মার্কিন সতর্কবার্তা সত্ত্বেও রাশিয়ায় বিস্ফোরক পাঠিয়েছে ভারতীয় কোম্পানি
Published: 24th, July 2025 GMT
ডিসেম্বরে রাশিয়ায় সামরিক ব্যবহারের জন্য ১৪ লাখ ডলার মূল্যের বিস্ফোরক যৌগ পাঠিয়েছিল ভারত। রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সমর্থনকারী যেকোনো সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মার্কিন হুমকি সত্ত্বেও ভারত এই বিস্ফোরক পাঠিয়েছিল। বৃহস্পতিবার রয়টার্স এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এইচএমএক্স বা অক্টোজেন নামে পরিচিত এই যৌগটি গ্রহণকারী রাশিয়ান কোম্পানিগুলির মধ্যে একটি হল বিস্ফোরক প্রস্তুতকারক প্রমিসিনটেজ। এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সম্পর্ক রয়েছে বলে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ-এর একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউক্রেন এপ্রিল মাসে প্রমিসিনটেজ-এর মালিকানাধীন একটি কারখানার বিরুদ্ধে ড্রোন আক্রমণ শুরু করে। পেন্টাগনের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিগত তথ্য কেন্দ্র এবং সম্পর্কিত প্রতিরক্ষা গবেষণা কর্মসূচি অনুসারে, ক্ষেপণাস্ত্র ও টর্পেডো ওয়ারহেড, রকেট মোটর, বিস্ফোরক প্রজেক্টাইল এবং উন্নত সামরিক ব্যবস্থার জন্য প্লাস্টিক-বন্ডেড বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এইচএমএক্স।
মার্কিন সরকার এইচএমএক্স- কে ‘রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টার জন্য গুরুত্বপূর্ণ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে এবং মস্কোর কাছে এই পদার্থ বিক্রির সুবিধা প্রদানের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করেছে।
চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে ভারত। তবে মস্কোর সাথে তার দীর্ঘস্থায়ী সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ত্যাগ করেনি নয়াদিল্লি। পশ্চিমা দেশগুলো নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতিকে পঙ্গু করার চেষ্টা করলেও রাশিয়ার সাথে ভারতের বাণিজ্য - বিশেষ করে রাশিয়ান তেল ক্রয় শক্তিশালী রয়ে গেছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “ভারত পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা বিবেচনা করে এবং তার শক্তিশালী আইনি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোর ভিত্তিতে দ্বৈত-ব্যবহারের পণ্য রপ্তানি করে আসছে, যার মধ্যে এই ধরনের রপ্তানির প্রাসঙ্গিক মানদণ্ডের একটি সামগ্রিক মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর রয়টার্সের চিহ্নিত নির্দিষ্ট চালান সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা বারবার ভারতকে জানিয়েছে যে সামরিক-সম্পর্কিত ব্যবসা করা কোম্পানিগুলো নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে রয়েছে।
একজন মুখপাত্র বলেছেন, “ভারত একটি কৌশলগত অংশীদার যার সাথে আমরা পূর্ণ এবং খোলামেলা আলোচনা করি, যার মধ্যে রাশিয়ার সাথে ভারতের সম্পর্কও রয়েছে। আমরা ভারতসহ আমাদের সব অংশীদারদের বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছি যে, রাশিয়ার সামরিক শিল্প ঘাঁটির সাথে ব্যবসা করা যেকোনো বিদেশী কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে রয়েছে।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব স ফ রক প
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