কারও চাপে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি হয়নি: রাজনাথ সিং
Published: 28th, July 2025 GMT
অপারেশন সিঁদুর নিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আলোচনার শুরুতেই ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়ে দিলেন, চার দিনের ওই যুদ্ধে ভারতের সেনাবাহিনীর কোনো ক্ষতি হয়নি। কারও চাপে পড়েও ওই অভিযান বন্ধ করা হয়নি। তিনি বলেন, লক্ষ্য হাসিল হওয়ামাত্রই অভিযান স্থগিত করা হয়।
আজ সোমবার ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিতর্কের সূচনা করে রাজনাথ বলেন, যেকোনো পরীক্ষার ফলাফলের দিকেই সবার তাকানো দরকার। এ ক্ষেত্রে সেই ফল হলো ভারতের সেনাবাহিনীর সাফল্য।
বিরোধীদের কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ওদের জিজ্ঞাসা করা উচিত, পাকিস্তানের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, কটা যুদ্ধবিমান নষ্ট করা হয়েছে। জিজ্ঞাসা করা উচিত, সন্ত্রাসবাদীদের শিরদাঁড়া কীভাবে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তা না করে তারা নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রশ্ন করছে। রাজনাথ বলেন, পরীক্ষা দেওয়ার সময় পরীক্ষার্থীর পেনসিল ভাঙল কি রাবার হারাল, সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো সাফল্যের সঙ্গে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে কি না। অপারেশন সিঁদুরে সেই সাফল্যই অর্জিত হয়েছে।
অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সভায় উপস্থিত ছিলেন না। সরকারি সূত্রের খবর, আগামীকাল মঙ্গলবার এই বিতর্কে তিনি অংশ নিতে পারেন। তবে যেহেতু আলোচনা শুরু করেছেন রাজনাথ সিং, জবাবি ভাষণও তিনিই দেবেন।
রাজনাথ সিং বলেন, ভারত বারবার পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব চেয়ে এসেছে। সেই লক্ষ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী লাহোর বাসযাত্রা করেছিলেন। সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ যে দেশের রাষ্ট্রীয় মন্ত্র, তারা অন্য রাস্তায় হাঁটছে। প্রধানমন্ত্রী মোদিও তাই লক্ষ্যে অবিচল থেকে জানিয়ে দিয়েছেন, সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, অপারেশন সিঁদুর ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর শৌর্য ও বীর্যের পরিচয়। বীর সেনানীরা মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যে ৯টি ঘাঁটি ও শতাধিক সন্ত্রাসীকে খতম করেছেন। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। সমগ্র দেশ তাঁদের জন্য গর্বিত। তিনি জানান, অপারেশন সিঁদুর স্থগিত রাখা হয়েছে শুধু, বন্ধ হয়নি। পাকিস্তান আবার হঠকারিতা করলে তার যোগ্য জবাব দেওয়া হবে। রাজনাথ বলেন, এটা নরেন্দ্র মোদির নতুন ভারত। এই ভারত সন্ত্রাসবাদ দমনে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে পিছপা হবে না।
আজ দুপুর ১২টা থেকে এ আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিহারে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবিড় ভোটার তালিকা পর্যালোচনার (এসআইআর)) বিরোধিতা এবং সেই বিষয়ে আলোচনার দাবিতে সভা বেলা দুইটা পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায়। বেলা দুইটায় আলোচনা শুরু হয়। আলোচনা চলবে মোট ১৬ ঘণ্টা।
বিরোধীপক্ষ থেকে বিতর্ক শুরু করেন আসাম থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য গৌরব গগৈ। তিনি বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অনেক কিছুই বলে গেলেন। কিন্তু একবারও বললেন না, কী করে সন্ত্রাসবাদীরা পেহেলগামে ঢুকল, ২৬ জনকে মেরে ফেলল এবং নির্বিঘ্নে পালিয়ে গেল। বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি জানতে চান, সেই থেকে এক শ দিন কেটে গেছে, আজও একজনকেও গ্রেপ্তার করা যায়নি। কার গাফিলতিতে? কার ব্যর্থতা? গৌরব বলেন, জম্মু–কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল নৈতিক দায় গ্রহণ করেছেন। কিন্তু সরকার উপরাজ্যপালের আড়ালে লজ্জা ঢাকতে পারে না। পেহেলগামের ব্যর্থতার দায় পুরোপুরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি কটাক্ষ হেনে গৌরব বলেন, পেহেলগাম–কাণ্ডের পর সৌদি আরব থেকে তিনি তড়িঘড়ি দেশে ফিরলেন। কোথায় উচিত ছিল পেহেলগামে যাওয়া, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, তা না তিনি চলে গেলেন বিহারে। রাজনৈতিক ভাষণ দিতে।
গগৈ বলেন, ‘আমরা বিরোধীরা সরকারের শত্রু নই। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরাও সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু আমরা সত্য জানতে চাই। জানতে চাই, কেন হুট করে যুদ্ধবিরতিতে সরকার রাজি হলো? পাকিস্তান যখন নতজানু হয়ে গিয়েছিল, তখন কেন পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ছিনিয়ে নেওয়া হলো না? প্রধানমন্ত্রীর বলা উচিত, কার চাপের কাছে তিনি নিজেকে সমর্পণ করেছেন।’ রাজনাথের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে চাই, কটা যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। শুধু জনগণই নয়, জওয়ানদের কাছেও সত্য গোপন করা হচ্ছে।’
গৌরব বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বলেই চলেছে ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধ তারাই থামিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ২৬ বার এই দাবি করেছেন। সত্যটা কী?
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন থ স কর ছ ন লক ষ য পর ক ষ মন ত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগে গত ১০ বছর বাধা দেওয়া হয়েছিল: চীনের রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, বিগত সরকারের শেষ ১০ বছরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি চীন। এই দুই দলের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সে সময়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়েছিল।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন চীনের রাষ্ট্রদূত। ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সম্প্রতি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদল চীন সফর করেছে। এ বিষয়ে অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, খোলাখুলিভাবে বললে, গত ১০ বছরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু এখন সময় এসেছে, তাই তাঁরা পুনঃযোগাযোগ চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা এ ধরনের সফর বিনিময় ও যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করতে চান।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হতে কীভাবে বাধা দেওয়া হতো, জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, গত কয়েক বছরের পরিস্থিতি কেমন ছিল, সেটি এখানে উপস্থিত সাংবাদিকেরা অনুধাবন করতে পারেন। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে চান না। তিনি কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, সেটা উপস্থিত সাংবাদিকেরা বোঝেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল গত মাসে চীন সফর করে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে এই সফর হয়। অন্যদিকে চলতি মাসে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধিদল চীন সফর করে।
ডিকাব সভাপতি এ কে এম মঈনউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুন।