2025-06-15@21:41:37 GMT
إجمالي نتائج البحث: 27

«ঔপন য স ক»:

    ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, গোয়েন্দা থ্রিলার লেখক ফ্রেডেরিক ফোরসাইথ মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। ফ্রেডেরিক ফোরসাইথের মুখপাত্র জনাথন লয়েড এর বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা ও দ্য গর্ডিয়ান জানায়, ফোরসাইথ সোমবার (৯ জুন) বাকিংহামশায়ারের জর্ডানস গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা যান। জনাথন লয়েড বলেন, “আমরা বিশ্বের সেরা থ্রিলার লেখকদের একজনকে হারালাম। ‘দ্য ওডেসা ফাইল’ এবং ‘দ্য ডগস অব ওয়ার’-এর মতো ২৫টিরও বেশি বই (যার অধিকাংশ বই থ্রিলার) লিখেছেন তিনি, যা বিশ্বজুড়ে ৭৫ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছে।” আরো পড়ুন: আসছে অরুন্ধতী রায়ের নতুন বই ‘মাদার মেরি কামস টু মি’ নোবেলজয়ী লেখক হান ক্যাং এর সাহিত্য নিয়ে কালির বৈঠক ফ্রেডেরিক ফোরসাইথ সর্বাধিক বিক্রিত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক। ফোরসাইথ একসময় সংবাদ প্রতিবেদক এবং যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই সিক্সের তথ্যদাতা হিসেবে কাজ...
    আধুনিক আফ্রিকায় নতুন এক রাজনৈতিক জাগরণের প্রতীক হয়ে উঠেছেন বুরকিনা ফাসোর তরুণ সেনানায়ক ইব্রাহিম ত্রাউরে। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন তিনি। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নতুনভাবে সাজাচ্ছেন তিনি। সেই সঙ্গে নাড়া দিয়েছেন ভিমরুলের চাকে। গোটা সাহেল অঞ্চলে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক শক্তির প্রভাবের বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট বার্তাও দিয়েছেন। মালি ও নাইজারের সাম্প্রতিক সামরিক নেতাদের সঙ্গে একযোগে ফ্রান্সবিরোধী একটি জোট গড়ে তুলেছেন। এই ঘটনা আফ্রিকার নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে। কিন্তু এই ভবিষ্যৎ কীভাবে গড়ে উঠবে? কারা এর পৃষ্ঠপোষক? এই সামরিক বাহিনী থেকে আসা নেতাদের নিয়ে আফ্রিকার জনমনে প্রতিক্রিয়া কেমন?আরও পড়ুনযে কারণে পুতিনের নজর এখন আফ্রিকার দিকে?৩০ জুলাই ২০২২ইব্রাহিম ত্রাউরে আর নতুন যুগের বাসনা২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বুরকিনা ফাসোর তৎকালীন সামরিক শাসক পল-হেনরি সান্দাওগো দামিবাকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় আসেন...
    নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো নাচতে ভালোবাসতেন। সবকিছুর চেয়ে, এমনকি লেখালেখির চেয়ে তিনি নাচ বেশি পছন্দ করতেন।আশির কোঠায় তাঁর বয়স পৌঁছালে কিডনিজনিত অসুখে তাঁর শরীর যখন শ্লথ হয়ে যায়, তখনো তিনি নিছক গান শুনলেই উঠে দাঁলেড়িয়ে নাচতে শুরু করতেন। ছন্দ তাঁর পায়ে যেভাবে খেলত, শব্দও তেমনি হাতে খেলত, আর তা কাগজে লিখে চলত। নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গোকে আমি মনে রাখব একজন নাচের মানুষ হিসেবে। গত ২৮ মে ৮৭ বছর বয়সে তিনি চলে গেলেন অনন্তলোকে।নগুগি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন তাঁর মহান সাহিত্য–ঐতিহ্য দিয়ে। তাঁর সাহিত্য ছিল উদ্ভাবনী শৈলীতে অভিনব আর মৌলিক সমালোচনায় ঋদ্ধ। তাঁর এই সাহিত্য–ঐতিহ্য আমাদের আনন্দের সঙ্গে উৎসাহিত করে আরও ভালো কিছু করার জন্য, আরও সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। আমাদের সমাজগুলোর ভিত গড়ে দেওয়া ঔপনিবেশিক কাঠামোর বিরুদ্ধে আমরা যাঁরা লেখক, কর্মী,...
    নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো শুধু লেখকই নন, বিপ্লবীও। নিজের লেখায় গেঁথেছেন অন্তর্লীন দ্বন্দ্ব ও সংগ্রামী চেতনা। তাঁর সাহিত্যিক পরিচয় শুধু ঔপন্যাসিকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তিনি একাধারে নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সমালোচক, সমাজ-রাজনৈতিক কর্মী এবং জাতীয়তাবাদী ও বিপ্লবী চেতনার ধারক। এই ভিন্ন ভিন্ন দিকগুলো একত্র হয়ে তাঁর ব্যক্তিত্ব ও কাজের মধ্যে উপনিবেশ–উত্তর ভাষারাজনীতি ও সাহিত্যিক প্রতিরোধের হাতিয়ার নির্মাণ করেছে। বন্দিজীবনে নৃশংসতার শিকার, আত্ম-পরিচয়ের সংকট, শোষণ ও শ্রমিকশ্রেণির অধিকারের প্রশ্ন কিংবা নব্য-উদারনীতির প্রভাব—এসব রাজনৈতিক বিষয়কে নগুগি তাঁর উপন্যাস, প্রবন্ধ ও তত্ত্বে হাজির করেছেন বৈপ্লবিক কণ্ঠে। তাঁর সাহিত্যের ভাষা প্রাণ পেয়েছে দ্বন্দ্ব তাত্ত্বিক চেতনায়। ২০২১ সালে এক সাক্ষাৎকারে নগুগি বলেন, ‘আমি সংগ্রামের কথা বলি—ডায়ালেকটিক্যাল সংগ্রাম, মার্ক্সের দ্বন্দ্বতত্ত্ব, হেগেলের দ্বন্দ্বতত্ত্ব।’ এই দ্বন্দ্ব তাত্ত্বিক চেতনা শুধু তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নয়, তাঁর সাহিত্যিক কাঠামো, ভাষা নির্বাচন ও চিন্তার পরিসরকেও...
    কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী চেতনার কবি; বাংলাদেশের গণমানুষের কবি। তিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন এবং লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, গান, প্রবন্ধ, যা ছিল সব অনিয়ম-অন্যায়, অত্যাচার-অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেসব গান ও কবিতা আমাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল ’২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও। কাজী নজরুল ইসলাম লড়াই করতে গিয়ে তাঁর সাহিত্যিক জীবনের বেশির ভাগ সময়ে রাজরোষের শিকার হয়েছেন। ১৯২২-৩১ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে তাঁর পাঁচটি বই নিষিদ্ধ হয়। কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন দু’বার। ১৯২৩ সালে প্রথমবার এক বছরের জন্য কারাগারে যেতে হয় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা লেখার জন্য। ১৯৩০ সালে ‘প্রলয় শিখা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য আরেকবার কারাগারে যেতে হয়।  একের পর এক বাজেয়াপ্ত ও কারাদণ্ডাদেশে তিনি ভারতে পরিচিত হয়ে ওঠেন আপসহীন ও প্রতিবাদী কবিরূপে। স্বাধীনতাকামীদের কাছে তিনি পরিণত হন মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে। এ জন্য তাঁকে...
