চবি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশায় ছাত্র সংসদ
Published: 2nd, August 2025 GMT
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূতিকাগার ছিল দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জোরালো হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পাবে তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিনিধিদের, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় সংকটে এগিয়ে আসবে সর্বাগ্রে।
ইতোমধ্যে দেশের স্বায়ত্তশাসিত তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) চাকসুর তফসিলও খুব শীগ্রই ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ ৫৮ বছরে চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ছয়বার। সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। এরপর দীর্ঘ ৩৪ বছরে শিক্ষার্থীরা পাননি তাদের যোগ্য প্রতিনিধিদের। তাই এবারের চাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ ও প্রত্যাশা অত্যধিক। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো সমস্যার একমাত্র সমাধান সচল চাকসু।
আরো পড়ুন:
ছাত্রী হলের সান্ধ্য আইন নিয়ে প্রচারিত সংবাদ ভিত্তিহীন: চবি প্রক্টর
পরীক্ষা না দিয়েও পাস ছাত্রলীগ নেত্রী, ৬ মাসেও জমা হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন
কেমন চাকসু চান শিক্ষার্থীরা- এমন প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তাদের মতামত। রাইজিংবিডি ডটকমের পাঠকদের জন্য তাদের প্রত্যাশা ও ভাবনাগুলো তুলে ধরা হলো।
চাকসু হবে সব অধিকার আদায়ের মাধ্যম
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যদি সবচেয়ে অবহেলিত কেউ থেকে থাকে, তবে তা শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিনের লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীদের অধিকারবোধকে আড়ালে ঠেলে দিয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ছাত্র রাজনীতির সুষ্ঠু অনুশীলনের জন্য চাকসু ও হল সংসদের বিকল্প নেই।
চাকসু হলো আমাদের প্রত্যাশার বাতিঘর; যা শিক্ষার্থীদের পরিবহন, আবাসন, ক্যান্টিনের খাবারের মান, প্রশাসনিক জটিলতা, গবেষণা ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ এবং একটি শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে সব অধিকার আদায়ের মাধ্যম। এটি হবে নেতৃত্ব তৈরির একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে থাকবে না কারো আনুগত্যের সংস্কৃতি বা বিশেষ কোনো গোষ্ঠীকে খুশি করার চেষ্টা।
আমরা এমন একটি চাকসু চাই, যেখানে থাকবে গণতান্ত্রিক চর্চা, নিয়মিত নির্বাচন, জবাবদিহিতা ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ। চাকসু যেন পরিণত না হয় দখলদারিত্ব, দমন-পীড়ন কিংবা অধিকার হরণের হাতিয়ার। বরং এটি হয়ে উঠুক শিক্ষার্থীদের অধিকার বাস্তবায়নের প্রতীক এবং নতুন বাংলাদেশের জন্য অনুকরণীয় নেতৃত্ব তৈরির সূতিকাগার।
(লেখক: মো.
একপেশে আধিপত্য বজায় রাখতেই চাকসু নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি চলছে
চাকসু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার। শিক্ষার্থীদের অধিকার, শিক্ষার মান ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের চর্চার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬৬ সালে চাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ছয়বার চাকসু নির্বাচন হয়েছে। তবে ১৯৯০ সালের পর থেকে আর কোনো ছাত্র সংসদের নির্বাচন এখানে অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সঠিক নেতৃত্বের বিকাশ না ঘটায় প্রশাসনে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত হচ্ছে না। ফলে প্রশাসনের লাগামহীন দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে কথা বলার মতো ঐক্য নির্ভর কোনো মাধ্যম শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না।
তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু ১ বছর পেরিয়ে গেলেও বারবার ছাত্র সংগঠন এবং শিক্ষার্থীরা চাকসুর দাবি জানালেও প্রশাসন যেন বধির হয়ে আছে। মূলত প্রশাসন তাদের একপেশে আধিপত্য বজায় রাখতেই চাকসু নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করছে। ঢাকা, রাজশাহী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। অতএব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্যই বিব্রতকর। আমরা চাই, দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হোক। চাকসু প্রশাসনের দয়ায় দেওয়া কোনো বিষয় নয়, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার।
(লেখক: আকিজ মাহমুদ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ, ইতিহাস বিভাগ)
চাকসুর প্রতিনিধিরা যেন শুধু সিনিটের গ্যালারিতে দর্শক না হয়
চাকসু মানে শুধু একটি নির্বাচন না, বরং প্রতিনিধিত্ব। চবি শিক্ষার্থীরা এমন একটি ছাত্র সংসদ চান, যা শুধুই আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং চিন্তা, সংলাপ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হবে। যেখানে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষাই হবে মূল লক্ষ্য, যা শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস আর অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি মাধ্যম হবে। আমরা এমন এক ছাত্র সংসদ চাই, যেখানে আবাসিক হলগুলোর সমস্যা, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ, বাস-ট্রেনের নিরাপত্তাহীন যাত্রা, লাইব্রেরির অব্যবস্থাপনা, মানসিক স্বাস্থ্য ও অ্যাকাডেমিক সংকট নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হবে।
শিক্ষার্থীরা এমন চাকসু চায়, যেখানে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠ বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিবে। যেই কণ্ঠে উচ্চারিত হবে গঠনমূলক সমালোচনা আর নীতিনির্ধারণের ভাষা। চাকসু হবে এমন, যেখানে নিপীড়নের বিরুদ্ধে শব্দ উঠবে, নিয়মের নামে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হবে। চাকসু হবে একটি সচল ছাত্র সংসদ, যার প্রতিনিধিগণ শুধু সিনেটের গ্যালারিতে দর্শক হবেন না, বরং তারা অংশীদার হয়ে দাঁড়াবে। তারা শিক্ষার্থীদের কথা বলবে। তারা প্রশ্ন করবে, প্রস্তাব রাখবে, চাপ তৈরি করবে।
একটা চাকসু, যা নির্বাচনের পর আর নিস্তব্ধ থাকবে না, বরং সেশনজট থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের অধিকার, নিরাপত্তা, আবাসন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব দাবি আদায়ে অপ্রতিরোধ্য কণ্ঠস্বর হবে। চাকসু হবে চবি শিক্ষার্থীদের চেতনার প্রতিধ্বনি শুধু কথায় নয়, বরং কাজে ও কর্ষণে।
(লেখক: মোহাম্মদ ফুয়াদ হোসেন, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ, আরবি সাহিত্য বিভাগ)
নির্বাচনে ছাত্র সংগঠনগুলোর পারস্পরিক সহাবস্থান নিশ্চিত হোক
আমি চাই, শিক্ষার্থীদের আত্মমর্যাদা ও নেতৃত্ব বিকাশের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে চাকসু নির্বাচন হোক স্বচ্ছ ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে। দীর্ঘ ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় যে জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠার জন্য অন্যান্য ক্যাম্পাসের চেয়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল বেশি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী চবি প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল, তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি, চাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ দিবেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল আমাদের হতাশ হতে হয়েছে।
স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চবির শিক্ষার্থীদের আবাসনের সংকট বেশি। সর্ববৃহৎ ক্যাম্পাস ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে যাতায়াত নিয়ে সবসময় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শিক্ষার্থীদের সব সমস্যা নিরসন ও অধিকার নিয়ে কাজ করার সুযোগ দ্রুত ফিরে আসুক। আমি আরো চাই, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাবিধ সমস্যা সমাধান ও উন্নয়ন নিয়ে সোচ্চার, তারা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে যে নতুন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, সেখানে যেন আগের মত কোনো সহিংস কর্মকাণ্ডে কেউ না জড়ায়। সব ছাত্র সংগঠন পারস্পরিক সহাবস্থানের মাধ্যমে সুন্দর চাকসু নির্বাচন আয়োজনে সহযোগিতা করুক।
