বাংলাদেশের প্রথম আটটি ডাকটিকিটের নকশা প্রণয়ন করেন লন্ডনপ্রবাসী ভারতীয় বাঙালি শিল্পী বিমান মল্লিক। তাঁর আঁকা ৮টি ডাকটিকিট বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অস্তিত্বকে জানান দেয়। একাত্তরের ২৯ জুলাই দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে এই ৮টি ডাকটিকিট একযোগে প্রকাশ করা হয়। এ জন্য দিনটিকে ডাকটিকিট দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

দেশের প্রথম ডাকটিকিট তৈরির ইতিহাস তুলে ধরে এ কথা জানান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বনি আদম। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী নগরের একটি রেস্তোরাঁয় দিনটি উদ্‌যাপন করে বরেন্দ্র ফিলাটেলিক সোসাইটি। সেখানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বনি আদম।

বনি আদম বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই হাউস অব কমন্সের হারকর্ট রুমে স্বাধীন বাংলাদেশের এসব ডাকটিকিটের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়। সেখানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রায় সব দলের নেতৃস্থানীয় সদস্য ছাড়াও প্রায় ৪০ জন সাংবাদিকের উপস্থিতিতে এসব প্রদর্শনের উদ্যোগ নেন বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। একই বছরের ২৯ জুলাই মুজিবনগর পোস্ট অফিসে মওদুদ আহমদ, লন্ডনে হাউস অব কমন্সে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও কলকাতার বাংলাদেশ মিশনে এম হোসেন আলী একযোগে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই ৮ ডাকটিকিট প্রকাশ করেন।

ওই ৮টি ডাকটিকিটে নকশা হিসেবে ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যা, সাড়ে সাত কোটি বাঙালি, স্বাধীনতার পতাকা, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ও ‘বাংলাদেশকে সমর্থন দিন’ লেখা।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক ও বরেন্দ্র ফিলাটিলিক সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক উদয় সংকর বিশ্বাস, ডাকটিকিট সংগ্রাহক খোশবর আলী, ডাকটিকিটের নকশাবিদ ও বরেন্দ্র খেলা টেলিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সুমন্ত কুমার প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব শ বব

এছাড়াও পড়ুন:

জট কমাতে জাহাজ কমানোর উদ্যোগ

কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে একের পর এক জাহাজ আসছে। খালাস শেষে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ছে এসব জাহাজ। পণ্য পরিবহনের চাপ সামাল দিতে না পারায় বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বাড়ছে। এই জট কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কমাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জাহাজ যাতে কম আসে সে জন্য বন্দরের নেওয়া পদক্ষেপ হতবাক করেছে শিপিং এজেন্টদের। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দুর্যোগের সময় ছাড়া কোনো বন্দরে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নজির বিশ্বে নেই। বরং বিশ্বের নানা বন্দর বা কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে যাতে জাহাজ ভেড়ানো হয় সে জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বা টার্মিনাল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর বিপণন বা বাণিজ্য দল রয়েছে। চট্টগ্রামে হচ্ছে উল্টোটা।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পথে এখন ১১৮টি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে এসব জাহাজ চলাচল করে। ২০ জুলাই বন্দরের এক সভায় বন্দরের পথে চলাচলরত ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৫টি জাহাজ কমানো হবে তার তালিকা শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ উদ্যোগে বন্দরকে দেওয়ার জন্য বলা হয় ওই সভায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, জাহাজজটের কারণে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।

এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।

তবে শিপিং এজেন্টরা এখন পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম বন্দরকে দেয়নি, যেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তালিকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) ১৫টি জাহাজের তথ্য দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন, যেগুলো এই পথ থেকে প্রত্যাহার করা হবে।

শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের এ উদ্যোগ মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। যেসব কারণে বন্দরে জাহাজজট হয়েছে, তা শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে জট কমবে না।

স্বাভাবিক সময় বন্দরের বহির্নোঙরে পাঁচ–ছয়টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এখন জটের কারণে ক্রেনযুক্ত একেকটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

শিপিং ও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার একটানা ১০ দিনের ছুটি, দুই দফায় পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচি ও কাস্টমসের শুল্কায়নের সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে কনটেইনার জাহাজের যে জট তৈরি হয়েছে, তা এখনো কমছে না। কারণ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের নতুন উদ্যোগে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীঙ্কার বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারের জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। একইভাবে এসব বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ বাড়তে পারে ডিপোগুলোতে।

জানতে চাইলে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন মুনতাসীর রুবাইয়াত প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের পথে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, চাহিদা বাড়লে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন ভোক্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