৫ আগস্ট সামনে রেখে সারা দেশে পুলিশি অভিযান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারি
বাংলাদেশ
ট্যাগ: পুলিশ, নিরাপত্তা, ফেসবুক
মেটা: ৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে দেশের কোথাও যেন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড হতে না পরে, সে জন্য সারা দেশে অভিযান জোরদার করেছে পুলিশ।
একসার্প্ট: রাজধানীতে যাতে কোনো নাশকতার ঘটনা না ঘটে, সে জন্য ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে দেশের কোথাও যেন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড হতে না পরে, সে জন্য সারা দেশে অভিযান জোরদার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারি করা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রগুলো বলছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের (নিষিদ্ধ) নেতা-কর্মীরা আগস্ট মাস সামনে রেখে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন, এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সম্প্রতি ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় গোপন বৈঠক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর নিষিদ্ধ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। কয়েক দিন আগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা একটি উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যের পর থেকে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে তৎপরতা বেড়েছে।

রাজধানীতে যাতে কোনো নাশকতার ঘটনা না ঘটে, সে জন্য ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ ছাড়া রাতে আবাসিক হোটেল ও মেসে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে তারা।

ডিএমপির একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঢাকায় নাশকতার পরিকল্পনা করছেন। তাই ঢাকার ১১টি প্রবেশমুখে শতাধিক তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। সন্দেহজনক ব্যক্তি ও গাড়ির ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। রাজধানীর ভেতরে আড়াই শ তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। আগামী দুই দিন ঢাকায় বিশেষ অভিযান চলবে।

একাধিক পুলিশ সুপার প্রথম আলোকে বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। তবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সভা-মিছিল করার চেষ্টা করছেন। কয়েকটি জেলায় পোস্টার টানাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুজব ছড়াচ্ছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের যেসব স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গ্রেপ্তার হননি, তাঁরা নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন।

পুলিশের এসব কর্মকর্তা বলেন, নজরদারি, অভিযান, তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারি করা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকাসহ সারা দেশে অভিযানে ১ হাজার ৩৮২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ছিল ১ হাজার ২৬১ জন। ৫ আগস্ট সামনে রেখে এ অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল করিম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্ট সামনে রেখে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দলটির (আওয়ামী লীগ) নেতা-কর্মীরা যাতে সংগঠিত হতে না পারেন, সে জন্য তাঁর আওতাধীন ১৩টি জেলায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র কর কর ম র করছ ন ন শকত আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ব্যাংক খুলেছে, নেই নগদ অর্থ

ইসরায়েলের আগ্রাসনের শিকার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির ফলে কিছু কিছু ব্যাংক খুলেছে। তবে নগদ অর্থের ঘাটতির কারণে বড় সমস্যায় পড়েছেন গাজাবাসী। নগদ অর্থসংকটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

দুই বছর ধরে গাজায় নির্বিচার হামলায় ঘরবাড়ি, স্কুল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো অনেক ব্যাংক ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ছয় দিন পর ১৬ অক্টোবর থেকে কিছু ব্যাংক খোলা শুরু করে। এসব ব্যাংক থেকে অর্থ তুলতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভিড় করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর তাঁদের বেশির ভাগকে হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরও গাজায় ইসরায়েলের সেনাদের হামলায় দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৫২৭। যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ত্রাণসহ যেকোনো কিছু ঢুকছে ইসরায়েলের নজরদারিতেই।

নগদ অর্থের জন্য মধ্য গাজার নুসেইরাতে ব্যাংক অব প্যালেস্টাইনের বাইরে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওয়ায়েল আবু ফারেস (৬১)। তিনি বলেন, ব্যাংকে কোনো অর্থ নেই। নগদ অর্থের সঞ্চালন নেই। হতাশার সুরে ছয় সন্তানের এই বাবা বলেন, ব্যাংকে এসে কাগজপত্রের লেনদেন করে চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

গাজায় খাবার কেনা বা বিভিন্ন পরিষেবার বিল দেওয়ার মতো প্রায় সব দৈনন্দিন লেনদেন নগদ অর্থে করতে হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরু হওয়ার পর গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ইসরায়েলি সেনারা। ফলে সেখানে নিত্যপণ্য ও অন্যান্য সরঞ্জামের মতো নগদ অর্থও ঢুকতে পারছে না। যদিও যুদ্ধবিরতির পর এখন কিছু কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকছে।

