বর্ষা মৌসুমে নদ-নদীর বাড়তি পানি ও জলাবদ্ধতার কারণে সাতক্ষীরার কিছু কিছু এলাকা বছরে ছয় মাসেরও বেশি সময় জলমগ্ন থাকে। ফলে চলাফেরার জন্য দেশের দক্ষিণের এ জনপদে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে নৌকার ব্যবহার। 

স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতেই জেলার পাটকেলঘাটায় সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের পাশে গত ১০ বছরে গড়ে উঠেছে প্রায় ২০টি নৌকা তৈরির কারখানা। দিন-রাত কর্মব্যস্ততায় মুখর থাকে কারখানাগুলো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা কেউ বসে নেই। কেউ কাঠ কাটছেন, কেউ নৌকার দাড়া (কাঠামো) তৈরি করছেন, কেউ কাঠ জোড়া লাগাচ্ছেন, কেউবা মেশিন দিয়ে ফিনিশিংয়ের কাজ করছেন, কেউ আবার নৌকার গায়ে আলকাতরা লাগাচ্ছেন। যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই কারো। এসব কারখানা থেকে প্রতিবছর দুই হাজারেরও বেশি নৌকা বিক্রি হয়।

আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র এই তিন মাস নৌকা ব্যবহারের মৌসুম বলা হলেও জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় সারা বছরই এখানে নৌকা তৈরি ও বেচাকেনা চলে। এখানকার তৈরি নৌকা স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায়ও সরবরাহ হচ্ছে। নৌকার চাহিদা ও কারখানা সম্প্রসারণের সাথে সাথে স্থানীয় বহু মানুষের কর্ম সংস্থানও তৈরি হয়েছে এ শিল্পকে ঘিরে।

একেকটি নৌকা তৈরিতে কারিগরদের দুই থেকে তিন দিন লাগে। এসব নৌকাই সারাদেশে বিশেষভাবে পরিচিত করে তুলেছে পাটকেলঘাটাকে। সারাবছর নৌকা তৈরি হলেও বর্ষা মৌসুমে এর চাহিদা ও কদর বাড়ে কয়েক গুণ। সেসময় কারিগরদের কর্মব্যস্ততাও বাড়ে।

স্থানীয়রা জানান, সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়ক ধরে যেতে পাটকেলঘাটা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তার দুই ধারে কয়েক যুগ আগে গড়ে ওঠে সুমি ফার্নিচার অ্যান্ড নৌকা কারখানা, তৈয়াবা ফার্নিচার অ্যান্ড নৌকা কারখানা, রহমান ফার্নিচার অ্যান্ড নৌকা কারখানা, আল ইমরান ফার্নিচার অ্যান্ড নৌকা কারখানা, রফিক নৌকার কারখানা, ঐশী নৌকা কারখানাসহ প্রায় ২০টি নৌকা তৈরির কারখানা। 

এসব কারখানা মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাটকেলঘাটায় ট্রলার, পাল তোলা নৌকা, কোষা কিংবা ডিঙি সব ধরনের নৌকাই তৈরি হয়। আকার-আকৃতি অনুযায়ী সেসব নৌকার মূল্য ১০ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। এখানে তৈরি নৌকা জেলার চাহিদা মিটিয়ে খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। অনেকে এসে রেডিমেড নৌকা কিনে নিয়ে যান। আবার অনেকে নিজেদের পছন্দমতো অর্ডার দিয়ে তৈরি করিয়ে নেন।

এসব নৌকা তৈরিতে মেহগনি, খৈ ও চম্বল কাঠ ব্যবহার করা হয়। মাঝারি আকারের একটি নৌকা বানাতে দুই জন কারিগরের দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে।

স্থানীয় নৌকা তৈরির কারখানা মালিক মো.

শাহিনুর আলম বলেন, “কাঠ ও অন্যান্য উপকণের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে কারিগরদের মজুরিও। এতে নৌকা উৎপাদনের খরচও আগের তুলনায় বেড়েছে। এজন্য কিছুটা বাড়তি দামেই নৌকা বিক্রি করতে হয়।”

পাটকেলঘাটা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ সরদার বলেন, “প্রয়োজনীয় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাটকেলঘাটার নৌকার সুনামকে কাজে লাগিয়ে এ শিল্পে আরো বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব।”

তিনি আরো বলেন, “নৌকার জন্য প্রসিদ্ধ সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। সরকার একটু নজর দিলে এ শিল্পের সম্প্রসারণ সম্ভব। যা কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও বয়ে আনবে।”

সাতক্ষীরা বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক গৌরব দাস বলেন, “সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় যারা নৌকা নিয়ে কাজ করেন, তাদের কারখানা আমরা বিভিন্ন সময় পরিদর্শন করেছি। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের আওতায় বিসিক থেকে যে ঋণের সুবিধা রয়েছে, আমরা সেই ঋণ দিয়ে তাদের সহযোগিতা করতে পারি।”

ঢাকা/শাহীন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