ইসরায়েলের সিরিয়া আক্রমণ যেভাবে বুমেরাং হচ্ছে
Published: 23rd, July 2025 GMT
সুয়েইদা অঞ্চলের সাম্প্রতিক সংঘাত এবং এরপর সেখানে ইসরায়েলের সামরিক হস্তক্ষেপ আবারও সিরিয়াকে আঞ্চলিক রাজনীতির পাদপ্রদীপে নিয়ে এল।
গত বছরের ডিসেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের পতনের পর থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর একটি হলো, সিরিয়ার নতুন সরকার কি দেশজুড়ে বিদ্যমান গভীর আদর্শিক ও রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যেও নিজেদের ভিত্তি সংহত করতে পারবে?
সিরিয়ার চলমান রাজনৈতিক রূপান্তরকে বোঝার জন্য সুয়েইদা অঞ্চল ঘিরে চলা সংঘাত ও তাতে ইসরায়েলের সম্পৃক্ততা দেশটির নতুন সরকারের সমর্থক–ভিত্তির ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা বিশ্লেষণ করা জরুরি।
আরও পড়ুনইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করে যে হুমকির মুখে পড়ল ইসরায়েল০৪ জুলাই ২০২৫দক্ষিণ সিরিয়ায় সাম্প্রতিক উত্তেজনা শুরু হয়েছিল দ্রুজ ও বেদুইন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে। সিরিয়ার সেনাবাহিনী শেষ পর্যন্ত তাতে হস্তক্ষেপ করে। এরপর ইসরায়েল দামেস্কে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। এমনকি সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কাছেও বোমা হামলার খবর পাওয়া যায়।
সুয়েইদা থেকে সিরীয় বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর দ্রুজ ও বেদুইন গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। অঞ্চলটিতে বিভাজন আরও ঘনীভূত করে এবং সাধারণ নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগের জন্ম হয়।
দ্য নিউ সিরিয়ান আর্মি এবং এর প্রধান মিত্র তুরস্ক কয়েক বছরের সংঘাতের মধ্য দিয়ে লড়াইয়ের বিশাল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। আসাদ সরকারের পতন এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব কমাতে তারা যৌথভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
দামেস্কে ইসরায়েলের হামলার ফলে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের বহু সমর্থক এখন বাইরের হুমকি মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। দ্রুজ গোষ্ঠীগুলো যদি শারা প্রশাসনে অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে সিরিয়ার জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী হবে। সিরিয়ার সামগ্রিক ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দিতে ভূমিকা রাখবে।গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে গণহত্যা চালিয়ে যাওয়া ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের এই অগ্রগতি খুব নিবিড়ভাবে নজর রাখছিল। দ্রুজ সম্প্রদায়ের নেতাদের ব্যবহার করে সিরিয়াকে আরও অস্থিতিশীল করতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্য হলো সিরিয়ার নতুন প্রশাসন যাতে নিজেদের সংহত করতে না পারে, সেটা ঠেকানো। এটাকে ইসরায়েল হুমকি হিসেবে দেখে। বিশেষ করে যখন সিরিয়ার সরকার তুরস্কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে।
ইসরায়েলের দামেস্কে বিমান হামলার প্রতিক্রিয়া এবং রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের নিরিখে দেশটির জনজাতিগুলো কার্যত অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা প্রশাসনের সামনের সারির মুখ হিসেবে আবির্ভূত হলো। এই জনজাতিগুলো অভিনব কৌশল প্রয়োগ করছে। নগর এলাকায় আশ্রয় নেওয়া এবং আকাশ থেকে নজরদারি এড়াতে টায়ার পুড়িয়ে ধোঁয়া তৈরি করার মতো কৌশল নিচ্ছে তারা। এর ফলে তারা সুয়েইদা শহরের কেন্দ্র পর্যন্ত অগ্রসর হতে সক্ষম হয়।
ইসরায়েল এখনো তাদের ওপর কার্যকর কোনো হস্তক্ষেপ চালাতে পারেনি। কারণ, পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থান করা জনজাতিগুলোর ওপর বিমান হামলা চালানো কার্যকর কোনো পদ্ধতি নয়।
আরও পড়ুনসাইপ্রাসে কি ‘মিনি ইসরায়েল’ গড়ে উঠছে০৩ জুলাই ২০২৫নিজেদের সমর্থকদের ভেতরকার বৈচিত্র্যময় বিভক্তি নিরসন করে কীভাবে একটি রাজনৈতিক সংহতি অর্জন করা সম্ভব, সেই প্রশ্নে সিরিয়ার নতুন প্রশাসনকে জর্জরিত হতে হচ্ছে।
এই চ্যালেঞ্জ এখন কুর্দিদের দ্য ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন পার্টি এবং সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস এবং দ্রুজ গোষ্টীগুলোকে একত্র করার কাজের বাইরের বিষয়। সিরিয়ার নতুন সরকারে অনেকগুলো মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক গোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত। সেটা রাজনৈতিক ও সামরিক—দুই দিক থেকেই সম্পৃক্ত।
ইসরায়েলের দামেস্ক লক্ষ্য করে চালানো হামলা সিরিয়ার নতুন সরকারেরর সব সমর্থক–গোষ্ঠীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে জনজাতিগুলোর মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও জোরালো হয়েছে। এটা বেদুইন গোষ্ঠীগুলোর সাম্প্রতিক অভিযানে পরিলক্ষিত হয়েছে। এটি বর্তমান শাসকদের সমর্থকদের অভ্যন্তরীণ সংহতি অর্জনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
আরও পড়ুনইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ চীন কেন দূরে বসে দেখেছে২৭ জুন ২০২৫দ্রুজ সম্প্রদায়ের অনেক গোষ্ঠী দামেস্কের সঙ্গে মধ্যস্থতার পথ খুঁজছে। তাদের কিছু নেতা অস্ত্র সংবরণ ও সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির আলোকে দেখা যাচ্ছে, এসব নেতা ইসরায়েল–ঘনিষ্ঠ নেতাদের, (যেমন হিকমাত আল-হাজরি) ওপরও প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছেন। দ্রুজরা যদি সফলভাবে একীভূত হতে পারে, তাহলে কুর্দি বাহিনীগুলোর নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়াতে তা গভীর প্রভাব ফেলবে।
দামেস্কে ইসরায়েলের হামলার ফলে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের বহু সমর্থক এখন বাইরের হুমকি মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। দ্রুজ গোষ্ঠীগুলো যদি শারা প্রশাসনে অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে সিরিয়ার জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী হবে। সিরিয়ার সামগ্রিক ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দিতে ভূমিকা রাখবে।
এরসিন আকসয় সিরিয়ার ধর্ম, সমাজ ও রাজনীতি বিষয়ে গবেষক
মিডলইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স র য় র নত ন জনজ ত গ ল ইসর য় ল র র জন ত ক সরক র র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুল
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রুল দেন। একই সঙ্গে যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আরও পড়ুননতুন ব্যবস্থাপনায় নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনা শুরু০৭ জুলাই ২০২৫নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন রিটটি করেন। রিটে নৌসচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়।
‘নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামে গত ২৬ এপ্রিল প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ প্রতিবেদনসহ এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এনসিটি পরিচালনায় ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করার নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়।
আগের ধারাবাহিকতায় ৯ জুলাই রিটের ওপর শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত ২৩ জুলাই আদেশের জন্য দিন রাখেন। ধার্য তারিখে আদালত আদেশের জন্য ৩০ জুলাই দিন রাখেন। এ অনুসারে আজ বিষয়টি আদেশের জন্য আদালতের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আজ মধ্যাহ্নবিরতির পর আদালত আদেশ দেন। আদালত বলেন, শুধু রুল দেওয়া হলো।
আদেশের সময় রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আহসানুল করিম এবং আইনজীবী কায়সার কামাল ও আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহাদ্দেস-উল-ইসলাম।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার নতুন দায়িত্ব নিয়েছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৬ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ দায়িত্ব নেয় জাহাজ মেরামতের এ প্রতিষ্ঠান। প্রথমবারের মতো বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত হলো চিটাগং ড্রাইডক।
চট্টগ্রাম বন্দরের বৃহৎ এই টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে। টার্মিনালটি নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংযোজনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের সিংহভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন হয়।