কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থে তড়িঘড়ি করে ড্যাপ করা হয়েছে, বাতিল করতে হবে: স্থপতি ইনস্টিটিউট
Published: 27th, July 2025 GMT
কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থে তড়িঘড়ি করে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপ) রচনা করা হয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট। পরবর্তী সময়ে গণশুনানি উপেক্ষা করে এর প্রহসনমূলক সংশোধন করা হয়েছে বলেও মনে করে সংগঠনটি। তারা গেজেটকৃত ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের শিরোনাম—‘জনবৈরী ড্যাপ, বৈষম্যমূলক পরিকল্পনা: নিম্ন নাগরিক বাসযোগ্যতা ও বিপন্ন পরিবেশ’।
স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক প্রণীত ড্যাপ রাজধানী ঢাকার নাগরিক বাসযোগ্যতা ও পরিবেশ বিপন্ন করে তুলেছে। এর প্রমাণ, ড্যাপ প্রণয়নের পরে গত চার বছরে বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ১৩৮ থেকে ১৭১তম স্থানে নেমে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ উর রশীদ, সম্পাদক (পেশা) এম ওয়াহিদ আসিফ, সহসভাপতি (জাতীয় বিষয়াদি) নওয়াজীশ মাহবুব, সহসভাপতি (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক) খান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আইনি ব্যত্যয়, প্রকাশিত তথ্যের অপর্যাপ্ততা, প্রণয়নপ্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা, পরিবেশ বিপর্যয় (কৃষিজমি বিনষ্ট ও প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট), ভবন নির্মাণের অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বৃদ্ধি, বৈষম্যমূলক নীতির প্রয়োগ, জনভোগান্তি বৃদ্ধিসহ অসংখ্য অসংগতিনির্ভর এই ড্যাপ (২০২২-৩৫) বর্তমানে ভবন নির্মাণশিল্পে স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে।
সংগঠনটির নেতারা বলেন, ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ গেজেটেড হওয়ার আগপর্যন্ত ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ সম্পূর্ণরূপে কার্যকর ছিল। সেই নিয়মে ঢাকা শহরের সব স্থানে রাস্তার প্রশস্থতার ওপর ভিত্তি করে একই পরিমাণ ক্ষেত্রফলের ভবন নির্মাণ করা যেত। ড্যাপ কার্যকর হওয়ার পর থেকে নাগরিক সুবিধার ওপর ভিত্তি করে ঢাকা শহরের ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারার মতো অভিজাত এলাকাকে আরও অভিজাত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে রায়েরবাজার, বাড্ডা, পুরান ঢাকার মতো এলাকাকে মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা বলেন, আইন হবে এমন, যা জনগণ মানতে উৎসাহিত হবে। কিন্তু ড্যাপ এমন আইন, যা জনগণ ব্যত্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। রাজউক তদারকি করতে পারে না, এর প্রমাণ হলো বছিলা। মানুষের প্রয়োজন আবাসস্থল। আইন কঠিন হলে জনগণ আইনের তোয়াক্কা না করে ভবন নির্মাণ করবে। ধনীদের জন্য বেশি সুযোগ, আর গরিবের জন্য কঠিনতর আইন, মধ্যবিত্তের কোনো জায়গা থাকবে না। এভাবে জনবৈরী আইন প্রয়োগ করা হয়েছে ড্যাপে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা সারা বাংলাদেশের সমস্যা। শুধু ঢাকা শহরকে বাঁচাতে গিয়ে জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণের নামে এলাকাভেদে জনঘনত্ব নির্দিষ্ট করা হয়েছে। যেমন ড্যাপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে পুরান ঢাকার জনঘনত্ব ৪৫০ ছিল। কিন্তু ড্যাপ ২০২২-৩৫ প্রস্তাবনায় ২০২৫ সালে এই জনঘনত্ব ৩৬৭ জনের কথা বলা হয়েছে। তাহলে ২০২৫ সালে এসে ৮৩ জন কোথায় যাবে? ঢাকার জনগণ কি রোহিঙ্গাদের মতো বাস্তুহারা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা। এগুলো হলো: বর্তমান স্ট্রাকচার প্ল্যান ও তিন ধাপভিত্তিক মহাপরিকল্পনার সবশেষ তৃতীয় ধাপের গেজেটকৃত ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) বাতিল করতে হবে। রাজউক ও গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (জিডিএ) আইনের সঠিক ও যৌক্তিক বাস্তবায়নের জন্য ডিজিটাল ও সহজলভ্য ভূমি ব্যবহার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। প্রাকৃতিক, মানবসৃষ্টসহ সব দুর্যোগের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দুর্যোগসহনীয় একটি অংশগ্রহণমূলক ও হালনাগাদ মৌজাভিত্তিক ড্যাপ তৈরি। