পঞ্চগড়ে রাইস মিলের বর্জ্যে ভূগর্ভস্থ পানি দূষণের অভিযোগ
Published: 28th, August 2025 GMT
পঞ্চগড় শহরের জালাসী এলাকায় বর্জ্য নির্গত করে ভূগর্ভস্থ পানি দূষণের অভিযোগ উঠেছে ‘তানিম অটো রাইস মিল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এরইমধ্যে ওই এলাকার নলকূপের পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় মিল কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
গত ২৫ আগস্ট রাইস মিলটির স্বত্বাধিকারী মো.
মো. ইউসুফ আলী স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে বলা হয়েছে, রাইস মিল থেকে নির্গত তরল বর্জ্য সরাসরি ভূগর্ভস্থ পানিতে নির্গত করার মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ করা হচ্ছে। এতে স্থানীয়দের নলকূপের পানি দূষিত হয়ে পড়েছে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
নোটিশে মিল মালিকের কাছে সাত দিনের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব চাওয়া হয়েছে। অন্যথায়, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মিল সংলগ্ন প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এখন বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। ৮০-৯০ ফিট গভীরের নলকূপ থেকেও দূষিত পানি বের হচ্ছে। মিল কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় চুপ রয়েছেন স্থানীয়রা। অনেকেই বাধ্য হয়ে নতুন করে আরো গভীর নলকূপ বসাচ্ছেন। তবে এই বর্জ্য নির্গত দমন না করলে পানি দূষণ কমানো সম্ভব হবে না বলে দাবি স্থানীয়দের।
রাইস মিলটির পাশেই আইনজীবী মাহমুদ আল মামুন হিমুর বাড়ি। তিনি বলেন, “তরল বর্জ্য সরাসরি ভূগর্ভস্থ পানিতে নির্গত হওয়ায় আশপাশের নলকূপগুলোর পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। আগে আমরা যে পানি খেতাম, এখন সেটা খাওয়ার অযোগ্য হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে দূরের এলাকা থেকে পানি আনতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “পানির এই দূষনের কারণে স্বাচ্ছন্দে গোসল করা যায় না, ত্বকের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রান্নার জন্যও এখন আর নলকূপের পানি ব্যবহার করা যায় না। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান দরকার। এরইমধ্যে এখানকার মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে গেছে।”
এ বিষয়ে তানিম অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মো. জিন্নাহ বলেন, “এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপার। আমি চিঠি পেয়েছি, জবাব দিবো।”
পরিবেশ অধিদপ্তর পঞ্চগড় জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ইউসুফ আলী বলেন, “মিল থেকে নির্গত বর্জ্যে পানি দূষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এজন্য মিল কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/নাঈম/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র নলক প বর জ য ন র গত
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস