আওয়ামী লীগের দুই নেতা জামিন নিতে আসায় আদালত প্রাঙ্গণে শিবিরের বিক্ষোভ, ডিম নিক্ষেপ
Published: 23rd, July 2025 GMT
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন নিতে এসে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দুই নেতা। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল আমিন এবং সহসভাপতি ও স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ (স্বাচিপ) জেলা শাখার সভাপতি গোলাম রাব্বানী। আজ বুধবার দুপুরে পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে আদালত থেকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের লক্ষ্য করে ডিমও ছুড়ে মারা হয়।
আইনজীবী, প্রত্যক্ষদর্শী ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে সংঘটিত শিবির নেতা আসাদুল্লাহ তুহিন হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন পান রুহুল আমীন ও গোলাম রাব্বানী। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বুধবার তাঁরা জেলা দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালত ২৮ জুলাই জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেন।
এদিকে দুই আওয়ামী লীগ নেতার আসার খবর পেয়ে দুপুর ১২টা থেকে আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। সোয়া ১২টার দিকে দোতলায় জেলা জজ আদালতের বারান্দায় ‘ভুয়া ভুয়া’, ‘আসামিদের ফাঁসি চাই’, ‘শিবিরের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘জামায়াতের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দেওয়া হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রাব্বানীর এক সমর্থককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ সময় আদালত মুলতবি রেখে জেলা ও দায়রা জজ মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ঙ গণ অ য কশন আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ মেয়াদ এবং স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য: আলী রীয়াজ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর চলমান আলোচনার দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৯তম দিনে প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণ এবং একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং সংসদে কতটি আসনে সরাসরি ভোটে নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা নিয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।
আজ রোববার আলোচনা শেষে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে যেসব প্রস্তাব অনালোচিত রয়ে গেছে কিংবা আংশিক আলোচনা হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে।’
প্রথম আলোচ্য বিষয় ছিল সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি। আলী রীয়াজ জানান, এ বিষয়ে আজ চতুর্থ দিনের মতো আলোচনা হলেও এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, কেউ বলছেন বিদ্যমান চার মূলনীতির সঙ্গে নতুন প্রস্তাব যুক্ত করা হোক, কেউ বলছেন শুধু উল্লেখ থাকুক—ফলে কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য আরও সময় নিচ্ছে।
দ্বিতীয় আলোচ্য বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশ পুলিশ কমিশন’ গঠন। এ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের উদ্দেশ্য হবে পুলিশ বাহিনীর পেশাদারত্ব ও প্রভাবমুক্তভাবে দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তা, বাহিনীর সদস্যদের উত্থাপিত অভিযোগের নিষ্পত্তি এবং নাগরিকদের পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিষ্পত্তি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘এই কমিশন হবে স্বাধীন, ৯ সদস্যবিশিষ্ট এবং এর কাঠামো, দায়িত্ব ও এখতিয়ার আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। সদস্যদের মধ্যে কমপক্ষে দুজন নারী সদস্য থাকবেন।’
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, পুলিশের বেআইনি কার্যকলাপের ক্ষেত্রে শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশ, বাহিনীর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক বা প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষা, নাগরিক অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, বেআইনি চাপের বিরুদ্ধে তদন্ত ও ব্যবস্থা, পুলিশি আইন ও বিধির সংস্কার এবং প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা কমিশনের থাকবে। কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে।’
তৃতীয় আলোচ্য বিষয় ছিল প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদের সীমা। এ বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, একজন ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সর্বসম্মতভাবে একমত হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।
আজকের আলোচনার শেষ বিষয় ছিল সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব। এ বিষয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত আসন বহাল রেখে সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণে রাজনৈতিক দলগুলো যেন অন্তত এক–চতুর্থাংশ কিংবা এক–পঞ্চমাংশ আসনে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়।
আগামীকাল ধারাবাহিক আলোচনা চলবে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে হবে, এ জন্য ধারাবাহিক আলোচনা চলবে। আজকে রাত আটটা পর্যন্ত আমরা আলোচনা করেছি। আগামীকাল হয়তো আরও দীর্ঘ সময় আলোচনা করব।’
আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।