‘ঘাড়ে, বুকে, হাতে গরম কিছু এসে লাগল, লুটিয়ে পড়েছিলাম মাটিতে’
Published: 4th, August 2025 GMT
চারদিকে গুলির শব্দ। শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ছত্রভঙ্গ হয়ে দিগ্বিদিক ছুটছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আচমকাই শরীরে তীব্র একটা ঝাঁকুনি অনুভব করেন খালেদ মাহমুদ। বুঝে ওঠার আগেই লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। জামাও ভিজে যায় রক্তে। সেই চিত্র আজও চোখে ভাসে তাঁর।
গত বছরের ৪ আগস্টের ঘটনা এটি। সেদিনের ঘটনার পর এক বছর কেটে গেছে। তবে সেদিনের যন্ত্রণা শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন খালেদ। এখনো তাঁর শরীরে রয়েছে সাতটি গুলি। বাঁ হাত ও ডান পা অচল। হুইলচেয়ারে বসেই করেন চলাফেরা।
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচিতে লক্ষ্মীপুর শহরে অবস্থান নিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা–কর্মীরা বাড়ির ছাদ থেকে গুলি ছুড়তে শুরু করেন। টানা ছয় ঘণ্টা ধরে চলা এ হামলায় নিহত হন চার শিক্ষার্থী। গুলিবদ্ধ হন শতাধিক। ২০ বছর বয়সী খালেদ তাঁদের একজন।
খালেদ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রুহিতা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। সেদিনের ঘটনার কথা মনে করলে কেঁপে ওঠেন তিনি। প্রথম আলোকে খালেদ বলেন,‘সাড়ে চারটার দিকে হঠাৎ আমার বুক, ঘাড়, হাত—সব জায়গায় একসঙ্গে গরম কিছু এসে লাগল। তীব্র ব্যথায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। হাত-পা বাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। পাশে অনেকে চিৎকার করছিল। কেউ চ্যাংদোলা করে, কেউ রিকশায় তুলে নিয়ে যাচ্ছিল আহতদের।’
খালেদ জানান, তাঁর শরীরে ১০টি গুলি লাগে। এর মধ্যে একটি গুলি শরীর ভেদ হয়ে বের হয়ে যায়। পরে অস্ত্রোপচার করে একটি গুলি লিভার থেকে বের করা হয়। আরেকটি বের করা হয় পেট থেকে। বাকি সাতটি শরীরে রয়ে গেছে।
সেদিনের ঘটনার পর দীর্ঘ দেড় মাস তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তবে স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারেননি। বাড়িতেই এখন তাঁর চিকিৎসার কার্যক্রম চলছে। প্রতিদিন তাঁর চলাফেরার জন্য পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা লাগে। নিজের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে খালেদ বলেন, ‘সেদিন শুধু আমার শরীরে নয়, আমাদের ভবিষ্যতেও গুলি লেগেছিল। আমি দেশের তরুণদের জন্য আওয়াজ তুলেছিলাম, কোনো অপরাধ করিনি। এখন সাতটা গুলি শরীরে নিয়ে বেঁচে আছি, কিন্তু জীবন আর আগের মতো নেই।’
খালেদের চিকিৎসার ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তাঁর পরিবার। জানতে চাইলে বাবা শাহীন কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিল। পড়াশোনায় ভালো ছিল। গুলি খেয়ে এখন পঙ্গু হয়ে গেছে। চিকিৎসা চালাতে ধারদেনায় ডুবে গেছি। সরকার যদি না দেখে ছেলেোকে কীভাবে বাঁচাব? সে তো কোনো সন্ত্রাসী নয়। দেশকে ভালোবাসত।’
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, খালেদের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন তরুণ ছাত্রকে এভাবে কষ্ট করতে দেখা মর্মান্তিক। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে সহায়তা দেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লক ষ ম প র র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
ভারতীয় সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী লক্ষ্মী মাঞ্চু। তার পরবর্তী সিনেমা ‘ঢাকসা’। এ সিনেমার মুক্তি উপলক্ষে নানা ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ৪৭ বছরের এই অভিনেত্রী। কয়েক দিন আগে গ্রেট অন্ধ্রকে সাক্ষাৎকার দেন লক্ষ্মী। এ আলাপচারিতার পোশাক নিয়ে প্রশ্ন করায় লক্ষ্মী বলেন— “আপনার এত সাহস হয় কী করে!”
মুম্বাইয়ে যাওয়ার ফলে কি আপনার পোশাকের স্টাইলে কোনো প্রভাব পড়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে লক্ষ্মী বলেন, “আমি আমেরিকাতে থেকেছি। সেখান থেকে হায়দরাবাদে, এখন মুম্বাইয়ে আছি। আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি নিজেকে এইভাবে উপস্থাপন করার জন্য। এই পরিশ্রম আমাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে, যা আমাকে আমার মতো পোশাক পরতে উৎসাহ দেয়।”
এরপর সাংবাদিক সরাসরি লক্ষ্মীর পোশাক নিয়ে প্রশ্ন করেন, জবাবে এই অভিনেত্রী বলেন, “আপনি কি একজন পুরুষকে একই প্রশ্ন করতেন? আপনার এত সাহস হয় কী করে! আপনি কি মহেশ বাবুকে বলতেন—‘আপনার তো এখন ৫০ বছর বয়স, তাহলে আপনি কেন জামা খুলে ছবি তুলছেন?’ তাহলে একজন নারীকে কেন এই প্রশ্ন? মানুষ আপনার এই প্রশ্ন থেকে কী শিখবে? একজন সাংবাদিক হিসেবে আপনার দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।”
পরে সাংবাদিক স্বীকার করেন যে, এই ধরনের প্রশ্ন একজন অভিনেতাকে করতেন না। প্রশ্নটি করার কারণ ব্যাখ্যা করে সাংবাদিক জানান, তার পোশাক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের চর্চা চলছে, যার কারণে এই প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসা।
লক্ষ্মী মাঞ্চুর অন্য পরিচয় তিনি তেলেগু সিনেমার বরেণ্য অভিনেতা মোহন বাবুর কন্যা। ৫০ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন মোহন বাবু। ব্যক্তিগত জীবনে বিদ্যা দেবীর সঙ্গে ঘর বাঁধেন তিনি। এ সংসারে রয়েছে কন্যা লক্ষ্মী ও পুত্র বিষ্ণু মাঞ্চু। তারা দুজনেই অভিনয়শিল্পী।
তথ্যসূত্র: দ্য ফ্রি প্রেস জার্নাল
ঢাকা/শান্ত