আরব দেশগুলো এখন বুঝছে—ইরান নয়, ইসরায়েলই তাদের জন্য বড় হুমকি
Published: 17th, September 2025 GMT
কাতারের দোহায় হামাস কর্মকর্তা ও আলোচকদের হত্যার মাধ্যমে ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক নতুন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এটা উপেক্ষা করা আরব রাষ্ট্রগুলোর পক্ষেও সম্ভব নয়।
ইসরায়েল বরাবরই তার নিরাপত্তার স্বার্থে আগাম (আক্রান্ত হওয়ার আগেই) ও সীমান্তের বাইরে হামলার যৌক্তিকতা দেখিয়ে এসেছে। গত দুই বছরে ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল অন্তত ছয়টি দেশে (ফিলিস্তিনসহ) হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের এসব হামলার লক্ষ্য ছিল দেশটির নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের হুমকি দূর করা।
কিন্তু কাতারের রাজধানী দোহায় হামলা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। কাতার শুধু সমৃদ্ধ উপসাগরীয় রাজতন্ত্রই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সহযোগী ও ন্যাটোবহির্ভূত একটি মিত্র। একই সঙ্গে এটা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল-হামাস আলোচনার একটি কেন্দ্র।
ফলে এই হামলা আরেকটি ‘টার্গেট কিলিং’ নয়, বরং এক মৌলিক পরিবর্তনের সূচনা। এখন থেকে আরব রাষ্ট্রগুলো শুধু ইরানকেই নয়, ইসরায়েলকেও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার প্রধান উৎস হিসেবে দেখতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুনকাতারে ইসরায়েলি হামলা আরব বিশ্বের জন্য কঠিন হুমকি১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫এটাই প্রথম নয় যে ইসরায়েল কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলাকালীন হামলা চালাল। গত দুই বছরে লেবাননে হিজবুল্লাহ, সিরিয়ায় নতুন সরকার আল-শারা, ইয়েমেনে হুতি, এমনকি ইরানের বিরুদ্ধেও, যখন তেহরান ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা করছিল, উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের হত্যা করা হয়েছে, হামলা চালানো হয়েছে।
এসব হামলা সাধারণত আলোচনার অগ্রগতি ভন্ডুল করার সময়ই হয়েছে, যেন ইসরায়েল দেখাতে পারে যে তাদের কাছে কূটনীতি ও সামরিক চাপ আলাদা নয়। দোহার হামলা এই ধারা অনুসরণ করেছে। তবে এর প্রতীকী গুরুত্ব দীর্ঘ মেয়াদে সুদূরপ্রসারী হবে।
ইসরায়েলের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দোহার এক শান্তিপূর্ণ এলাকায় আঘাত হানে, যেখানে সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প সফর করেছিলেন এবং কাছেই ছিল একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। উপসাগরীয় শাসকদের কাছে বার্তাটি পরিষ্কার: মার্কিন মিত্রতা ও সামরিক ঘাঁটি তাদের রক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।
ইসরায়েল বহুদিন ধরেই কাতারের প্রতি ক্ষোভ পুষে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অনুমোদনে দোহা গাজায় বহু বছর ধরে অর্থ পাঠিয়েছে, অঞ্চলটিকে স্থিতিশীল রাখার প্রচেষ্টায়।
কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর সেই ব্যবস্থাকে হামাসকে শক্তিশালী করার অজুহাত হিসেবে তুলে ধরে ইসরায়েল। পরবর্তীকালে নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা কাতারের অর্থ নিয়ে লবিং করেছেন বলে কেলেঙ্কারি ফাঁস হলে এই ক্ষোভ আরও স্পষ্ট হয়।
তবে ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। কাতারে অবস্থিত আল-উদেইদ ঘাঁটি মার্কিন সামরিক শক্তির প্রধান ভরকেন্দ্র। এখান থেকেই আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ার অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ২০২২ সালে জো বাইডেন কাতারকে ‘ন্যাটোবহির্ভূত প্রধান মিত্র’ হিসেবে ঘোষণা করেন।
এমনকি গত জুনে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের সময় ইরান মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার কাতারে হামলা হওয়া, সেটাও হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের দ্বারা যা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।
কয়েক দশকে ধরে উপসাগরীয় দেশগুলো আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ইরানের কেন্দ্রে রেখে সংজ্ঞায়িত করেছিল। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বাহিনীগুলোকে সহায়তা এবং সীমান্তের বাইরে আঘাত করার সক্ষমতা নিয়ে তারা আশঙ্কায় থাকত। কিন্তু ইসরায়েলের গাজায় নির্বিচার অভিযান, পশ্চিম তীরে তৎপরতা এবং লেবানন-সিরিয়া-কাতারে ক্রমবর্ধমান হামলা এই ধারণা বদলে দিয়েছে।কয়েক দশকে ধরে উপসাগরীয় দেশগুলো আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ইরানের কেন্দ্রে রেখে সংজ্ঞায়িত করেছিল। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বাহিনীগুলোকে সহায়তা এবং সীমান্তের বাইরে আঘাত করার সক্ষমতা নিয়ে তারা আশঙ্কায় থাকত। কিন্তু ইসরায়েলের গাজায় নির্বিচার অভিযান, পশ্চিম তীরে তৎপরতা এবং লেবানন-সিরিয়া-কাতারে ক্রমবর্ধমান হামলা এই ধারণা বদলে দিয়েছে।
আরব রাষ্ট্রগুলোর কাছে এখন ইসরায়েলই সবচেয়ে বড় হুমকি। অবশ্যই ইরানের ভূমিকাও মারাত্মক, তবে তার আগ্রাসন পরিচিত ও পূর্বানুমানযোগ্য। বিপরীতে ইসরায়েলের পদক্ষেপ দিন দিন আরও বেপরোয়া হচ্ছে, যা আরব বিশ্বের প্রচলিত কূটনৈতিক ও নিরাপত্তার নিয়ম-নীতি ভেঙে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন২৫০০ বছরের পুরোনো দুশমনি: ইসরায়েল কি ‘মরদখাই’? ইরান কি ‘হামান’?১৭ জুন ২০২৫যুক্তরাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তা এ ধারণাকে আরও শক্ত করেছে। ট্রাম্প ও বাইডেন কেউই ইসরায়েলের হামলা নিয়ন্ত্রণ করেননি। কাতারে হামলার পর উপসাগরীয় শাসকদের বুঝতে হবে যে ওয়াশিংটন হয় অক্ষম, নয় অনিচ্ছুক, তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
এখন উপসাগরীয় দেশগুলো সম্ভবত নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াবে। একই সঙ্গে চীন ও তুরস্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব সম্প্রসারণ করবে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়াকে পুনর্বিবেচনা করবে। গাজায় যুদ্ধ চলতে থাকায় আব্রাহাম চুক্তি ও সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের স্বপ্ন কার্যত অকার্যকর হয়ে গেছে।
আরব অঞ্চলের জন্য এর তাৎপর্য স্পষ্ট; যে নিরাপত্তা কাঠামো এত দিন ইরানকেন্দ্রিক ছিল, সেটি এখন নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে, যেখানে ইসরায়েলকেই অস্থিতিশীলতার প্রধান উৎস হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুনইসরায়েল এখনো বুঝতে পারছে না, তারা যুদ্ধে হেরে গেছে১৯ মে ২০২৫একই সময়ে উপসাগরীয় শাসকেরা বৃহত্তর কৌশলগত স্বয়ংসম্পূর্ণতার অনুসরণে এগিয়ে চলেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতার ঝুঁকি থেকে নিজেদের রক্ষা করার ব্যাপারে ক্রমেই আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হচ্ছেন।
দোহায় হামলাটি শেষ পর্যন্ত একটি সন্ধিক্ষণ হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে; যা এই বোধকে সুস্পষ্ট করে যে ঐতিহ্যবাহী আঞ্চলিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে এবং নিরাপত্তার নামে অংশীদারদের সার্বভৌমত্ব বহুবার ত্যাগ করা হয়েছে।
ফলে এখন প্রশ্নটা কেবল এটা নয় যে আরব রাষ্ট্রগুলো প্রতিক্রিয়া দেখাবে কি না? বরং এখন এটাও প্রশ্ন যে তারা ‘কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে’?
সানাম ওয়াকিল চ্যাথাম হাউজের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক
গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল র র জন য ঘন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ দুই মাস। প্রশিক্ষণটি আগামী ১২ অক্টোবর শুরু হবে, চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সরকারি সনদ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে আবেদন করতে হবে।
প্রশিক্ষণের বিষয়১. বেসিক কম্পিউটার,
২. অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও ইউনিকোড বাংলা,
৩. ইন্টারনেট,
৪. গ্রাফিক ডিজাইন,
৫. ফ্রিল্যান্সিং,
৬. মার্কেটপ্লেস ও কনসালটিং।
আরও পড়ুনহার্ভার্ড এনভায়রনমেন্টাল ফেলোশিপ, দুই বছরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আবেদনের যোগ্যতা১. ন্যূনতম দাখিল বা সমমানের পরীক্ষায় পাস হতে হবে,
২. হাফেজদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হবে,
৩. উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে,
৪. প্রার্থীকে কম্পিউটার চালনায় বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে,
৫. যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।যে ৮টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে১. ঢাকা,
২. চট্টগ্রাম,
৩. রাজশাহী,
৪. খুলনা,
৫. বরিশাল,
৬. সিলেট,
৭. দিনাজপুর,
৮. গোপালগঞ্জ।
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ৭ ঘণ্টা আগেদরকারি কাগজপত্র১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,
২. জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি,
৩. এক কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে,
৪. ইমামদের ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে নেওয়া ইমামতির প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে,
৫. মাদ্রাসাছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে ছাত্রত্ব প্রমাণের কপি জমা দিতে হবে।
নিবন্ধন ফিমনোনীত প্রার্থীদের নিবন্ধন ফি হিসেবে ৫০০ টাকা দিতে হবে।
দেশের ৮টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে