কাতারের রাজধানী দোহায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের নেতাদের ওপর ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে আরব ও ইসলামি দেশগুলো। গতকাল সোমবার দোহায় আরব ও ইসলামি দেশগুলোর জরুরি সম্মেলনে একে ইসরায়েলের ‘কাপুরুষোচিত’ হামলা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেননি।

দোহায় অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) ‘যৌথ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালু করার’ বিষয়ে অঙ্গীকার করা হয়েছে। এটাকেই এ সম্মেলনের সবচেয়ে বাস্তব পদক্ষেপ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

গতকাল সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। তিনি তাঁর দেশে ইসরায়েলের বোমা হামলাকে নির্লজ্জ এবং কাপুরুষোচিত উল্লেখ করে সমালোচনা করেন।

সম্মেলনে জিসিসির সদস্যদেশ বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। জিসিসির সদস্যদেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ চুক্তি করা হয়েছে।

শেখ তামিম তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতায় বলেন, ‘আমার দেশের রাজধানীতে হামাস নেতাদের পরিবার এবং তাঁদের আলোচক দলের বাসস্থানকে নিশানা করে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়েছে।’ ওই হামলার সময় হামাস নেতারা গাজায় যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন।’

শেখ তামিম বলেছেন, ‘ইসরায়েল সরকারের ক্ষমতার দম্ভ, অহংকার এবং রক্তপিপাসু অবস্থার কারণে যা ঘটে গেছে এবং এখনো যা ঘটছে, তা মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’

কাতারের আমির মনে করেন, মধ্যস্থতাকারী দেশের ওপর হামলার ঘটনায় এটাই প্রমাণ হয়, সত্যিকার অর্থে ইসরায়েলের শান্তি প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা নেই। দেশটি গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধে ইতিমধ্যেই ৬৪ হাজার ৮০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ মুহাম্মদ আল-আনসারি বলেছেন, জিসিসির সদস্যদেশের সামরিক সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে উপসাগরীয় অঞ্চলে প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধি করার বিষয়ে আলোচনা করছে। শিগগিরই দোহায় এই জোটের সমন্বিত সামরিক কমান্ডের বৈঠক হওয়ার কথা।

সম্মেলনে জিসিসির সদস্যদেশ বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। জিসিসির সদস্যদেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ চুক্তি করা হয়েছে।

নতুন প্রতিরক্ষাব্যবস্থার বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। এই ব্যবস্থায় বলা হয়েছে, একটি সদস্যদেশের ওপর হওয়া হামলাকে সব সদস্যদেশের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

কাতারের মুখপাত্র আল-আনসারি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘জিসিসির যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সদস্যদেশগুলোর নিরাপত্তা এবং সমন্বিত প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার লক্ষ্যে দোহায় উচ্চ কমান্ডের একটি বৈঠক হবে।

আল–আনসারি আরও বলেন, ‘জিসিসির সব দেশ এক কাতারে আছে।’

কাতারের আমির শেখ তামিম বলেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আরব অঞ্চলকে ইসরায়েলের প্রভাব বলয়ের এলাকায় পরিণত করার স্বপ্ন দেখছেন। তিনি একে ইসরায়েলের ‘বিপজ্জনক বিভ্রম’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সম্মেলনে ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক পদক্ষেপ ঘোষণা করা হয়নি।

তবে জিসিসির মহাসচিব জাসেম মোহামেদ আলবুদাইউয়ি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশ ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ড থামাতে দেশটির ওপর প্রভাব খাটাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সম্মেলনের চূড়ান্ত বিবৃতিতে শক্তিশালী পদক্ষেপ ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হয়েছিল, তবে তা হয়নি। বিবৃতিতে মূলত নিন্দা জানানো ও সংহতি প্রকাশের প্রতিশ্রুতি ছিল।

আরব লিগ এবং ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্যদেশগুলোর পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা কাতারের ওপর ইসরায়েলের কাপুরুষোচিত ও অবৈধ হামলার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা কাতারের সঙ্গে সম্পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি এবং তাদের পদক্ষেপগুলোর পাশে আছি।’

কাতারের আমির শেখ তামিম বলেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আরব অঞ্চলকে ইসরায়েলের প্রভাব বলয়ের এলাকায় পরিণত করার স্বপ্ন দেখছেন। তিনি একে ইসরায়েলের ‘বিপজ্জনক বিভ্রম’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় কাতার যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তার প্রশংসা করা হয়েছে বিবৃতিতে। গাজা যুদ্ধ অবসানে মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে কাতারের মধ্যস্থতার ভূমিকার প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে।

রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক আন্দ্রিয়া দেসি মনে করেন, দোহা সম্মেলন আরব ও ইসলামি দেশগুলোর অবস্থান ও সুরে পরিবর্তনের সূচনা করেছে।

দেসি বলেন, ‘তাদের কথার মধ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সূচনাপর্ব দেখতে পাচ্ছি। তাদের কথা বলার সুর ও মনোভাবে পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। এসব কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখতে হবে।’

তবে অধ্যাপক দেসি এই সম্মেলনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। কারণ, আরব ও মুসলিম নেতারা একমত হয়েছেন যে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা কাঠামোয় কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

আরও পড়ুনদোহায় ইসরায়েলি হামলার পর ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অধ্যাপক দেসি বলেন, ‘আমরা এখনো অনেক দূরে আছি, তবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে।’

সম্মেলন চলাকালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করতে ইসরায়েল সফরে গিয়েছিলেন। নেতানিয়াহু আবারও হুমকি দিয়েছেন, কাতার যদি হামাস নেতাদের তাদের দেশ থেকে বের না করে দেয়, তবে তাঁদের হামলার নিশানা করা হবে।

তবে গতকাল সোমবার ট্রাম্প আবারও বলেছেন, ইসরায়েল কাতারের ওপর আর হামলা করবে না।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আল-আনসারি বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর দেশ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরাহমান বিন জসিম আল থানি গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে চমৎকার বৈঠক করেছেন এবং মিত্রদের সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা চলছে।

আরও পড়ুনআরব-মুসলিম নেতাদের ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান১৪ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ত র র আম র ইসর য় ল র প পরর ষ ট র ব যবস থ বল ছ ন আরব ও ইসল ম র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।

আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।

ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