    দক্ষিণ এশিয়ার জাতিসত্তাগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে ঔপনিবেশিক সীমান্তছক পেরিয়ে নিজস্ব ধাঁচের রাষ্ট্র গড়তে নেমেছিল বাংলাদেশ। প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশ জাতি ও বিশ্বাসকেন্দ্রিক শ্রেষ্ঠত্ববাদ অতিক্রম করা এক গণরাষ্ট্র হয়ে আশপাশের অন্যান্য জাতিকেও মুক্তির পথ দেখাবে। বাংলাদেশের জন্ম ভারত ও পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র-ঐতিহ্যকে বড় মুশকিলে ফেলেছে।‘রাষ্ট্র’ গঠন ও পুনর্গঠনে একাত্তরের অঙ্গীকারগুলোই আবার জীবন্ত হয়েছে ‘৩৬ জুলাই’য়ের আগে-পারে। সমকালে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের জন্য এত সফল নির্দলীয় জাতীয় জাগরণের নজির নেই। ‘বাংলাদেশ মডেল’ স্বৈরশাসকদের জন্য একটা বৈশ্বিক বার্তা দিয়েছিল।কিন্তু প্রায় ১০ মাস পর আমরা কোথায় এসে দাঁড়ালাম? গণ অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশ আয়নায় কী দেখছে?যদি আমরা বিশ্বাস করি ৩৬ জুলাই সফল হয়েছে সৈনিক-জনতার ঐকমত্যে, তাহলে সেই সম্মতিকে সিভিল-মিলিটারি সম্পর্কের ঔপনিবেশিক ধরন সংস্কারেও কাজে লাগাতে হবে।স্বপ্ন ছিল গণতন্ত্রের উন্নত এক নিরীক্ষার, কিন্তু মিলছে নিরন্তর চলমান এক মবতন্ত্র। সবাই চেয়েছিল বৈষম্যের...
    ৩৪তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা আগামী ২৩ মে থেকে শুরু হবে। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চার দিনব্যাপী এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে নিউইয়র্কের জ‍্যামাইকা পারফর্মিং আর্ট সেন্টারে।  বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘ব্লকেড’ খ্যাত আমেরিকান বন্ধু ফিলিস টেইলর। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সাহিত্য সমালোচক, দার্শনিক ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) সিতারা বেগম। মেলার উদ্বোধন করবেন এই সময়ের নন্দিত কবি ও ঔপন্যাসিক সাদাত হোসাইন। অনুষ্ঠানে আরও থাকবেন ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার ড. আবদুন নূর, লেখক ও বিতার্কিক বিরূপাক্ষ পাল, কবি ও লেখক ড. আবেদীন কাদের, কবি শামস আল মমীন, কবি ও সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফি, লেখক ও সাংবাদিক সরকার কবিরুদ্দীন, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, অনুবাদক নাজমুন নেসা পিয়ারি,...
    কলোনিয়াল হ্যাংওভার শব্দটির দারুণ ট্রান্সলেশন (অনুবাদ) করেছিলেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। ট্রান্সলেশন না বলে বরং বলা যায় ‘ট্রান্সক্রিয়েশন’; অনুবাদের চমৎকারিত্ব আর অভিনবত্বের কারণে এমনটা বলা। তিনি শব্দটির অনুবাদ করেছিলেন ‘ঔপনিবেশিক ঝুলনমায়া’।ঔপনিবেশিক শাসকেরা চলে গেছে বহু বছর আগে, কিন্তু রয়ে গেছে ‘মায়া’; রয়ে গেছে প্রশাসনিক, বিচারিক ও আইনি নানা ধরনের উপাচার। এগুলো আমাদের মায়ায় আচ্ছন্ন রেখেছে। এখনো এমন একটা ধারণা বিরাজ করে, ‘উপনিবেশ উপাসনা’ যেন মুক্তির পথ। অথচ যাদের কারণে উপনিবেশ, তাদের সব কি মানা হয়? উত্তর নিশ্চিতভাবেই নেতিবাচক।ব্রিটিশদের সেই অর্থে মলাটবদ্ধ কোনো সুনির্দিষ্ট সংবিধান নেই, কিছু সাংবিধানিক নীতি ও কনভেনশন রয়েছে। তাদের লিখিত সংবিধান না থাকলেও কোনো ব্যত্যয় নেই, সাংবিধানিকতাই সেখানে চূড়ান্ত। আমরা অনেক দেশের অনুপ্রেরণায় অল্প সময়ে ভালো একটা সংবিধান করলেও তার মান্যতা নিশ্চিত করতে পারিনি।পাবলিক ইন্টারেস্ট বা জনস্বার্থ (মামলা) বিষয়টির...
