একসঙ্গে জন্মানো চার ভাই পালন করল ১৫তম জন্মদিন
Published: 26th, July 2025 GMT
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্সনগর গ্রামের গৃহবধূ সেলিনা আরিফের কোলজুড়ে ২০১০ সালের ২৫ জুলাই একসঙ্গে জন্ম নেয় চার ছেলে। তারা এখন কিশোর। গতকাল শুক্রবার ছিল তাদের ১৫তম জন্মদিন। পারিবারিকভাবে জন্মদিন উদ্যাপন করা হয়। সেলিনা ছেলেদের নিয়ে কেক কাটেন। ছেলেদের সবাই স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, বাহরাইনপ্রবাসী আরিফুর রহমানের স্ত্রী সেলিনা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার সময় শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসকেরা প্রথমে ধারণা করেছিলেন, তাঁর পেটে টিউমার হয়েছে। তবে সেলিনার মনে বিশ্বাস ছিল, তিনি মা হতে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত সেই বিশ্বাস সত্যি হয়। একসঙ্গে চার ছেলের মা হন তিনি। তাদের নাম রাখা হয় চার খলিফার নামে—আবুবকর ফারদিন, ওমর ফারুক আদিয়াত, ওসমান গনি আরিয়ান ও আলী আরেফিন শায়ান।
এই চার কিশোর বর্তমানে বক্সনগর উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ছে। আবুবকর ফারদিন নবম শ্রেণিতে, ওমর ফারুক আদিয়াত ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ওসমান গনি আরিয়ান ও আলী আরেফিন শায়ান সপ্তম শ্রেণিতে। তাদের মধ্যে ফারদিন শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। আদিয়াত প্রায়ই অসুস্থ থাকে, আর আরিয়ান ও শায়ান বেশ চঞ্চল; তাই তারা পড়াশোনায় কিছুটা পিছিয়ে আছে।
গৃহবধূ সেলিনা আরিফ বলেন, ‘দেখতে দেখতে ওরা বড় হয়ে উঠেছে। জন্মদিন এলেই আমার দায়িত্ব হয়ে পড়ে ওদের খুশি করা। তাই একটা কেক এনে রাতে ছেলেদের সারপ্রাইজ দিলাম। দুইটা খুব চঞ্চল, সারা দিন খেলাধুলা করে। তাই কেক কাটতে কাটতে রাত ১০টা বেজে গেছে। ওদের নিয়ে পথচলা ছিল খুব কঠিন। বাবার বাড়ির পরিবারের সবার সহযোগিতা ছাড়া ওদের বড় করতে পারতাম কি না সন্দেহ। ব্যয়বহুল ছিল ওদের লালন–পালন করা। তবে আল্লাহর রহমতে ওদের বাবা বিদেশে ভালো থাকায় আর্থিকভাবে কষ্ট হয়নি।’
চার ছেলের মধ্যে বড় ফারদিন বলে, ‘আদিয়াতকে নিয়ে সমস্যা নেই। শায়ান ও আরিয়ানকে নিয়ে মা অনেক চিন্তায় থাকেন। ওরা দিনভর ঘোরে আর মা চিন্তা করে। তবে আমরা চার ভাই মিলেমিশে ভালো আছি। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।’
সেলিনার ভাই ইমরান হোসেন বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে ওরা এখনো বেঁচে আছে। জন্মের সময়ই ডাক্তার বলে দিয়েছিল, হয়তো মাকে অথবা সন্তানদের বাঁচাতে পারব। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় মা ও সন্তানেরা সবাই বেঁচে যায়। শুক্রবার পারিবারিকভাবে ওদের জন্মদিন পালন করা হলো।’
সেলিনার বড় ভাই চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে আলট্রাসনো প্রতিবেদনে একটি ক্লিনিক থেকে তাঁর পেটে টিউমার হয়েছে বলা হয়। পরে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) সহযোগী অধ্যাপক জেসমিন বানুর সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসা করাই। তাঁর নিবিড় পর্যবেক্ষণে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথিবীর আলো দেখে চার যমজ শিশু।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর য় ন
এছাড়াও পড়ুন:
একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল
একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদা আক্তারের ছয় সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই মারা গেল। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জন্ম নেওয়ার পরপরই একটি শিশু মারা যায়। আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে আরও চার নবজাতকের মৃত্যু হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কর্মকর্তা মো. ফারুক প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার খাজুরিয়া গ্রামের মোকসেদা আক্তার রোববার সকালে একসঙ্গে এই ছয় সন্তানের জন্ম দেন। তাঁর স্বামী মো. হানিফ কাতারপ্রবাসী। মোকসেদা আক্তারের ননদ লিপি বেগম আজ প্রথম আলোকে বলেন, বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকের অবস্থাও বেশি ভালো নয়।
ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মোকসেদা তিন ছেলে ও তিন মেয়েসন্তান প্রসব করেন। সন্তানেরা ২৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্ম নেয়। জন্মের সময় প্রত্যেকের ওজন ছিল ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামে মধ্যে। এ কারণে তাদের সবার অবস্থাই ছিল সংকটজনক।
আরও পড়ুনঢাকা মেডিকেলে একসঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম, নবজাতকদের অবস্থা সংকটাপন্ন২২ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে আইসিইউতে পর্যাপ্ত শয্যা খালি না থাকায় তিনজনকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকটি বেসরকারি হাসপাতালে আছে।