মে মাসে সংঘর্ষের সময় ভারত পাঁচটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান এবং আরো একটি সামরিক বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। শনিবার ভারতের বিমানবাহিনী প্রধান এ.পি. সিং এ দাবি করেছেন।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সামরিক সংঘাতের কয়েক মাস পরে নয়াদিল্লি প্রথম এ জাতীয় বিবৃতি দিলো।

ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধান এ.

পি. সিং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বেঙ্গালুরুতে এক অনুষ্ঠানে জানান, বেশিরভাগ পাকিস্তানি বিমান ভারতের রাশিয়ার নির্মিত এস-৪০০ ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূপাতিত করা হয়েছে। তিনি ইলেকট্রনিক ট্র্যাকিং ডেটাকে হামলার নিশ্চিতকরণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, “আমাদের কাছে কমপক্ষে পাঁচটি যুদ্ধবিমান নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে এবং একটি বৃহৎ বিমান।”

তিনি জানান, যে বৃহৎ বিমানটি একটি নজরদারি বিমান হতে পারে। এটি ৩০০ কিলোমিটার দূরত্বে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছিল।

এ.পি. সিং বলেন, “এখন পর্যন্ত ভূমি থেকে আকাশে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করার দিক থেকে এটিই সবচেয়ে বড় রেকর্ড।”

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী মন্তব্যের জন্য অনুরোধের তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এ.পি. সিং কোন ধরণের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে তা উল্লেখ করেননি। তবে জানিয়েছেন, বিমান হামলায় দক্ষিণ-পূর্ব পাকিস্তানের দুটি বিমান ঘাঁটির হ্যাঙ্গারে পার্ক করা একটি অতিরিক্ত নজরদারি বিমান এবং ‘কয়েকটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানেও ভারতীয় ক্ষেপনাস্ত্র আঘাত হেনেছে।

ঢাকা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ প ত ত কর

এছাড়াও পড়ুন:

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর: বাণিজ্য আদালত প্রতিষ্ঠার পথে বাংলাদেশ

গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক মোড় ঘোরানোর দিন ছিল। শেখ হাসিরা সরকার পতনের পর (৮ আগস্ট ২০২৪) দায়িত্ব গ্রহণ করেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।

সরকারের এক বছরের সফলতা-ব্যর্থতার আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে অর্থনীতি, বিচার সংস্কার এবং মব ভায়োলেন্সের মতো ইস্যুগুলো। এই এক বছরে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে এনেছে একাধিক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিশেষ করে রমজান ও ঈদুল আজহা দুই বড় ধর্মীয় উৎসবেই বাজার ছিল নজিরবিহীন স্থিতিশীল। যা গত দশকের ইতিহাসে এক বিরল উদাহরণ।

ব্যবসা সহজ করতে নতুন অধ্যায়
ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরোধ, প্রতারণা বা অনৈতিক চুক্তি এসব সমাধানে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে আইনি প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ। এখন সেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান আনতে সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য আদালত প্রতিষ্ঠার।

আরো পড়ুন:

অন্তর্বর্তী সরকার: এক বছরে সফলতা ও ব্যর্থতা

রাজনীতিতে পরিবর্তন ও ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন,“বাণিজ্য আদলতের খসড়া আইন প্রণয়ন চলছে। প্রথমে ঢাকা ও বিভাগীয় শহরে এই আদালত চালু হবে, পরে প্রয়োজনে জেলা পর্যায়েও বিস্তৃত হবে। ব্যবসা সহজীকরণে এটি একটি বড় মাইলফলক হবে।”

রেকর্ড নজরদারি ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা
গত বছর যেখানে বাজার পর্যবেক্ষণ দল ছিল ১২টি, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে ২৮-এ দাঁড়িয়েছে। তদারকির পরিধি এখন জেলা-উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। রমজান ও কোরবানির সময় ৪০০ এর বেশি নজরদারি টিম সার্বক্ষণিক মাঠে ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম।

সরবরাহ শৃঙ্খল নিশ্চিত করতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) আরো শক্তিশালী করা হয়েছে। প্রায় এক কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকিমূল্যে পণ্য পৌঁছানো হচ্ছে।

স্মার্টকার্ড ও সহায়তাপ্রযুক্তি 
টিসিবির ভর্তুকি কার্যক্রমে স্মার্টকার্ড ব্যবস্থা চালু হলেও গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের অনেকের স্মার্টফোন নেই, ফলে প্রযুক্তি ব্যবহারে জটিলতা দেখা দিয়েছে।

বাণিজ্য সচিব বলেন, “প্রযুক্তিনির্ভর হলেও মানবিক বিবেচনাও রাখতে হচ্ছে, যাতে কেউ বাদ না পড়ে।”

রপ্তানিতে ইতিবাচক সুর ও বহুপাক্ষিক চুক্তি
বিশ্ববাজারে অস্থিরতা সত্ত্বেও রপ্তানি আয় বেড়েছে। পণ্যের বৈচিত্র্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় সাফল্য এসেছে যার নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি ইতিমধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে। আগস্টে জাপানের সঙ্গে ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (EPA)–এর সপ্তম রাউন্ড শুরু হবে। ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গেও আলোচনা চলছে।

মূল্যস্ফীতির পতন: পরিসংখ্যান বলছে অগ্রগতি
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই: খাদ্যসামগ্রীর মূল্যস্ফীতি ১৪.১০% (১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ)। ২০২৫ সালের জুন: তা কমে দাঁড়ায় ৭.৩৯% (দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন) অখাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতিও কমে জুনে ৯.৩৭%-এ দাঁড়িয়েছে।

চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ ও পাইকারি খুচরা দামের ফারাক
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাবি করছে, বাজারে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পাইকারি ও খুচরা দামের অযৌক্তিক ব্যবধানও এখন সরকারের নজরদারির মধ্যে।

ভবিষ্যতের লক্ষ্য: টেকসই ও দুর্নীতিমুক্ত বাজার
বাণিজ্য সচিব বলেন, “টেকসই বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। আমরা চাই প্রযুক্তিনির্ভর, দুর্নীতিমুক্ত ও সর্বজনীন বাজার।”

তিনি বলেন, “বাণিজ্য আদালত চালু হলে ব্যবসায়িক বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি, লেনদেনে স্বচ্ছতা ও বাজার শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে প্রযুক্তিগত অবকাঠামো ও দক্ষ জনবল নিশ্চিত করাই হবে সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।”

রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান বলেন, “এক বছরে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ গতি পেয়েছে নজরদারি, ভর্তুকি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে। তবে কিছু পণ্যের দামের অস্থিরতা, প্রযুক্তি ব্যবহারে গ্রামীণ সীমাবদ্ধতা এবং রপ্তানি বাজারের বৈশ্বিক ঝুঁকি এখনও বিদ্যমান।বাণিজ্য আদালত বাস্তবায়ন হলে ব্যবসা বাণিজ্যে একটি প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা আসতে পারে যা দীর্ঘমেয়াদে বাজার স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়াবে।”

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অধ্যাপক ইউনূসের মামলা দ্রুত প্রত্যাহার হয়েছে, সবচেয়ে কম হয়েছে শ্রমিকদের: আনু মুহাম্মদ
  • অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর: বাণিজ্য আদালত প্রতিষ্ঠার পথে বাংলাদেশ