(লেখক: মুসলেমা খানম, স্নাতকোত্তর, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ)
সব কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক
চাকসু হোক আমার কণ্ঠস্বর। একটি স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে চাকসু আমার অধিকার। আমি মনে করি, এই সময়ে এসেও আমাকে চাকসু চাইতে হচ্ছে, এটি প্রশাসনের সব থেকে বড় ব্যর্থতা। পরবর্তীতে যেন আমাদের কখনো চাকসু নির্বাচনের জন্য এভাবে কাঠখড় পোড়াতে না হয়, সেই সুযোগ তৈরি করতেই এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি প্রয়োজন চাকসু নির্বাচন। যেখানে একজন শিক্ষার্থী শিক্ষার্থীদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে, তুলে ধরবে তাদের সব চলমান সমস্যা এবং সেই সমস্যা সমাধানে সরব থাকবে সবার আগে। প্রশাসনিকসহ সব কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সমান অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করবে, এমন একটি চাকসু চাই।
শিক্ষার্থীদের অ্যকাডেমিক ব্যবস্থা, পরীক্ষার ফলাফল পুনর্বিবেচনা এসব ক্ষেত্রে যেন প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেও চাকসু প্রয়োজন। চাকসু একটি গণতান্ত্রিক অনুশীলন। এই গণতান্ত্রিক চর্চাই আমাদের ভবিষ্যতে নেতৃত্ব গঠনে সহায়তা করবে।
(লেখক: শারমিন আক্তার, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ)
সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনে চাকসুর প্রতিনিধি নির্বাচিত হোক
দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে চাকসু বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চাকসু নামে একটি ভবন থাকলেও সেটা ভাতের হোটেল নামেই অধিক পরিচিত। অথচ এটি হওয়া উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক অধিকার আদায়ের জন্য একটি প্লাটফর্ম।
কেমন চাকসু চাই বলতে গেলে বলতে হয়- যেখানে দল-মত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য আওয়াজ উঠবে- সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে চাকসুর প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। আমি প্রত্যাশা রাখি, তারাই হয়ে উঠবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর।
(লেখক: তামান্না খান, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ, লোকপ্রশাসন বিভাগ)
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণত ন ত র ক শ ক ষ বর ষ র তফস ল আম দ র র জন য সমস য গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
হজরত আদম (আ.) এবং পৃথিবীতে তাঁর প্রথম আবাস
আমাদের এই পৃথিবীতে মানবজাতির ইতিহাস শুরু হয়েছিল নবী হজরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে। আল্লাহ তায়ালা যখন ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করলেন, ‘আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে যাচ্ছি,’ তখনই মূলত সূচনা ঘটে মানব ইতিহাসের। ফেরেশতারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আপনি কি এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে সেখানে ঝগড়া-ফাসাদ ও রক্তপাত ঘটাবে?’
আল্লাহ তায়ালা তখন বলেন, ‘আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।’ (সুরা বাকারা, ৩০-৩৪)
কোরআনে উল্লেখ আছে, আল্লাহ তাঁকে সৃষ্টি করেছেন ‘শুষ্ক কাদামাটি থেকে, যা রূপান্তরিত হয়েছিল কালচে শুকনো মাটিতে।’ (সুরা হিজর, ২৬)
আল্লাহ নিজ হাতে আদম (আ.)-এর অবয়ব তৈরি করেন, তাতে প্রাণ ফুঁকে দেন এবং ফেরেশতাদের আদেশ করেন তাকে সেজদা করতে।আল্লাহ নিজ হাতে আদম (আ.)-এর অবয়ব তৈরি করেন, তাতে প্রাণ ফুঁকে দেন এবং ফেরেশতাদের আদেশ করেন তাকে সেজদা করতে। সকল ফেরেশতা তাকে সেজদা করলেও শয়তান অহংকারের কারণে তা অস্বীকার করে এবং চিরকালীন অভিশপ্ত হয়ে যায়। এই অহংকার-অবাধ্যতার প্রতিচ্ছবি পরবর্তীকালে মানবজীবনের পরীক্ষার অংশ হয়ে যায়। (সুরা হিজর-এর ব্যাখ্যা, তাফসিরে তাবারি)
