নদী রক্ষায় সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার সময় এসেছে
Published: 19th, August 2025 GMT
তুহিন ওয়াদুদের লেখা সতী নদীর কথা পড়ে মন খারাপ হয়ে যায়। একসময়ের চওড়া নদী এখন মাত্র তিন ফুট প্রশস্ত ড্রেনে পরিণত হয়েছে। নদী দখলদারেরা কোনো আইনের তোয়াক্কা না করে দিব্যি নদী ও জলাশয় ভরাট করে দখলে নিচ্ছেন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এদের বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়প্রাপ্ত বা প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা বিভিন্ন ভুয়া দলিল দেখিয়ে নিজেদের দখলকে বৈধ প্রমাণ করতে চান।
তবু সরকার কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিছু নদ-নদীর সীমানা চিহ্নিত করে সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এখানেই থেমে গেছে বাস্তবায়ন। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জনবল, দক্ষতা এবং সদিচ্ছার অভাবে দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম নয়।
আরও পড়ুনসতী এখন ৩ ফুটের নদী১১ আগস্ট ২০২৫আমি ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণে গিয়েছিলাম। আমার বাসস্থানের কাছেই ছিল যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একটি দপ্তর। সেখানেই জানতে পারি, ইউএস আর্মি করপস অব ইঞ্জিনিয়ার্স যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১২ হাজার মাইল অভ্যন্তরীণ নদী, লেক, খাল ও জলপথ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। তাদের মূল কাজ হলো জলপথের নাব্যতা রক্ষা, ড্রেজিং, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী ব্যবস্থাপনা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেও রয়েছে ‘রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার্স’ নামে বিশেষায়িত একাধিক ব্যাটালিয়ন। পৃথিবীর আর কোথাও এমন ইউনিট আছে কি না, আমার জানা নেই। তবে বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও নদীমাতৃক চরিত্র বিবেচনায় আমাদের জ্যেষ্ঠ সেনা নেতৃত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্মলগ্নে এমন ইউনিট গঠন করেছিলেন, যারা নদীভিত্তিক প্রতিরক্ষায় দক্ষ ও প্রস্তুত। তাঁদের রয়েছে বিভিন্ন রকমের জলযান ও দক্ষ জনবল।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি—বিশেষভাবে বর্তমান উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনুন।
বাংলাদেশের নদ-নদী ও জলাশয় রক্ষার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার্স ইউনিটকে দিন। এদের অনেক সময় টহল ও রক্ষণাবেক্ষণের অভিজ্ঞতা রয়েছে, সীমিত সরঞ্জামও রয়েছে, প্রয়োজনে আরও কিছু সরঞ্জাম যুক্ত করা যেতে পারে। তাঁরা নিয়মিত টহল দিতে পারবে, নদীর সীমানা রক্ষা, নাব্যতা নিশ্চিতকরণ এবং বন্যা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
আমরা যদি এখনই নদীগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত না করি, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য বাংলাদেশ রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। পরিবেশ রক্ষা করা শুধু সরকারের নয়, আমাদের সবার নৈতিক ও পবিত্র দায়িত্ব।
তুষার কান্তি চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।
হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।
যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।
একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।