গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পার হচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৮০০ তরতাজা মানুষের শহীদের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটে, যাদের অনেকে নিচের তলার মানুষ। সরকার শহীদ ও আহতদের আর্থিক এবং অন্যান্য সহযোগিতা দিলেও এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা একাধিকবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের অনেকে এখনও হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। দু-একবার হাসপাতাল থেকে রাস্তায় নেমেও তারা আন্দোলন করেছেন।
এরই মধ্যে শহীদের পরিবারে দেওয়া আর্থিক সহযোগিতা নিয়েও বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো পরিবারে ভাঙন পর্যন্ত গড়িয়েছে। ৫ আগস্ট সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার সামনে গুলিতে নিহত হন তারেক আহমদ, যিনি ছিলেন তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। জুলাই ফাউন্ডেশন তারেকের মাকে ২০ ভাগ এবং স্ত্রীকে ৮০ ভাগ আর্থিক সহায়তা বণ্টন করে দেন। এরই মধ্যে তারেকের স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছেন। গতকাল সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ রকমই চিত্রই উঠে এসেছে। শুধু শহীদ তারেকের পরিবার নয়, বহু পরিবারে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে।
এই বিড়ম্বনা যে দেখা দেবে তা জানাই ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে বহুবিধ উদ্যোগ নেওয়াও সম্ভব ছিল। যেমন– আন্দোলনের মাঠে যারা শরিক ছিলেন, তাদের অনেকে মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত হয়েছেন। তা ছাড়া যেসব পরিবার তাদের সন্তান হারিয়েছে, তাদেরও অনেকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। যেসব পরিবার এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাদের সবার জন্য যেমন যথাযথ পুনর্বাসন কর্মসূচি গৃহীত হয়নি, তেমনি কোনো মানসিক চিকিৎসারও ব্যবস্থা হয়নি তাদের জন্য।
প্রাণের বিনিময়ে অর্থ দিয়ে কখনও কারও যথাযথ ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব নয়। ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দিলেও ঘাটতি পূরণ হয় না। বিশেষত কোনো মানসিক ধকল ভুক্তভোগী সারাজীবনই কাটিয়ে উঠতে পারে না। তার জন্য দরকার পড়ে যথাযথ মানসিক চিকিৎসা। গণঅভ্যুত্থানে সন্তান হারিয়ে যেসব পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে, তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি ছিল।
এর বাইরে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব এবং সরকারের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগী পরিবারের খোঁজ নেওয়াটাও দরকার। জুলাই ফাউন্ডেশন এ দায়িত্বটুকু যথাযথভাবে পালন করতে পারে। পরিবারগুলোর আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি স্থানীয় হাসপাতালে তাদের যুক্ত করে দেওয়া এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি। সরকার ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু তা যথেষ্ট মনে হচ্ছে না।
সরকারের বাইরে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে এমন যে কোনো রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের এই ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর খোঁজ রাখা নৈতিক দায়িত্ব। কারণ, তাদের রক্তের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যবিষয়ক যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোও শহীদের পরিবারের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারে। এর বাইরে ব্যক্তি ও প্রতিবেশী হিসেবে স্থানীয় লোকজনও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের পাশে থেকে কিছুটা হলেও শক্তি ও মনোবল জোগাতে পারে।
গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় দেশ নতুনভাবে গড়ে উঠবে বলে বিপুল মানুষের প্রত্যাশা ছিল। অভ্যুত্থানের পর যে ধরনের সরকার গঠিত হয়েছে, তাতে পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে জাতি বেরোতে পারবে বলে মনে হয় না। গত দু-এক দিনের ঘটনায় দেশের মানুষ আরও বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অথচ এক বছর আগে প্রায় সাড়ে ৮০০ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে, কিন্তু এক বছর না পেরোতেই দেশ পুরোনো পথে ধাবিত হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, রাজনৈতিক দল ও ক্ষমতার বলয় এ দেশের আমূল পরিবর্তন চায় না। তাদের এসব তৎপরতা শহীদের রক্তের সঙ্গে প্রতারণা। আশা করি, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনে মৌলিক কিছু বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হবে।
ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন র র জন ত ক র পর ব র পর ব র র সরক র র আর থ ক র জন য য সব প ত হয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
রূপগঞ্জে ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষে লিফলেট বিতরণ
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ কোর্টের পিপি এডভোকেট আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে (জাকির) উপজেলার মুড়াপাড়া বাজার এলাকায় এ লিফলেট বিতরণ করা হয়।
এসময় জেলা জজ কোর্টের পিপি এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে ৩১ দফা মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র। বিগত ১৭ বছর দেশের মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল।
মানুষের কথা বলার অধিকার ছিল না। ভোটের অধিকার ছিলনা। তাই ২৪’এর গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়েছিল। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চান তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন যুবদল নেতা আল আমিন, সৈয়দ গোলাপ, মোক্তার, কাজী শান্ত, সেচ্ছাসেবকদলের দেলোয়ার হোসেন প্রধান, আসাদ, মোশাররফ, ছাত্রদলের লাদেন হোসেন, শিপন, আবির, আপন প্রমুখ।