কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থে তড়িঘড়ি করে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপ) রচনা করা হয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট। পরবর্তী সময়ে গণশুনানি উপেক্ষা করে এর প্রহসনমূলক সংশোধন করা হয়েছে বলেও মনে করে সংগঠনটি। তারা গেজেটকৃত ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের শিরোনাম—‘জনবৈরী ড্যাপ, বৈষম্যমূলক পরিকল্পনা: নিম্ন নাগরিক বাসযোগ্যতা ও বিপন্ন পরিবেশ’।

স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক প্রণীত ড্যাপ রাজধানী ঢাকার নাগরিক বাসযোগ্যতা ও পরিবেশ বিপন্ন করে তুলেছে। এর প্রমাণ, ড্যাপ প্রণয়নের পরে গত চার বছরে বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ১৩৮ থেকে ১৭১তম স্থানে নেমে এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ উর রশীদ, সম্পাদক (পেশা) এম ওয়াহিদ আসিফ, সহসভাপতি (জাতীয় বিষয়াদি) নওয়াজীশ মাহবুব, সহসভাপতি (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক) খান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আইনি ব্যত্যয়, প্রকাশিত তথ্যের অপর্যাপ্ততা, প্রণয়নপ্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা, পরিবেশ বিপর্যয় (কৃষিজমি বিনষ্ট ও প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট), ভবন নির্মাণের অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বৃদ্ধি, বৈষম্যমূলক নীতির প্রয়োগ, জনভোগান্তি বৃদ্ধিসহ অসংখ্য অসংগতিনির্ভর এই ড্যাপ (২০২২-৩৫) বর্তমানে ভবন নির্মাণশিল্পে স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে।

সংগঠনটির নেতারা বলেন, ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ গেজেটেড হওয়ার আগপর্যন্ত ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ সম্পূর্ণরূপে কার্যকর ছিল। সেই নিয়মে ঢাকা শহরের সব স্থানে রাস্তার প্রশস্থতার ওপর ভিত্তি করে একই পরিমাণ ক্ষেত্রফলের ভবন নির্মাণ করা যেত। ড্যাপ কার্যকর হওয়ার পর থেকে নাগরিক সুবিধার ওপর ভিত্তি করে ঢাকা শহরের ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারার মতো অভিজাত এলাকাকে আরও অভিজাত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে রায়েরবাজার, বাড্ডা, পুরান ঢাকার মতো এলাকাকে মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা বলেন, আইন হবে এমন, যা জনগণ মানতে উৎসাহিত হবে। কিন্তু ড্যাপ এমন আইন, যা জনগণ ব্যত্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। রাজউক তদারকি করতে পারে না, এর প্রমাণ হলো বছিলা। মানুষের প্রয়োজন আবাসস্থল। আইন কঠিন হলে জনগণ আইনের তোয়াক্কা না করে ভবন নির্মাণ করবে। ধনীদের জন্য বেশি সুযোগ, আর গরিবের জন্য কঠিনতর আইন, মধ্যবিত্তের কোনো জায়গা থাকবে না। এভাবে জনবৈরী আইন প্রয়োগ করা হয়েছে ড্যাপে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা সারা বাংলাদেশের সমস্যা। শুধু ঢাকা শহরকে বাঁচাতে গিয়ে জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণের নামে এলাকাভেদে জনঘনত্ব নির্দিষ্ট করা হয়েছে। যেমন ড্যাপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে পুরান ঢাকার জনঘনত্ব ৪৫০ ছিল। কিন্তু ড্যাপ ২০২২-৩৫ প্রস্তাবনায় ২০২৫ সালে এই জনঘনত্ব ৩৬৭ জনের কথা বলা হয়েছে। তাহলে ২০২৫ সালে এসে ৮৩ জন কোথায় যাবে? ঢাকার জনগণ কি রোহিঙ্গাদের মতো বাস্তুহারা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা। এগুলো হলো: বর্তমান স্ট্রাকচার প্ল্যান ও তিন ধাপভিত্তিক মহাপরিকল্পনার সবশেষ তৃতীয় ধাপের গেজেটকৃত ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) বাতিল করতে হবে। রাজউক ও গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (জিডিএ) আইনের সঠিক ও যৌক্তিক বাস্তবায়নের জন্য ডিজিটাল ও সহজলভ্য ভূমি ব্যবহার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। প্রাকৃতিক, মানবসৃষ্টসহ সব দুর্যোগের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দুর্যোগসহনীয় একটি অংশগ্রহণমূলক ও হালনাগাদ মৌজাভিত্তিক ড্যাপ তৈরি। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর তা পর্যালোচনা ও পরিচালনা করা। বৃহত্তর ঢাকা মহানগরীসহ পাশের গাজীপুর, সাভার, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এলাকা নিয়ে অবিলম্বে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট সব দুর্যোগ সহনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক, পরিবেশবান্ধব, জনবান্ধব ও বৈষম্যহীন আধুনিক-আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তিন ধাপভিত্তিক (স্ট্রাকচার প্ল্যান, আরবান এরিয়া প্ল্যান ও ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান) ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এই পরিকল্পনায় সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), শূন্য নির্গমনসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির যথাযথ সংযোজন নিশ্চিত করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা বহুদিন ধরে রাজউকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো প্রতিফলন পাননি। তাই জনগণের দাবি ও অধিকার তুলে ধরতে আজ সংবাদ সম্মেলন করছেন। জনদুর্ভোগ এড়াতে, ভবিষ্যতের ঢাকা বাঁচাতে, বাসযোগ্য নগর গড়তে ও নির্মাণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত লাখো মানুষের স্বার্থ রক্ষায় তাঁদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

