পুলিশের বিরুদ্ধে সিজুকে হত্যার অভিযোগ, এসপির কার্যালয় ঘেরাও
Published: 26th, July 2025 GMT
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় পুকুর থেকে সিজু মিয়া (২৫) নামে যুবকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যার বিচার দাবিতে জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয় ঘেরাও করেছে স্থানীয়রা। তারা এ হত্যার জন্য পুলিশকে দায়ী করে তাদের বিচার দাবি করেন।
শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে গাইবান্ধা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন শত শত এলাকাবাসী। পরে তারা বৃষ্টি অপেক্ষা করে পুলিশ সুপারের কার্যালয় অবরোধ করে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাঘাটা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরের কচুরিপানার মধ্য থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সিজু মিয়ার লাশ উদ্ধার করে। নিহত সিজু মিয়া (৩০) গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারি ইউনিয়নের বাগুরিয়া গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে এবং ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন।
আরো পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে স্বামীর নির্যাতনে গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ
জীবননগরে দিনমজুরকে গলাকেটে হত্যা
পুলিশ দাবি করছে, গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাত ১০টার দিকে সাঘাটা থানায় ঢুকে অস্ত্র ছিনতাই ও পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মহসিন আলীকে ছুরিকাঘাত করে পুকুরে ঝাঁপ দেয় সিজু মিয়া। এরপর থেকে নিখোঁজ থাকে।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন নিহত সিজুর মা মোছা.
বক্তারা বলেন, ‘‘সিজুকে পুলিশ থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। থানায় থেকে পালানোর সময় পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে তিনি মারা যাননি। যার বাড়ি নদীর পাশে তিনি সাঁতার জানেন না, তা হয় না।’’ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্য হত্যায় অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার ও সাঘাটা থানার ওসিকে অব্যাহতি না দিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
সিজু মিয়ার মা রিক্তা বেগম বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে সিজু মিয়া একটি পুরাতন অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনেছিল। সাঘাটা থানা থেকে এসআই রাকিব ফোনটি চোরাই বলে জানান। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সিজু স্থানীয় ইউপি সদস্য রমজান আলীর উপস্থিতিতে ফোনটি পুলিশকে দিয়ে দেয়। তারপরও পুলিশ পরিচয়ে দিয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় সিজুকে সাঘাটা থানায় দেখা করতে বলে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে পুলিশ হত্যা করে পুকুরে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার নাটক সাজিয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিয়েছে। সকালে পুকুর থেকে লাশ উদ্ধারের ঘটনাও নাটক ছিল।’’ তিনি ছেলের হত্যার বিচার দাবি করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রমজান আলী বলেন, ‘‘এ হত্যা নিঃসন্দেহে পুলিশ করেছে। তার প্রমাণ, সিজুর শরীর ১২ ঘণ্টা পানি নিচে ছিল। তার পকেট থেকে গাইবান্ধা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের স্পৃষ্ট প্রবেশপত্র কীভাবে এলো? পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর তার পকেট থেকে বের করল, সেটি একটুও ভিজল না, সেটা কীভাবে হয়?’’ তিনি হত্যার সঠিক বিচার দাবি করেন।
গাইবান্ধা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফেরদাউস সরকার রুম্মান বলেন, ‘‘সিজু নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির ছেলে। তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যার ভিডিও আমাদের কাছে আছে। আমরা এ হত্যার বিচার দাবি করছি।’’
গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে সিজু হত্যার সঠিক তদন্ত করে বিচারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুদ্ধ জনতা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে থেকে সরে যায়।
ঢাকা/লুমেন/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য হত য র
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