    প্রতিবাদী সাহিত্য মানব সমাজের সেই আয়না, যা যুগ যুগ ধরে অন্যায়, অবিচার, শোষণ আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। এই সাহিত্য সমাজের বুকে জমে থাকা অসাম্য, অমানবিকতা এবং ক্ষমতাবানদের অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ ও বিদ্রোহের ভাব প্রকাশ করে। এর প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলো সমাজের কদর্য দিকগুলোর স্পষ্ট চিত্রায়ণ, ক্ষমতার অপব্যবহারের সমালোচনা, নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের প্রতি গভীর সহানুভূতি এবং একটি উন্নত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন।  কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা কিংবা দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকের মতো কালজয়ী রচনা এই প্রতিবাদী সাহিত্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যেখানে ঔপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খল এবং সমাজের গেঁথে বসা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ ঘোষিত হয়েছে। প্রতিবাদী সাহিত্য কেবল কালের সাক্ষী নয়, বরং এটি পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবেও কাজ করে, মানুষকে সচেতন করে তোলে এবং...
    বিশ শতকের শুরুতে অখণ্ড বাংলায় উপনিবেশবাদবিরোধী রাজনীতি প্রবল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তখনকার ব্রিটিশ-ভারতীয় ঔপনিবেশিক শাসকচক্র একে দমন করার কৌশল হিসেবে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়। শাসক লর্ড কার্জন ছিলেন এর মুখ্য পরিকল্পনাকারী ও উদ্যোক্তা। তাদের নিশ্চিত উদ্দেশ্য ছিল ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের স্বার্থ রক্ষা। আঠারো শতকে এই বাংলায় ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ নির্বিঘ্ন করার স্বার্থে শাসক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যেমন এ দেশের প্রধান দুই ধর্মীয় পরিচয়ধারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টির কৌশল হিসেবে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি গ্রহণ করেছিল, এবারেও তার ভিন্নতা হয়নি। পার্থক্য ঘটেছিল শুধু কোন সম্প্রদায়কে শাসককুল নিজ স্বার্থের পক্ষভুক্ত করবে তা নির্ধারণে। আঠারো শতকের কৌশলে তারা বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়কে নিজ পক্ষপুটে আশ্রয় দিয়ে নানাভাবে ফুলেফেঁপে ওঠার সুযোগ দিয়েছিল। শতাধিক বছরের ব্যবধানে এই সম্প্রদায়ের সুবিধাপ্রাপ্ত অংশ শিক্ষা, প্রশাসন, অর্থনীতি, বাণিজ্য সবদিক থেকে প্রতিপত্তিশালী হয়ে উঠলে শাসককুলের...
    আধুনিক সভ্যতা জ্বালানিনির্ভর। শিল্পকারখানা তো বটেই, দৈনন্দিন প্রতিটি কাজে বিদ্যুৎ ছাড়া আমরা অচল। দুনিয়াজুড়ে সাধারণভাবে কয়লা, গ্যাস, তেল প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানি বিশেষত কয়লা পোড়ালে বিপুল পরিমাণ কার্বন বাতাসে নির্গত হয়। অতিরিক্ত কার্বন বাতাসে মিশে পৃথিবীকে উষ্ণ থেকে উষ্ণতর করে ফেলছে। জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। তাই দুনিয়াব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার পরিকল্পনা চলছে। জাতিসংঘের নেতৃত্বে বিভিন্ন দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি ত্যাগ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। লক্ষ্য, ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। নেট জিরো হচ্ছে, বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ কার্বন নির্গত হচ্ছে, ঠিক ততটাই কোনো না কোনোভাবে অপসারণ করে ফেলা। অর্থাৎ ভূমণ্ডলে অতিরিক্ত কার্বন জমা হবে না– এমন একটি অবস্থা। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সদস্য দেশগুলোও নেট জিরো অর্জনের...
