সুয়েইদা অঞ্চলের সাম্প্রতিক সংঘাত এবং এরপর সেখানে ইসরায়েলের সামরিক হস্তক্ষেপ আবারও সিরিয়াকে আঞ্চলিক রাজনীতির পাদপ্রদীপে নিয়ে এল।

গত বছরের ডিসেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের পতনের পর থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর একটি হলো, সিরিয়ার নতুন সরকার কি দেশজুড়ে বিদ্যমান গভীর আদর্শিক ও রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যেও নিজেদের ভিত্তি সংহত করতে পারবে?

সিরিয়ার চলমান রাজনৈতিক রূপান্তরকে বোঝার জন্য সুয়েইদা অঞ্চল ঘিরে চলা সংঘাত ও তাতে ইসরায়েলের সম্পৃক্ততা দেশটির নতুন সরকারের সমর্থক–ভিত্তির ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা বিশ্লেষণ করা জরুরি।

আরও পড়ুনইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করে যে হুমকির মুখে পড়ল ইসরায়েল০৪ জুলাই ২০২৫

দক্ষিণ সিরিয়ায় সাম্প্রতিক উত্তেজনা শুরু হয়েছিল দ্রুজ ও বেদুইন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে। সিরিয়ার সেনাবাহিনী শেষ পর্যন্ত তাতে হস্তক্ষেপ করে। এরপর ইসরায়েল দামেস্কে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। এমনকি সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কাছেও বোমা হামলার খবর পাওয়া যায়।

সুয়েইদা থেকে সিরীয় বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর দ্রুজ ও বেদুইন গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। অঞ্চলটিতে বিভাজন আরও ঘনীভূত করে এবং সাধারণ নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগের জন্ম হয়।

দ্য নিউ সিরিয়ান আর্মি এবং এর প্রধান মিত্র তুরস্ক কয়েক বছরের সংঘাতের মধ্য দিয়ে লড়াইয়ের বিশাল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। আসাদ সরকারের পতন এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব কমাতে তারা যৌথভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

দামেস্কে ইসরায়েলের হামলার ফলে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের বহু সমর্থক এখন বাইরের হুমকি মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। দ্রুজ গোষ্ঠীগুলো যদি শারা প্রশাসনে অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে সিরিয়ার জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী হবে। সিরিয়ার সামগ্রিক ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দিতে ভূমিকা রাখবে।

গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে গণহত্যা চালিয়ে যাওয়া ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের এই অগ্রগতি খুব নিবিড়ভাবে নজর রাখছিল। দ্রুজ সম্প্রদায়ের নেতাদের ব্যবহার করে সিরিয়াকে আরও অস্থিতিশীল করতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্য হলো সিরিয়ার নতুন প্রশাসন যাতে নিজেদের সংহত করতে না পারে, সেটা ঠেকানো। এটাকে ইসরায়েল হুমকি হিসেবে দেখে। বিশেষ করে যখন সিরিয়ার সরকার তুরস্কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে।

ইসরায়েলের দামেস্কে বিমান হামলার প্রতিক্রিয়া এবং রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের নিরিখে দেশটির জনজাতিগুলো কার্যত অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা প্রশাসনের সামনের সারির মুখ হিসেবে আবির্ভূত হলো। এই জনজাতিগুলো অভিনব কৌশল প্রয়োগ করছে। নগর এলাকায় আশ্রয় নেওয়া এবং আকাশ থেকে নজরদারি এড়াতে টায়ার পুড়িয়ে ধোঁয়া তৈরি করার মতো কৌশল নিচ্ছে তারা। এর ফলে তারা সুয়েইদা শহরের কেন্দ্র পর্যন্ত অগ্রসর হতে সক্ষম হয়।

ইসরায়েল এখনো তাদের ওপর কার্যকর কোনো হস্তক্ষেপ চালাতে পারেনি। কারণ, পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থান করা জনজাতিগুলোর ওপর বিমান হামলা চালানো কার্যকর কোনো পদ্ধতি নয়।

আরও পড়ুনসাইপ্রাসে কি ‘মিনি ইসরায়েল’ গড়ে উঠছে০৩ জুলাই ২০২৫

নিজেদের সমর্থকদের ভেতরকার বৈচিত্র্যময় বিভক্তি নিরসন করে কীভাবে একটি রাজনৈতিক সংহতি অর্জন করা সম্ভব, সেই প্রশ্নে সিরিয়ার নতুন প্রশাসনকে জর্জরিত হতে হচ্ছে।