আরও পড়ুনড্যাপ কেন আবাসনের জন্য চাপ১৪ অক্টোবর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভবন ন র ম ণ পর ব শ র জন য র জউক স থপত

এছাড়াও পড়ুন:

হুংকার দিয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকান যাবে না: জাহিদ হোসেন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, “আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কোনো শক্তি বা হুংকার দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। জনগণ যদি গণতন্ত্রের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, রাজনৈতিক সংস্কার কার্যকর হবে এবং লুণ্ঠিত রাষ্ট্রীয় সম্পদ ফেরত আসবে।”

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আরো পড়ুন:

মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন 

বাগেরহাটে হরতাল প্রত্যাহার, নির্বাচন অফিস ঘেরাওয়ের ঘোষণা

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্রের পক্ষে জেগে উঠলে কোনো শক্তিই নির্বাচনী প্রক্রিয়া ঠেকাতে পারবে না। গণতন্ত্র থাকলে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে, রাষ্ট্রের সম্পদ সুরক্ষিত থাকবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে।”

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে হবে এবং জনগণের আস্থা অর্জন করে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।”

সভায় উপস্থিত ছিলেন, হাকিমপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফেরদৌস রহমান, সহ-সভাপতি শাহিনুর ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এসএম রেজা বিপুল প্রমুখ।

নেতাকর্মীরা এ সময় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলীয় কার্যক্রমকে আরো বেগবান করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সংগঠনকে সক্রিয় করে জনগণের মাঝে বিএনপিকে শক্তিশালীভাবে উপস্থাপনের আহ্বান জানান।

ঢাকা/মোসলেম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
  • বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি
  • রোহিঙ্গা সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে
  • হুংকার দিয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকান যাবে না: জাহিদ হোসেন
  • মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন 
  • জামায়াত কীভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
  • জুলাই সনদ নিয়ে যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
  • ফরিদপুরে সীমানা নিয়ে ডিসির চিঠি, এলাকাবাসীর ৫ দাবি
  • জামায়া‌তের তিন‌ দি‌নের কর্মসূচি ঘোষণা