তিন মাস দুই দিন পর কাপ্তাই হ্রদে শুরু হচ্ছে মৎস্য আহরণ। শনিবার (২ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা। 

কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে এবার নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। অন্যান্য বছর ২-৩ দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় চার মাস পর মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতো। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রজনন এবং অবমুক্ত করা মাছের বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।

এদিকে, মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর শুধু জেলে পাড়া নয়, কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণকেন্দ্র বিএফডিসি ঘাট। মাছ পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ড্রাম, বরফ ভাঙার মেশিন। দীর্ঘ ৯২ দিনের কর্মহীন জীবনের অবসান ঘটাতে প্রহর গুনছেন জেলেরা। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)। 

বিএফডিসি সূত্র বলছে, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য ১ মে থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এ সময়ে হ্রদে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২৬ হাজার জেলে। 

রাঙামাটির শহরের পুরান পাড়া জেলা পল্লীর বাসিন্দা নেপাল দাশ জানিয়েছেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালে যে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। দীর্ঘ তিন মাস পর মাছ ধরতে নামতে পারব, এতে খুশি আমরা। 

নতুন পাড়ার জেলে অমর কান্তি দাশ বলেছেন, হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে, পানিতে ঢেউ থাকায় শুরুতে বেশি মাছ পাওয়া যাবে না। পানি কিছু কমে আসলে ও স্থির হলে ভালো মাছ পাব, আশা করি। হ্রদে নামার জন্য যা যা প্রস্তুতি, সবকিছু শেষ করেছি। জাল ও নৌকা মেরামত করা হয়েছে। এখন শুধু লেকে নামার অপেক্ষা। 

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেছেন, এবার নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদে যথেষ্ট পানি থাকায় মাছ প্রথম থেকেই প্রজনন এবং বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আশা করছি, এবার পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্ততি নিয়েছেন। রবিবার সকাল থেকে বিএফডিসি ঘাটে মাছ আসবে।

বিএফডিসির রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো.

ফয়েজ আল করিম বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন আমাদের উপকেন্দ্রগুলোর যেসব অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, সেসব আমরা শেষ করেছি। অন্যান্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, সেসবও শেষ হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের মতো এবছরও ভালো মাছ পাওয়া যাবে।

ঢাকা/শংকর/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ছ আহরণ প রস ত ত ব এফড স মৎস য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্গম অঞ্চলে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এখনো পিছিয়ে

বাংলাদেশের চর, হাওর, পাহাড় ও সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকার নারী ও কিশোরীরা এখনো পর্যাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতা, বাজেট ও জনবলের ঘাটতি এবং সচেতনতার অভাবে এসব অঞ্চলে প্রজনন অধিকার বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এই বাস্তবতা সামনে রেখে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর (ডিজিএফপি) ২০২৫-৩০ মেয়াদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সমন্বিত কৌশলপত্রের মোড়ক উন্মোচন করেছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত কর্মশালায় ‘দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জন্য পরিবার পরিকল্পনা কৌশল’ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। কর্মশালার আয়োজন করে স্বাস্থ্য ডিজিএফপির ‘ক্লিনিক্যাল গর্ভনিরোধক পরিষেবা ডেলিভারি প্রোগ্রাম’। কারিগরি সহায়তায় ছিল মেরি স্টোপস বাংলাদেশ।

কর্মশালায় কৌশলপত্রটি উপস্থাপন করেন মেরি স্টোপস বাংলাদেশের পার্টনারশিপ অ্যান্ড ফান্ডরাইজিং প্রধান মনজুন নাহার। তিনি জানান, বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০১৭-১৮-এর তথ্য অনুযায়ী, দুর্গম এলাকায় পরিবার-পরিকল্পনার ‘অপূর্ণ চাহিদার হার’ উচ্চ, যা মা ও শিশু উভয়ের ঝুঁকি বাড়ায়। পাহাড়, চর ও হাওর অঞ্চলে অধিকাংশ মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছায় না। নিয়মিতভাবে পরিবার পরিকল্পনা ক্যাম্প হয় না। ফলে সচেতনতার অভাব ও যোগাযোগব্যবস্থার দুর্বলতায় সেবার গতি স্থবির হয়ে পড়েছে।

কী আছে ২০২৫-৩০ কৌশলে?

ডিজিএফপি ও মেরি স্টোপস বাংলাদেশ যৌথভাবে প্রণীত এই কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, দুর্গম এলাকার জন্য সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে; প্রতিটি সেবাকেন্দ্রে কমপক্ষে ৪ জন প্রশিক্ষিত ধাত্রী/এফডব্লিউভি থাকবেন; ওষুধ, গর্ভনিরোধক ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে; সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব জোরদার করা হবে; স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা কর্মসূচি বাড়ানো হবে এবং কিশোর-কিশোরী ও দম্পতিদের মধ্যে এসআরএইচআর সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছানো হবে।

কৌশল বাস্তবায়নে সমতা, প্রজনন অধিকার, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পছন্দের স্বাধীনতা ও গুণগত যত্ন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নমুনা হিসেবে ভোলা, কয়রা, বাগেরহাট, কক্সবাজার, বান্দরবান, পটুয়াখালী, বরগুনা, সুনামগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও সাতক্ষীরা জেলায় প্রাথমিকভাবে এ কৌশল বাস্তবায়ন করা হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সারওয়ার বারী বলেন, পরিবার পরিকল্পনা সেবার ক্ষেত্রে কৌশলপত্রটি একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সভাপতির বক্তব্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশরাফী আহমেদ বলেন, ‘এই প্রস্তুতি আমাদের আগেই থাকা উচিত ছিল, কিন্তু আমরা এখন করেছি। এখন বাস্তবায়ন করাটাই জরুরি।’

স্বাগত বক্তব্যে মেরি স্টোপস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিশওয়ার ইমদাদ বলেন, ২০২৩ সালে এই কৌশলের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ডিজিএফপির যৌথ বৈধতা কর্মশালায় এটি অনুমোদন লাভ করে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব আলম, এমসিএইচ সার্ভিসেসের পরিচালক মো. সুলতান আহম্মদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্গম অঞ্চলে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এখনো পিছিয়ে