গাজাভিত্তিক অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ আবু জাইয়্যাব বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ব্যাংক খোলা আছে, শীতাতপ যন্ত্রও চালু আছে। কিন্তু ইলেকট্রনিক লেনদেন ছাড়া মূলত আর কিছুই হচ্ছে না। কারণ, কোনো আমানত নেই। তাই নগদ অর্থ তোলা সম্ভব হচ্ছে না।

আবু জাইয়্যাব বলেন, ব্যাংক যেহেতু নগদ অর্থ দিতে পারছে না, তাই বেতন ক্যাশ করতে মানুষজন কিছু লোভী ব্যবসায়ীর কাছে যাচ্ছেন। তাঁদের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি অর্থের বিনিময়ে বেতন ক্যাশ করতে হচ্ছে।

‘আমরা আর পারছি না’

গাজায় একসময় ব্যাংক লেনদেন এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যেত জানিয়ে সাত সন্তানের মা ইমান আল-জাবারি বলেন, ‘এখন ব্যাংকে লেনদেন করতে আপনাকে দুই বা তিন দিন যেতে হয়। একাধিকবার যাতায়াত করতে হয়। পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এত কিছু করে আপনি ৪০০-৫০০ শেকেলের (১২৩-১৫৩ ডলার) মতো তুলতে পারবেন। বর্তমানে অতি উচ্চমূল্যের বাজারে এই অর্থ দিয়ে কী কেনা যায় বলেন? আমরা আর পারছি না।’

নগদ অর্থের ঘাটতি অধিকাংশ গাজাবাসীর জন্য সমস্যা সৃষ্টি করলেও কিছু মানুষ এই সংকটকে জীবিকার উপায় হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। মানাল আল-সাইদির মতো কেউ কেউ ছেঁড়া-ফাটা ব্যাংক নোট জোড়াতালি দেওয়ার কাজ করছেন। এতে তাঁদের রুটি-রুজি জুটছে। ৪০ বছর বয়সী এই নারী বলেন, ‘কাজ করে আমি দৈনিক ২০-৩০ শেকেল (৬-৯ ডলার) আয় করতে পারি। যা আয় হয়, তা দিয়ে আমি একটি রুটি, অল্প শিম ও ভাজাপোড়াসহ টুকটাক কিছু কিনতে পারি।’

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় সবজির দাম আকাশছোঁয়া। মানাল আল-সাইদি বলেন, ‘সবজি বা এ জাতীয় অন্য কিছু কেনার মতো অর্থ আমি আয় করতে পানি না। আমার যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে দিন চলে যায়।’

নগদ অর্থসংকটে জর্জরিত গাজার অনেক মানুষকে ডিম বা চিনির মতো প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্যও ব্যাংক অ্যাপের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক লেনদেনে ভরসা করতে হচ্ছে। এই সংকটে বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম আদায় করছেন।

নগদ অর্থ কখন ব্যাংকে আসবে ঠিক নেই

গাজায় বর্তমানে ত্রাণ সরবরাহ নজরদারি করছে ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর ‘কো-অর্ডিনেটর অব গভর্নমেন্ট অ্যাকটিভিটিজ ইন দ্য টেরিটরিজ (সিওজিএটি)’ নামের একটি শাখা। কখন বা কীভাবে নগদ অর্থ গাজায় প্রবেশের অনুমোদন দেওয়া হবে, তা জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

নগদ অর্থের ঘাটতি গাজাবাসীর সংকটকে নানা দিক থেকে আরও নাজুক করে তুলেছে। তাঁবু, খাবার ও ওষুধ কিনতে অনেকে এরই মধ্যে সব সঞ্চয় শেষ করে ফেলেছেন ও হাতের কাছে যে সম্বল ছিল, তা-ও বিক্রি করে দিয়েছেন। কিছু মানুষ টিকে থাকার জন্য বিনিময় পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করছেন।

ফিলিস্তিনি ব্যবসায়ী সামির নামরাউতি (৫৩) জানান, এমন কিছু টাকা হাতে আসছে, যা অতিব্যবহারের ফলে চেনার উপায় নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এসব টাকা নিচ্ছেন। নামরাউতির ভাষায়, ‘আমার কাছে নোটের সিরিয়াল নম্বর গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ সিরিয়াল নম্বর আছে, ততক্ষণ আমি নোটকে টাকা হিসেবে বিবেচনা করি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ব্যাংক খুলেছে, নেই নগদ অর্থ