সেনাপ্রধানের সঙ্গে তুরস্কের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সেক্রেটারির সাক্ষাৎ
Published: 8th, July 2025 GMT
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তুরস্কের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সেক্রেটারি প্রফেসর হালুক গরগুন।
মঙ্গলবার সেনা সদরে তিনি সেনাপ্রধানের সঙ্গে এই সাক্ষাৎ করেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সাক্ষাতের সময় পারস্পরিক কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি তারা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা করেন। তুরস্কের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সেক্রেটারি বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সম্ভাব্য কারিগরি ও কৌশলগত সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। সেনাপ্রধান তুরস্কের সহযোগিতায় দেশে বিভিন্ন আধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম তৈরি এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নয়নের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত রস ক র
এছাড়াও পড়ুন:
সাগরে নেমে ভেসে গেল চবির ৩ শিক্ষার্থী, একজনের লাশ উদ্ধার
কক্সবাজারের হিমছড়িতে মঙ্গলবার সকালে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে উত্তাল ঢেউয়ে ভেসে যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একেএম সাদমান রহমান সাবাব নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অন্য দু’জনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তারা সবাই ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
নিখোঁজ দু’জন হলেন আসিফ আহমেদ ও অরিত্র হাসান। তিনজনই শহীদ ফরহাদ হলের ৫০৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের সঙ্গে ছিলেন মো. রিয়াদ ও দেওয়ান ফারহান নামে আরও দুই বন্ধু। এ দুইজন সাগরে না নামায় বেঁচে গেছেন।
সাবাব রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী এলাকার বাসিন্দা কেএম আনিসুর রহমানের ছেলে। নিখোঁজ অরিত্র হাসানের বাড়ি বগুড়ার দক্ষিণ সনসনিয়া গ্রামে। আসিফ আহমেদের বাড়ি বগুড়া সদরের নারুলি দক্ষিণ এলাকায়। এ ঘটনায় চবি ক্যাম্পাসে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এদিকে সাবাবসহ তিনজনের পরিবারে চলছে আহাজারি।
চবি প্রতিনিধি জানান, সাবাবসহ পাঁচজন বান্দরবান যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে পাহাড়ে টানা বৃষ্টির কথা বিবেচনা করে সোমবার তারা কক্সবাজার যান। ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থী দেওয়ান ফারহান জানান, তাদের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয় সোমবার। এদিন রাত ৯টার দিকে তারা কক্সবাজার পৌঁছেন। হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম ভাঙে। তখনও বৃষ্টি হচ্ছিল। তারা সৈকতের দিকে যান। এক মাঝির ছাতার নিচে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। বৃষ্টি কমলে সাবাব বলেন, তিনি ভিজে গেছেন, গোসল করবেন। তার সঙ্গে যান আসিফ। কিছুক্ষণ পর অরিত্রও গোসল করতে যান। তারা তিনজনই সাঁতার জানতেন না।
সৈকতে তখন ঢেউয়ের গতি বাড়ছিল। পাশে থাকা স্থানীয় এক ব্যক্তি তাদের বারবার সাবধান করে বলছিলেন– এই জায়গায় কিছুদিন আগে একজন মারা গেছে। ফারহান আরও জানান, তিনি ও রিয়াদ একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই তিনজনকে ডাকছিলেন পাড়ে ফিরে আসতে। তারা ডাক শুনলেও সাড়া দিচ্ছিলেন না। হঠাৎ বিশাল ঢেউ এসে তিনজনকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। চোখের সামনে হারিয়ে গেলেন তারা। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় সাবাবের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি টিম কক্সবাজার গেছে। নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে সব ধরনের চেষ্টা চলছে।’
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, নিখোঁজ দু’জনকে উদ্ধারে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়ও তল্লাশি অভিযান চলছিল। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি সেফ লাইফগার্ডের কর্মীরা সৈকতে উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দু’জন বাঁধের ওপরে ছিলেন। তিনজন বাঁধের নিচে এসে গোসলে নামেন। এ সময় ঢেউয়ের তোড়ে সাগরে ভেসে যান তারা। সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় উদ্ধার তৎপরতায় সমস্যা হচ্ছে। হিমছড়ি সৈকতে গোসল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে একাধিক গুপ্তখালের সৃষ্টি হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টি দেখারও কেউ নেই। নিখোঁজ দু’জন গুপ্তখালে আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রামু থানার ওসি মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচার দ্বীপ এলাকার ক্যাম্প-ইন-কক্স রিসোর্টে পাঁচ বন্ধু উঠেছিলেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাদমানের লাশ সৈকতে ভেসে আসে।
সাগরে গোসলে নেমে গত মাসে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। সি সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে গোসলে নেমে কেউ নিখোঁজ হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য ২৬ জন লাইফগার্ড রয়েছেন। তবে হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানীসহ বাকি ১১৫ কিলোমিটার সৈকতে গোসলে নেমে কেউ নিখোঁজ হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো কেউ নেই।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, একমাত্র ছেলে অরিত্র হাসান নিখোঁজ হওয়ায় তাঁর মা পাগলপ্রায়। অরিত্রর বাবা-মা দু’জনই কক্সবাজার রওনা দিয়েছেন। এদিকে আসিফের বাবা-মা কক্সবাজার গেছেন। বাড়িতে দুই পরিবারের স্বজনের মধ্যে আজাহারি চলছে। অরিত্রর বাবা আমিনুল ইসলাম বগুড়া ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। দু’বছর আগে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে ঢাকায় দ্য নিউ এজ পত্রিকায় এডিটোরিয়াল বিভাগে কর্মরত। অরিত্রর মা বগুড়ায় থাকেন।
আসিফের মা কোরাইশা বেগম ২ বছর আগে বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন। আসিফরা দুই ভাই। বড় ভাই আবির আশরাফ একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। আসিফের বাবা রফিকুল ইসলাম বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী কলেজের শিক্ষক।