গাজীপুরে ১০ দফা দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ, কাঁদানে গ্যাসের শেলে ছত্রভঙ্গ শ্রমিকেরা
Published: 27th, July 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুরে ১০ দফা দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একটি সিরামিক কারখানার শ্রমিকেরা। এ সময় পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছোড়া হলে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকায় এ বিক্ষোভ শুরু হয়। সেখানে অবস্থিত আর কে সিরামিক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক সড়ক অবরোধ করেন। এ ঘটনায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সকাল আটটার দিকে শ্রমিকেরা ছত্রভঙ্গ হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে—এ আশঙ্কায় ঘটনাস্থলে মোতায়েন রাখা হয়েছে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ, শ্রীপুর থানা-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।
এ সম্পর্কে শিল্প পুলিশের শ্রীপুর সার্কেলের ইনচার্জ আবদুল লতিফ বলেন, সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকেরা মারমুখী হলে তাঁদের সরাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন ও শ্রমিকদের কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ইনক্রিমেন্টের টাকা বেতনের সঙ্গে একসঙ্গে পরিশোধ, শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ, প্রতিবছর বাড়তি বেতন, আন্দোলনকালীন দিনগুলো হাজিরা হিসেবে গণ্য করা, নতুন ও পুরোনো শ্রমিকদের জন্য সঠিক বেতনকাঠামো প্রণয়ন, সিভিল কর্মীদের ন্যূনতম হাজিরা ৫০০ টাকা নির্ধারণ, মাসিক হাজিরা বোনাস ১ হাজার ৫০০ টাকা করা, আন্দোলনের পর কাউকে চাকরিচ্যুত না করা, বয়স্ক ভাতাসহ পুরোনো সব সুবিধা চালু এবং কোম্পানির বিভিন্ন পর্যায়ের ভারতীয় কর্মকর্তাদের অপসারণ—এ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকেরা।
আন্দোলনরত শ্রমিকেরা জানান, তাঁদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ইনক্রিমেন্টসহ অন্যান্য টাকা সময়মতো পরিশোধ করছে না কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেও কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, শুরুতে পুলিশ শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর শ্রমিকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। পরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও শ্রমিকেরা কারখানার আশপাশে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করছিলেন।
আর কে সিরামিক কারখানার মানবসম্পদ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তবে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই শ্রমিকেরা আন্দোলনে নেমেছেন।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দেশজুড়ে বৃষ্টি ও তাপমাত্রা কমার পূর্বাভাস
দেশের একাধিক এলাকায় ৪৮ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ পূর্বাভাস ছিল গত শুক্রবারের। গত মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড় মোন্থা আছড়ে পড়ে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলে। আবহাওয়ার বার্তা ছিল, মোন্থার প্রভাবেই হবে এ বৃষ্টি। শুক্রবার উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলের একাধিক জেলায়ও বৃষ্টি হয় সেদিন। আর গতকাল শনিবার বৃষ্টি শুধু উত্তরের জেলাগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। রাজধানীসহ দেশের নানা স্থানে অনেকটা বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ রোববার বৃষ্টি অনেকটাই কমে যেতে পারে। সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু এলাকায় বৃষ্টি থাকতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোন্থা এভাবে বৃষ্টি দিয়েই নিঃশেষ হলো বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। তাঁরা বলছেন, মোন্থা বিদায় নিলেও আগামী দুই দিনের মধ্যে সাগরে আরেকটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। আর তাতে আগামী বুধবার থেকে আবার বৃষ্টি হতে পারে। তবে তার পরিমাণ খুব বেশি না-ও হতে পারে।
বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগ বাদ দিয়ে গতকাল দেশের প্রায় সর্বত্র বৃষ্টি হয়েছে। মোন্থা মঙ্গলবারই প্রবল থেকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এরপর তা নিম্নচাপ আকারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দিকে আসতে থাকে। এর প্রভাবে গত দুই দিন দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে গতকাল সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় ১৬৬ মিলিমিটার।
যখন কোনো এলাকায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, তখন তাকে ভারী বৃষ্টি বলে। এর চেয়ে বেশি হলে তা হয় অতি ভারী। শুধু তাড়াশ নয়, উত্তরের একাধিক স্থানে গতকাল ভারী বৃষ্টি হয়। এর মধ্যে বগুড়ায় ৯৪, নওগাঁয় ৮৯ ও দিনাজপুরে ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
ময়মনসিংহে গতকাল ৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। রাজধানীতে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মোন্থা সৃষ্টি হওয়ার কাছাকাছি সময়ে আরব সাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। তাতে মোন্থার গতিপথ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলমুখী হয়। এটি প্রচুর বৃষ্টি ঝরিয়েছে। আর এভাবেই নিঃশেষ হয়ে গেছে। এর সামান্য রেশ আজ দেখা যেতে পারে। তবে শনিবার রাতেই বেশি বৃষ্টি হবে।
রাজধানীতে শনিবার দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়