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর তা পর্যালোচনা ও পরিচালনা করা। বৃহত্তর ঢাকা মহানগরীসহ পাশের গাজীপুর, সাভার, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এলাকা নিয়ে অবিলম্বে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট সব দুর্যোগ সহনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক, পরিবেশবান্ধব, জনবান্ধব ও বৈষম্যহীন আধুনিক-আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তিন ধাপভিত্তিক (স্ট্রাকচার প্ল্যান, আরবান এরিয়া প্ল্যান ও ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান) ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এই পরিকল্পনায় সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), শূন্য নির্গমনসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির যথাযথ সংযোজন নিশ্চিত করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা বহুদিন ধরে রাজউকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো প্রতিফলন পাননি। তাই জনগণের দাবি ও অধিকার তুলে ধরতে আজ সংবাদ সম্মেলন করছেন। জনদুর্ভোগ এড়াতে, ভবিষ্যতের ঢাকা বাঁচাতে, বাসযোগ্য নগর গড়তে ও নির্মাণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত লাখো মানুষের স্বার্থ রক্ষায় তাঁদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুনড্যাপ কেন আবাসনের জন্য চাপ১৪ অক্টোবর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভবন ন র ম ণ পর ব শ র জন য র জউক স থপত
এছাড়াও পড়ুন:
লাঙ্গল মার্কার কেউ বিএনপির সদস্য হতে পারবেন না : টিপু
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেছেন, বন্দরে যারা লাঙ্গল মার্কায় নির্বাচন করে বা জাতীয় পার্টির হয়ে কাজ করেছেন, তারা বিএনপির সদস্য হতে পারবেন না।
এইসব লোক খুনি সেলিম ওসমানের দালালি করেছে। তারা মুখে মুখে বিএনপির কথা বলে, অথচ কাজ করে জাতীয় পার্টির জন্য। এদের কোনভাবেই বিএনপির সদস্যপদ দেওয়া যাবে না।
রবিবার (২৭ জুলাই) বিকেল ৪টায় বন্দর উপজেলার তিনগাঁও এলাকায় বন্দর ইউনিয়ন বিএনপির প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য ফরম বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ সবসময় গণতন্ত্রের কথা বলেছে কিন্তু এই চেতনাকে ধারণ করে ৭১ থেকে ২৪ পর্যন্ত তারা এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অসম্মানিত করেছে, লন্ডিত করেছে, পদদলিত করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিক্রি করে, লুটপাট চুরি ডাকাতি করে। এদেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার বিদেশে করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ১৬টি বছর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, অন্যায় অত্যাচার নির্যাতন করে জনগণের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। আর আমরা যেন বিএনপির, ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিকদল সব মিলিয়ে ১১টি অঙ্গ সংগঠন আমরা যেন জনগণের মুখের হাসি কেড়ে না নেই। এবং আমরা যেন জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে জনগণের যেকোনো সমস্যার সমাধানে সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।
বন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রাজু আহম্মেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানার সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বিশেষ অতিথি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এড. জাকির হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক এড. সরকার হুমায়ূন কবির, যুগ্ম আহ্বায়ক ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ, সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ লিটন, সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা, বন্দর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক রানা, শহীদ যুবদল নেতা আবুল হোসেন স্বজনের পিতা জাকির হোসেন।
এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাহিন আহমেদ, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সম্রাট হাসান সুজন, বন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি বাবুল মিয়া, সহ- সভাপতি কবির হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন রাজিব,বন্দর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সোহেল প্রধানস, বন্দর থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আল আমিনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।