এই চ্যালেঞ্জ এখন কুর্দিদের দ্য ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন পার্টি এবং সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস এবং দ্রুজ গোষ্টীগুলোকে একত্র করার কাজের বাইরের বিষয়। সিরিয়ার নতুন সরকারে অনেকগুলো মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক গোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত। সেটা রাজনৈতিক ও সামরিক—দুই দিক থেকেই সম্পৃক্ত।

ইসরায়েলের দামেস্ক লক্ষ্য করে চালানো হামলা সিরিয়ার নতুন সরকারেরর সব সমর্থক–গোষ্ঠীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে জনজাতিগুলোর মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও জোরালো হয়েছে। এটা বেদুইন গোষ্ঠীগুলোর সাম্প্রতিক অভিযানে পরিলক্ষিত হয়েছে। এটি বর্তমান শাসকদের সমর্থকদের অভ্যন্তরীণ সংহতি অর্জনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

আরও পড়ুনইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ চীন কেন দূরে বসে দেখেছে২৭ জুন ২০২৫

দ্রুজ সম্প্রদায়ের অনেক গোষ্ঠী দামেস্কের সঙ্গে মধ্যস্থতার পথ খুঁজছে। তাদের কিছু নেতা অস্ত্র সংবরণ ও সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির আলোকে দেখা যাচ্ছে, এসব নেতা ইসরায়েল–ঘনিষ্ঠ নেতাদের, (যেমন হিকমাত আল-হাজরি) ওপরও প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছেন। দ্রুজরা যদি সফলভাবে একীভূত হতে পারে, তাহলে কুর্দি বাহিনীগুলোর নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়াতে তা গভীর প্রভাব ফেলবে।

দামেস্কে ইসরায়েলের হামলার ফলে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের বহু সমর্থক এখন বাইরের হুমকি মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। দ্রুজ গোষ্ঠীগুলো যদি শারা প্রশাসনে অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে সিরিয়ার জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী হবে। সিরিয়ার সামগ্রিক ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দিতে ভূমিকা রাখবে।

এরসিন আকসয় সিরিয়ার ধর্ম, সমাজ ও রাজনীতি বিষয়ে গবেষক

মিডলইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স র য় র নত ন জনজ ত গ ল ইসর য় ল র র জন ত ক সরক র র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুতে এআই ব্যবহারে থাকবে শিথিলতা, তবে অপব্যবহার করা যাবে না: নির্বাচন কমিশন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে। তবে এর অপব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য জুলফিকার মাহমুদ।

রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫-এর আচরণবিধিবিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদের এক দাবির জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধির ৭–এর ঘ ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করা যাবে না। আমরা যারা ছোট সংগঠন, আমাদের তহবিল সীমিত। আমরা নির্বাচনী প্রচারের জন্য এআই ব্যবহার করে দু-এক মিনিটের ভিডিও বানিয়ে প্রচার কার্যক্রম চালাতে চাই। আমাদের দাবি, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যেন শিথিল নীতি গ্রহণ করে।’

মুরাদ আরও বলেন, বিগত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কিছু ত্রুটি লক্ষ করা গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত রাখার জন্য যতগুলো ভোটকক্ষ থাকবে, সব কটি সিসিটিভি ফুটেজের আওতায় রাখতে হবে। সবার জন্য সেই সিসিটিভি ফুটেজ উন্মুক্ত রাখতে হবে। ভোট গ্রহণকে স্বচ্ছ রাখার জন্য ভোটকক্ষের ভেতরে জাতীয় গণমাধ্যমকে সরাসরি সম্প্রচার করার অনুমতি দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জকসুর নির্বাচন কমিশনার জুলফিকার মাহমুদ বলেন, ‘এআই ব্যবহার করে বিভিন্নজনের চরিত্র হনন করা হয়, অপপ্রচার চালানো হয়। সেদিক থেকে চিন্তা করে এআই ব্যবহার নিষিদ্ধ রেখেছিলাম। তোমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এআই ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে প্রচার–প্রসারে, তবে অপব্যবহার করা যাবে না। আর সরাসরি সম্প্রচারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আলোচনা করে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