    শিবব্রত বর্মণের শোধ উপন্যাসটির কাহিনিতে যা আছে, তা ইতিহাস আর উপন্যাসের দ্বৈততার সবচেয়ে ভালো সংশ্লেষিত রূপ হিসেবে জারি থাকবে বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণ প্রসঙ্গে। যে উপন্যাসের মূল বিষয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গৌরবময় অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অধিকৃত বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চল এবং এই অঞ্চলের কিছু মানুষকে নিয়ে। বিষয়টিকে এমন এক ‘নন-ভায়োলেন্স’ পদ্ধতিতে তিনি নিয়ে এলেন উপন্যাসে, যা ইতিহাস আর উপন্যাসের এক দারুণ সমন্বিত রূপ হয়ে উঠল।উপন্যাসটিতে একদম শেষে কেবল কিছু ‘সহিংসতার মতো’ বিষয় এসে ধরা দিয়েছে। বিশেষভাবে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক কিংবা সাহিত্যিক বয়ানে এই বিষয় লক্ষ করা যায়: পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ভেতর যুদ্ধ। কিন্তু এই উপন্যাসে সে বিষয় নিয়ে আলাপ বেশ কমই হয়েছে। বরং এই উপন্যাসে এই প্রথাগত বয়ানের বাইরে গিয়ে একটি এলিট শ্রেণির রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাই প্রাধান্য পেয়েছে।শোধ পড়ে...
    যুক্তরাজ্যের বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক দশকের পর দশক মানুষের খুলির তৈরি পানপাত্রে পান করতেন—প্রকাশ হতে যাওয়া একটি বইয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বইটিতে লুট করা মানব দেহাবশেষ নিয়ে সহিংস ঔপনিবেশিক ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের পিট রিভার্স জাদুঘরের বিশ্ব প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কিউরেটর অধ্যাপক ড্যান হিকসের মতে, রূপাখচিত ও স্ট্যান্ডসংবলিত পালিশ করা এ খুলির কাপ ২০১৫ সাল পর্যন্ত অক্সফোর্ডের ওরচেস্টার কলেজের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে নিয়মিত ব্যবহৃত হতো।অধ্যাপক হিকস তাঁর প্রকাশিত হতে যাওয়া ‘এভরি মনুমেন্ট উইল ফল’ বইয়ে ‘মানব খুলির লজ্জাজনক ইতিহাস’ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, কাপ ছিদ্র হয়ে মদ বেরোতে শুরু করলে তা চকলেট পরিবেশনের জন্যও ব্যবহার করা হতো।অধ্যাপক হিকস তাঁর প্রকাশিত হতে যাওয়া ‘এভরি মনুমেন্ট উইল ফল’ বইয়ে ‘মানব খুলির লজ্জাজনক ইতিহাস’ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, কাপ ছিদ্র হয়ে...
    দোর ঘণ্টি শোনার পর শিল্পী ঢালী আল মামুন নিজে দরজা খুলে ভেতরে আমন্ত্রণ জানালেন। পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে বসার ঘর। স্টিলের কাঠামোর ওপর তৈরি খুব কম উচ্চতার বসার সোফা। এক পাশে ডিভানের মতো আরেকটি বসার জায়গা করে ওপরে জুড়ে দেওয়া হয়েছে গদি। ঘরজুড়ে শোভা পাচ্ছে মেলা থেকে সংগ্রহ করা নানা মুখোশ, পুতুল। ঘরের সব আসবাবে যেন শিল্পের ছোঁয়া। ঘুরেফিরে একদিকের দেয়ালে চোখ আটকে যায়। সেখানে বিশাল ক্যানভাস। সমাজের নানা অসংগতি, ক্ষমতা, দখল, নিয়ন্ত্রণ, নির্যাতন, ইতিহাস ইত্যাদির প্রভাব ফুটে উঠেছে যেন ক্যানভাসের শরীরজুড়ে। বসার ঘরের পাশে লম্বা খাবার টেবিল। সেখানে বসলেন তিনি। টেবিল-চেয়ারগুলো সাধারণের মাঝেও যেন অনন্য। টেবিলের ওপর প্লেটের নিচে দেওয়ার জন্য প্লেসমেট কিংবা চায়ের চামচ এসব থেকে চোখ সরিয়ে যেই চোখ পড়ল শিল্পীর চোখে; তখনই কেন যেন মনের ক্যানভাসে...