জান্নাতে আদম (আ.) শান্তি ও আনন্দে জীবনযাপন করছিলেন। আল্লাহ তাঁর জন্য সঙ্গী হিসেবে সৃষ্টি করলেন হাওয়া (আ.)-কে। উভয়েই জান্নাতের ফলভরা বাগানে নির্ভাবনায় ছিলেন, যতক্ষণ না শয়তান তাঁদের প্রতারণায় ফেলে দেয়। শয়তান আল্লাহর নিষেধ করা গাছের ফল খেতে প্রলুব্ধ করে। ফলে তাদের জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়।
আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সবাই নামো পৃথিবীতে, একে অপরের শত্রু হিসেবে। সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে বাসস্থান ও জীবিকা কিছু সময়ের জন্য।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ২৪)
আরও পড়ুনআদম (আ.)–কে যে দোয়া শিখিয়ে দেন আল্লাহ ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থের ভাষ্যমতে, আদম (আ.) অবতরণ করেন পৃথিবীর দক্ষিণ প্রান্তে, বর্তমান শ্রীলঙ্কার সেরেন্দিব বা আদম ’স পিক নামক এক পাহাড়ে। ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রে ইমাম তাবারি ও ইবনে কাসিরের বর্ণনা অনুযায়ী, আদম (আ.)-এর পায়ের ছাপ সেই পাহাড়ের চূড়ায় দীর্ঘকাল ধরে মুসলিম, বৌদ্ধ ও হিন্দু ঐতিহ্যে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে হাওয়া (আ.) অবতরণ করেন আরবের জেদ্দা শহরে, যার নামের অর্থই ‘দাদি’। ইসলামি ইতিহাসবিদ ইমাম সুয়ুতি উল্লেখ করেন, বহুদিন পর তাঁদের পুনর্মিলন ঘটে মক্কার নিকটে আরাফাতের ময়দানে। সে কারণেই এ স্থানটির নাম ‘আরাফাত’, যার অর্থ ‘পরিচিত হওয়া’। (ইমাম তাবারি, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক; ইমাম ইবনে কাসির, কাসাসুল আম্বিয়া; ইমাম সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানসুর)
পৃথিবীতে এসে আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) মানবজীবনের প্রথম অধ্যায় রচনা করেন। আল্লাহ তাদের কৃষিকাজ, পোশাক তৈরির জ্ঞান এবং পারস্পরিক সহাবস্থানের শিক্ষা দেন। ইবনে কাসির (রহ.) বর্ণনা করেন, আদম (আ.) ছিলেন প্রথম নবী ও প্রথম শিক্ষক যিনি তার সন্তানদের আল্লাহর একত্ববাদ ও ন্যায়পরায়ণতার শিক্ষা দিতেন।
মানবজাতির প্রথম সংঘাতও ঘটে তাদের সন্তান কাবিল ও হাবিলের মাধ্যমে। এই ঘটনাই মানবসমাজে ন্যায়বিচার ও অনুশোচনার প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে গৃহীত হয়। (সুরা মায়িদাহ, ২৭–৩১; তাফসিরে ইবনে কাসির; ইমাম নববি, শারহে মুসলিম)
আরও পড়ুনআদম-হাওয়া (আ.)-এর বিয়ে ও সন্তান১৭ নভেম্বর ২০২৪মানবজাতির প্রথম সংঘাতও ঘটে তাদের সন্তান কাবিল ও হাবিলের মাধ্যমে। এই ঘটনাই মানবসমাজে ন্যায়বিচার ও অনুশোচনার প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে গৃহীত হয়।কোনো কোনো তাফসিরকার উল্লেখ করেছেন, আদম (আ.) পরবর্তীতে মক্কা অঞ্চলে চলে আসেন এবং সেখানে প্রথম ইবাদতের ঘর বাইতুল্লাহ নির্মাণ করেন। ইমাম ইবনে কাসির ও ইমাম কুরতুবির মতে, এই ঘরটি পৃথিবীর প্রথম ইবাদত কেন্দ্র, যা পরে নবী ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) পুননির্মাণ করেন। (ইবনে কাসির, কিসাসুল আম্বিয়া; কুরতুবি, তাফসিরে সুরা আল-বাকারা)
ইসলামি বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী যদিও পৃথিবীতে আদম (আ.)-এর পদচিহ্ন সম্পর্কিত স্থানগুলোর নির্দিষ্ট কোনো ভিত্তি নেই, তবু শ্রীলঙ্কার আদম’স পিক এখনো বহু মুসলমানের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত। অন্যান্য ধর্মের মানুষও এ স্থানকে পবিত্রজ্ঞান করে থাকে।
জেদ্দায় হাওয়া (আ.)-এর সমাধিস্থল হিসেবে পরিচিত স্থানের ঐতিহ্য ইসলামি ঐতিহাসিক সূত্রে বিদ্যমান, যদিও আধুনিক কালে তা চিহ্নিত নয়। আরাফাত ময়দান আজও হজের অন্যতম কেন্দ্র; যেখানে লক্ষ লক্ষ মুসলমান আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর পুনর্মিলনের স্মৃতিতে দাঁড়িয়ে তাওবা করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে।
আরও পড়ুনহজরত আদম (আ.) বিশ্বের প্রথম নবী০৭ জানুয়ারি ২০২৫