অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে সরকার কী করছে
Published: 18th, October 2025 GMT
দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা রংপুরে অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় জনগণের মধ্যে। তবে স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে-আতঙ্ক নয়, চাই সচেতনতা এবং সতর্কতা।
এখন পর্যন্ত ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স জীবাণু শনাক্ত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই আক্রান্ত গবাদিপশুর সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কার্যক্রম
অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রাদুর্ভাব বিস্তার রোধ ও নিয়ন্ত্রণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জরুরি ও সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অ্যানথ্রাক্স একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত জুনোটিক রোগ, যা গবাদিপশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে গবাদিপশুর টিকাদান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, উঠান বৈঠক, পথসভা, লিফলেট বিতরণ এবং মাইকিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গবাদিপশুর এ রোগ প্রতিরোধে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করেছে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে আক্রান্ত এলাকা পর্যবেক্ষণ, অসুস্থ পশু জবাই প্রতিরোধ এবং প্রতিটি খামারের পশুকে টিকার আওতায় আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
‘ওয়ান হেলথ’ কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত উঠান বৈঠক ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করছেন অসুস্থ পশু জবাই না করা, মৃত পশুকে খোলা স্থানে বা পানিতে না ফেলা, বরং গভীরভাবে মাটিচাপা দেওয়া এবং যেকোনো পশুজনিত অসুস্থতার ক্ষেত্রে দ্রুত নিকটস্থ ভেটেরিনারি হাসপাতাল বা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাকে অ্যানথ্রাক্সে বেশি আক্রান্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
দ্রুতই প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এলআরআই) রংপুর বিভাগে প্রায় ৩০ লাখ অ্যানথ্রাক্স টিকা সরবরাহ করবে বলে জানা গেছে। যার মধ্যে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাতেই ২০ লাখ টিকা দেওয়া হবে।
রংপুর জেলার নয়টি উপজেলার পীরগাছা (৫৩ হাজার ৪০০), কাউনিয়া (৩৪ হাজার), রংপুর সদর (২৬ হাজার ৫০০), মিঠাপুকুর (৩৪ হাজার ৫০০), গঙ্গাচড়া (৪ হাজার ৮০০), তারাগঞ্জ (৪ হাজার ৩০০), বদরগঞ্জ (৫ হাজার), পীরগঞ্জে (৫ হাজার) এখন পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৬৭ হাজার গরুর টিকা প্রয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়া, উঠান বৈঠক, পথসভা এবং প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার ৩৬টি কসাইখানায় গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৩৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। টিকাদানের জন্য গঠিত ৩২টি মেডিক্যাল টিমের মধ্যে মিঠাপুকুরে ১৭টি, পীরগাছায় আটটি এবং কাউনিয়ায় সাতটি কাজ করছে।
গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৬ হাজার ৪০০ গরুতে টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। আক্রান্ত এলাকায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গরু পুঁতে ফেলা, টিকাদান, মাইকিং, উঠান বৈঠক এবং লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং পাঁচটি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
রক্তের ১১টি নমুনার সবগুলোই নেগেটিভ হলেও মাংসের ১১টি নমুনার মধ্যে ১০টি পজিটিভ পাওয়া গেছে।
এছাড়া, মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের উৎস ও পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে। টিমটি আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে শিগগিরই প্রতিবেদন দাখিল করবে।
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জনপ্রতিনিধি এবং জনগণের সম্মিলিতভাবে কাজ করছে বলে সরকার জানায়।
আক্রান্ত পশু জবাই নয়, মাটিচাপা দিতে হবে
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা.
তিনি আরো বলেন, “অনেকে সস্তায় মাংস বিক্রি করেন, সাধারণ মানুষও সস্তায় কিনে ফ্রিজে রাখেন। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রবণতা।”
অ্যানথ্রাক্স নিয়ে সতর্ক সরকার
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, “দেশে অ্যানথ্রাক্স পরিস্থিতি নিয়ে সরকার সতর্ক রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসক, প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। জনসচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে এবং গবাদিপশুকে ভ্যাকসিনও দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিজে বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারকি করছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দলও আক্রান্ত এলাকায় পাঠানো হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।”
ঢাকা/ এএএম/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সতর ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
১৩ দিনে পাঁচবার ভূমিকম্পে কাপল নরসিংদী
নরসিংদীতে আবারো ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা ১৪ মিনিটে জেলার শিবপুর উপজেলায় ৪ দশমিক ১ মাত্রার হালকা ভূমিকম্পে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গত ১৩ দিনের মধ্যে পাঁচটি ভূমিকম্প জেলার মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তারা জানান, কখন আবার ভূমিকম্প হয় সেই আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
আবারো ভূমিকম্প অনুভূত, উৎপত্তিস্থল নরসিংদী
ঢাবিতে রবিবার থেকে অনলাইনে চলবে ক্লাস কার্যক্রম
গত ২১ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে দেশে। এর উৎপত্তিস্থলও ছিল নরসিংদীর মাধবদীতে। এতে বিভিন্ন ভবনে ফাটল ধরে এবং ১০ জনের প্রাণহানী হয়। ২২ নভেম্বর জেলার পলাশ ও মাধবদীতে ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ২৭ নভেম্বর পলাশে ৩ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল।
শিবপুরের বাসিন্দা রাশেদা বেগম বলেন, “আজ বৃহস্পতিবার সকালে হওয়া ভূমিকম্পে খুব ভয় পেয়ে যাই। বুঝতেই পারছিলাম না কী হচ্ছে। আগের দিনগুলোতেও নরসিংদীতে ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্প আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।”
ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, “কম্পনটা খুব বেশি সময় ছিল না, কিন্তু কয়েক সেকেন্ডই মনে হয়েছে অনেক লম্বা। পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম।”
স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী আফসানা বলেন, “নভেম্বর মাস থেকে ভূমিকম্প হচ্ছে। আমরা আতঙ্কে আছি।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা জানান, “এটি ৪ দশমিক ১ মাত্রার হালকা ভূমিকম্প। উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায়।”
নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, “আজকে সকালের দিকে ভূমিকম্প হয়েছে। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপত্তা নির্দেশনা অনুসরণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। মানুষের নিরাপত্তায় প্রয়োজনে আমরা সব ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
গত এক মাসে দেশে উল্লেখযোগ্যভাবে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সর্বশেষ গত ১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ৪ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যার উৎপত্তিস্থল ছিল মায়ানমারের মিনজিন এলাকায়।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানায়, ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ট থেকে ৩০ কিলোমিটার। উৎপত্তি স্থল ছিল টঙ্গী থেকে ৩৩ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরপূর্বে ও নরসিংদী শহর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে।
ঢাকা/হৃদয়/মাসুদ