মানুষকে বাদ দিয়ে জুলাইয়ের চেতনা ধরে রাখা যাবে না
Published: 2nd, August 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একাত্ম হয়েছিলেন। এই চেতনা ধরে রাখতে হলে সাধারণ মানুষের কথা শুনতে হবে। মানুষকে বাদ দিয়ে জুলাইকে ধরে রাখা যাবে না। যারা বিভাজন তৈরি করে জুলাই সংগ্রামের নিজস্ব মাপকাঠি তৈরি করে অন্যদের সরিয়ে দিচ্ছে, তারাই একসময় থাকবে না। জনগণই দেশকে সব সময় উদ্ধার করেছে, ভবিষ্যতেও করবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর উপলক্ষে ‘কইলজ্যা কাঁপানো ৩৬ দিন: জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও সাংস্কৃতিক নির্মাণ’ শীর্ষক কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ শনিবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে ‘দৃশ্যমাধ্যম সমাজ’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আয়োজনের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্রও দেখানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, জুলাই মানুষের একটি অভ্যুত্থান। মানুষকে সম্পৃক্ত রাখা না গেলে জুলাইকে ধরে রাখা যাবে না। অন্যায়–অবিচার হলে মানুষ মেনে নেয় না। কিন্তু সেই মানুষ কোথায়। যদি মনে করা হয় যে মানুষ আসবে, প্রতিবাদ করবে, অভ্যুত্থান সংগঠিত করবে এবং পরে চলে যাবে। তাহলে সেটা আর গণ থাকে না।
এই অধ্যাপক আরও বলেন, জুলাইকে (চেতনা) বাঁচিয়ে রাখতে হবে। মানুষের কথা বলার জায়গা রাখতে হবে। জুলাইয়ের যে রাজনৈতিক ভাষা ছিল, সেটা আর নেই। পুরোনো কিছু আক্রমণাত্মক ভাষায় ফিরে এসেছে। জুলাইতে নানা শ্রেণির মানুষের ঐক্য ছিল। এখন প্রচণ্ড বিভাজন দেখা যাচ্ছে। নারীকে আলাদা করা হচ্ছে, মানুষকে প্রান্তিকীকরণ করা হচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান জুলাইয়ের সময়ের স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, জুলাই নিয়ে বিভাজন চলছে, কেনাবেচা হচ্ছে। এসব জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে যায় না। ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে। শ্রমজীবী মানুষ সবচেয়ে বেশি রক্ত দিয়েছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল বসবাসের উপযোগী একটা নগর যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু এই প্রান্তিক মানুষ, প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ কোনো সংস্কার আলোচনায় নেই।
আদিল মুহাম্মদ খানের মতে, একধরনের আপসকামিতা হয়ে গেছে। জুলাইয়ের কথা ছিল সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সুন্দর দেশ গড়তে এই দৃশ্যমাধ্যম সমাজ আরও ভূমিকা রাখবে।
দৃশ্য মাধ্যম সমাজ ২০২৪ সালের ১ আগস্ট রাজধানীর ফার্মগেটে আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম–নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সেই বিক্ষোভে নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, সেই সমাবেশ থেকে স্লোগান আসছিল, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। এ স্লোগানগুলো দিচ্ছিলেন, যাঁদের পর্দায় দেখা যায় তাঁরা। সেদিন মনে হয়েছিল, শেখ হাসিনা আর নেই।
উমামা বলেন, এ দেশের সংগ্রামগুলো হয়েছে জনতার মাধ্যমে। সব সংগ্রামে জনতাই ছিল। তারা দেশকে উদ্ধার করেছে। সামনেও তাঁরাই করবে। তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের আগে জনগণ বয়ান তৈরি করেছে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তা উল্টে গেছে। যারা ক্ষমতায় আছে, তারা নিজেদের মতো করে বয়ান তৈরি করছে। সংগ্রামের মানদণ্ড ঠিক করছে। যারা সেখানে ‘ফিট’, তারাই বিপ্লবী। যারা আরেকজনকে ‘নাই’ করে দিতে চায়, তারাই ‘নাই’ হয়ে যাবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ ভাইয়ের স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, যে রকম দেশের প্রত্যাশা ছিল তা দেখছেন না। পুলিশ তাঁর ভাইকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, সরকারকে অনেক প্রশ্ন করার আছে। সরকারের কাছে হিসাব বুঝে নিতে হবে। তবে তিনি আশাহত হতে চান না বলে উল্লেখ করেন।
শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা জামান বলেন, এ আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের মায়েরা, স্ত্রীরা নানা সমস্যায় ভুগছেন। স্ত্রীদের বলা হচ্ছে, ‘আপনারা কয়েক দিন পর বিয়ে করবেন। টাকার দরকার কী। এ ধরনের কথা কেন শুনতে হবে?’
সূচনা বক্তব্যে চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কোনো একক নেতৃত্বের আন্দোলন ছিল না। এটা ছিল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান।
গত এক বছরে রাজনীতির মাঠে অতি ডান পন্থার আশঙ্কাজনক উত্থান দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে আকরাম খান বলেন, সব ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। অতি হতাশা বা অতি আশাবাদ এ দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। অন্যায়–অবিচারের বিরুদ্ধে চুপ না থেকে বৈষম্যহীন দেশ গড়তে সংগ্রাম জারি রাখতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় জুলাই শিখিয়েছে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের কাছে যত বড় অপশক্তি হোক, পতন ঘটবে। বিপ্লব শুধু বন্দুক দিয়ে হয় না, ক্যামেরা, কলম, ক্যানভাস দিয়েও হয়। এই অভ্যুত্থান থেমে যায়নি।
শিল্প ইতিহাসবিদ ও সংগঠক আমিরুল রাজীবের সঞ্চালনায় এ পর্বে আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হাসান আশরাফ, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীনা এম সিদ্দিকী। এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, নির্মাতা কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার প্রমুখ।
দিনব্যাপী এ আয়োজনে আলোচনা সভার পাশাপাশি চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ বব দ য ন বল ন
এছাড়াও পড়ুন:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সে মাস্টার্স, আবেদন শেষ ২০ আগস্ট
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগে ফল-২০২৫ সেশনে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটি একটি উইকেন্ড প্রোগ্রাম।
যাঁরা আবেদন করতে পারবেন—১. আবেদনকারীর সংশ্লিষ্ট যেকোনো সাবজেস্ট/ডিসিপ্লিনে কমপক্ষে অনার্সসহ ৪ বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি অথবা ৩ বছরের অনার্স এবং ১ বছরের মাস্টার্স ডিগ্রি।
২. শিক্ষাক্রমে কোনো তৃতীয় বিভাগ/ক্লাস অথবা সিজিপিএ ২.৫ এর (অথবা সমমান) নিচে হলে আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
৩. সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একাডেমিক ডিগ্রি অথবা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
৪. আবেদনপত্র অনলাইন অথবা বিভাগীয় কার্যালয়ে সরাসরি জমা দেওয়া যাবে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের পরিবর্তে উচ্চশিক্ষায় ভারতীয়রা কেন ঝুঁকছেন বাংলাদেশ–সিঙ্গাপুর–উজবেকিস্তান–রাশিয়ার দিকে৪ ঘণ্টা আগেকোর্সের বিস্তারিত—১.কোর্সের সময়কাল: ১ বছর, ৩ সেমিস্টার,
২. ক্লাসের সময়: শুক্র ও শনিবার (অর্ধদিবস)।
ভর্তির বিস্তারিত তথ্য—১. আবেদনপত্রের শেষ তারিখ: ২০ আগস্ট ২০২৫।
২. ভর্তি পরীক্ষা: ২২ আগস্ট ১৮ এপ্রিল ২০২৫, সকাল ১০টায়।
৩. ফলাফল প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৫।
৪. মেধাতালিকা থেকে ভর্তি: ২৪ আগস্ট থেকে ২৬ আগস্ট ২০২৫।
৫.অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি: ২৭ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট ২০২৫।
৬. ওরিয়েন্টেশন: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার।
বিস্তারিত তথ্য জানতে ঢু মারুন ওয়েবসাইটে।
আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়ার আরটিপি বৃত্তি, টিউশন ফি মওকুফ, উপবৃত্তি-ভ্রমণ ভাতাসহ নানা সুযোগ ৮ ঘণ্টা আগে