, পুলিশের বাধা
  • শিক্ষক-কর্মচারী ছাড়া কেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
  • শিক্ষক–জনবল নিয়োগসহ ৪ দাবিতে ময়মনসিংহ আইএইচটি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
  • ১৫৬ শিক্ষার্থী থাকলেও নেই কোনো শিক্ষক–কর্মচারী
  • সাড়ে চার কোটি টাকার ভবন কী কাজে এল