    বাংলা নববর্ষ আমাদের ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য উপাদান। কিন্তু এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যটি তার দীর্ঘ যাত্রাপথে বহু বাঁকবদলের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। সেই অর্জনের মাত্রা কখনো অর্থনীতি, কখনো ধর্ম, কখনো রাজনীতিকে আশ্রয় করেছে। ঔপনিবেশিক শোষণের অংশ হয়েছে কখনো, কখনো আবার পরিণত হয়েছে উপনিবেশবিরোধিতারও মুখ্য হাতিয়ারে। ফলে বাংলা নববর্ষ বিশুদ্ধ সাংস্কৃতিক রূপে নিজের অস্তিত্বকে অব্যাহত রাখতে পারেনি, এটা সত্য। আর এটা তার শক্তিরও এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। এর আরেকটি তাত্পর্যপূর্ণ দিক হলো, একটি বৃহৎ মানবমণ্ডলীর মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐক্যের সূত্র যোজনা করা। মানবের মিলনসাধন যেকোনো সংস্কৃতিরই অন্যতম বৈশিষ্ট্য, তবু বাংলা নববর্ষ এ ক্ষেত্রে বিশেষত্বমণ্ডিত হয়েছে বৃহত্তর জনপরিসরকে তার বিচিত্র প্রভাবগত শক্তিবলয়ে নিজের আওতাভুক্ত করার সক্ষমতায়, আর আনন্দ-উত্সবের সর্বজনীনতায়।এই ইতিহাস আমাদের জানা যে বঙ্গাব্দের সূচনা ঘটেছিল ষোলো শতকে সম্রাট আকবরের শাসনামলে। সৌর ও চান্দ্রবৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ের মাধ্যমে...
    উপন্যাস বা চলচ্চিত্র—যেভাবেই হোক নামটা কম-বেশি সবারই জানা। অবধারিতভাবে এটি আছে ‘বইয়ের পোকা’দের পছন্দের তালিকায়। আর সৃজনশীলতার সঙ্গে এ অবধি সেলুলয়েডে বন্দী করা হয়েছে আমেরিকান ধ্রুপদি সাহিত্যের যত গল্পকাহিনি, সেগুলোরও অন্যতম এ উপন্যাস। পাঠক এতক্ষণে কয়েকটি নামের মধ্যে ঘুরপাক খেতে শুরু করেছেন। লেখকের নামই না হয় প্রথমে বলি, ফ্রান্সিস স্কট ফিটজেরাল্ড, যিনি স্কট ফিটজেরাল্ড নামে সমধিক পরিচিত। এখন যে কেউই বলতে পারবেন, মার্কিন এই ঔপন্যাসিকের অমর ‍সৃষ্টি দ্য গ্রেট গ্যাটসবির কথাই বলা হচ্ছে।১৯২৫ সালের ১০ এপ্রিল প্রথম প্রকাশিত হয় এ উপন্যাস, প্রকাশনা সংস্থা স্ক্রিবনার। আজ প্রকাশের শত বছর পূর্ণ হচ্ছে উপন্যাসটির। এখনো এটি সমানভাবে আলোচিত, পাঠকনন্দিত এবং প্রাসঙ্গিকও বটে। তাহলে আর কী বাকি থাকে একটি বইয়ের ‘কালজয়ী’ হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের? থাকে না।তবে অবাক করার বিষয়, ভূয়সী প্রশংসা ও ইতিবাচক পর্যালোচনার...
    ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা বন্ধ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের পতাকা প্রদর্শন করেন। এ সময় তাঁদের হাতে গণহত্যা বন্ধ, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিসহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডও দেখা যায়।শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে এতে যোগ দেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী। তিনি বলেন, এই ফিলিস্তিনিদের ওপর, হত্যা-নির্যাতন, গণহত্যা সেই ১৯৪৮ সাল থেকে চলছে। তারও আগে ঔপনিবেশিক কাল থেকে উচ্ছেদ চলছে। ফিলিস্তিনে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শক্তি।অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী বলেন, ‘১৯৪৩ সালে তৎকালীন বাংলায় কৃত্রিমভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা হয়েছিল, ফসলের উৎপাদন–ঘাটতি থেকে সে দুর্ভিক্ষ হয়নি। তাতে ৩০-৪০...
    মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ইরাবতী নদীর ওপর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত আভা সেতু ধসে পড়েছে। আজ শুক্রবার দেশটিতে পরপর দুবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এ ঘটনায় দেশটির বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে থাইল্যান্ডেও।৯১ বছর বয়সী আভা সেতু পুরোনো সাগাইং সেতু নামেও পরিচিত। এটি মিয়ানমারের মান্দালয় ও সাগাইং অঞ্চলে ইরাবতী নদীর ওপর বিস্তৃত। আজ স্থানীয় সময় বিকেলে ভূমিকম্পে সেতুটি ভেঙে পড়ে।ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সাগাইং শহরের কাছে। রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৭ তীব্রতার এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের মান্দালয়, নেপিডো এবং অন্যান্য এলাকার বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়ে। ভূমিকম্প-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ২০ বছরে মিয়ানমারে এত বেশি তীব্রতার ভূমিকম্প হওয়ার নজির নেই।যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের মান্দালয়। ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ১০ কিলোমিটার গভীরে। প্রতিবেশী থাইল্যান্ড, ভারত ও বাংলাদেশে এর প্রভাব...
    জাতীয় রাজনীতি, শিল্প, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রখ্যাত ব্যক্তির নামে ঐতিহাসিক স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণের রীতি উন্নত-অনুন্নত প্রায় প্রতিটি দেশেই প্রচলিত রয়েছে। এটি কেবল একটি প্রশাসনিক বিষয় নয়, এটি একটি দেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক চেতনার প্রতিফলন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাস্তা, ভবন, প্রতিষ্ঠান, স্মৃতিস্তম্ভ, শহর বা এমনকি পুরো দেশের নাম পরিবর্তনের ঘটনা দেখা যায়। এই পরিবর্তনগুলোর পেছনে থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, ঐতিহাসিক পুনর্মূল্যায়ন, সাংস্কৃতিক পরিচয় প্রতিষ্ঠা বা ঔপনিবেশিক অতীত থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। নামকরণ ও নাম পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়া রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা সমাজের মূল্যবোধ ও আদর্শকে প্রকাশ করে।ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিহাস বহু দেশের স্থাপনাগুলোর নামে রয়ে গেছে। স্বাধীনতা অর্জনের পর অনেক দেশই ঔপনিবেশিক নাম পরিবর্তন করে নিজেদের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের মুম্বাই শহরটি ব্রিটিশ...
    পৃথিবীর বহু দেশ ভাষিক সাম্রাজ্যের কবলে পড়েছে। এতে জাতীয় আদর্শ পরিপন্থি আদর্শ অনুসরণ করে দেশগুলো নিজেদের ভাষানীতি প্রণয়ন করছে। এই বাস্তবতা থেকে ভাষিক সাম্রাজ্যবাদ ধারণার জন্ম। ভাষিক সাম্রাজ্যবাদ হলো প্রভাবশালী দেশের কোনো ভাষা কোনো অনুবর্তী দেশের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াসবিশেষ। সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিক শক্তি কর্তৃক অনুবর্তী দেশের জনগণের চাপিয়ে দেওয়ার এই প্রয়াস রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ থেকে উৎসারিত। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর রাজনৈতিক ক্ষমতা, সামরিক ক্ষমতা বা অর্থনৈতিক ক্ষমতার মাধ্যম ভাষিক সাম্রাজ্যবাদিতা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ইউরোপীয় দেশগুলোর এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার সাবেক উপনিবেশগুলোয় তাদের ভাষা দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রচলনের যে বাস্তবতা, তা মূলত ভাষিক সাম্রাজ্যবাদের বহিঃপ্রকাশ। সমসাময়িককালে আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থা, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ইত্যাদি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ভাষিক সাম্রাজ্যবাদীদের ভাষাগুলোকে বিশ্বায়নের ভাষা হিসেবে প্রচলনে তৎপর। বিশ্বজুড়ে ভাষিক সাম্রাজ্যবাদের বাস্তবতা হলো এই, সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশভুক্ত...
    জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক আবু সাঈদ খান রচিত ‘মুক্তিসংগ্রামে বিপ্লববাদ ও অন্যান্য’ গ্রন্থটিকে ঐতিহাসিক তথ্যাশ্রয়ী একটি বিশ্লেষণী গ্রন্থ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এ গ্রন্থে সুলতানি শাসনাধীন সময়ের কিছু স্পর্শকাতর অংশ, ঔপনিবেশিক ও উপনিবেশোত্তর কাল, দেশভাগ, প্রাক-স্বাধীনতাকালের ধারাক্রমিক অভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ, বাংলাদেশোত্তর অস্থির রাজনীতি, এর প্রায় সব ঐতিহাসিক চরিত্র, ধাপ, ঝাঁপ, বাঁক, অভিঘাতসহ বর্ণিত ও বিশ্লেষিত। লেখক নিজেও বর্ণিত আন্দোলনঘন সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের প্রত্যক্ষদর্শী ও অংশী। তাই তাঁর বিশ্লেষণ হয়ে উঠেছে প্রাণময়; তত্ত্বের ওপর তথ্য, স্বপ্নাবিষ্টতার ওপর বাস্তবতা, অনুমানের ওপর অভিজ্ঞতা প্রাধান্য পেয়েছে। মানুষের পক্ষে নির্মোহ হওয়া কঠিন। গণতান্ত্রিক কাঠামোয় যেহেতু প্রত্যেকের হাতে অদৃশ্য রাজদণ্ড আছে, সেহেতু মোহমুক্ত মন নিয়ে তাকে রাজ্যভার বহন ও চালনার স্বার্থে ইতিহাসের প্রবাহ বুঝতে হয়, গন্তব্যের দিকে চোখ রাখতে হয়, প্রতিবন্ধকগুলোর মুখোমুখি হওয়ার সাহস...
    ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসচর্চা গত পাঁচ দশকে বদরুদ্দীন উমর থেকে বেশি দূর এগোয়নি। বদরুদ্দীন উমরের কালজয়ী গবেষণাগ্রন্থ পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি-এর প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে, তৃতীয় ও সর্বশেষ খণ্ড ১৯৮৪ সালে। ১৯৯০ সালে বদরুদ্দীন উমরের কাঠামোকে অনুসরণ করেই সামাজিক গবেষণার আদলে ইউপিএল থেকে বের হয় ভাষা আন্দোলনের আর্থ-সামাজিক পটভূমি। আর্কাইভমূলক কিছু কাজের বাইরে এর পরের তিন দশকের ইতিহাসকারেরা তাঁদের শ্রম খরচ করেছেন প্রধানত স্বাধীনতার পরে রাজনীতিতে ক্রিয়াশীল বিবিধ পক্ষের (আওয়ামী [মুসলিম]) লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন, তমুদ্দন মজলিসসহ ‘ডানপন্থী’ গ্রুপ এবং কমিউনিস্ট পার্টিসহ ‘বামপন্থী’দের ভূমিকা মূল্যায়নে। যার চূড়ান্ত পরিণতি দাঁড়িয়েছিল দেড় দশকজুড়ে ক্ষমতার চূড়ান্ত এককেন্দ্রীকরণের সমান্তরালে মুক্তিযুদ্ধের মতো ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকেও চরম একদেশদর্শী বয়ানে এঁটে ফেলার মধ্য দিয়ে।ইতিহাসের সত্য যে কেবল তথ্যে নিহিত থাকে না, নানা রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক...
    ‘প্রতিবাদের ভাষা’ কোনো মুখস্থবিদ্যা নয়, কিংবা কোনো ঔপনিবেশিক চাতুরি থেকেও এর পয়দা হয় না। জনতা থেকে জনপরিসর, প্রকৃতি থেকে সংস্কৃতি প্রতিবাদের ভাষা গড়ে ওঠে। নির্মিত হয়। বিদীর্ণ হয়। বিকশিত ও রূপান্তরিত হয়। মানুষের সমাজে প্রতিবাদের ভাষা বলতে আমরা হয়তো কেবলমাত্র ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’ সমাজের আলাপই সামনে আনি। কারণ নিয়ানডার্থাল, ইরেকটাস, ডেনিসোভান বা ফ্লোরিয়েনসিস মানুষের প্রতিবাদের ভাষা আমাদের জানা নেই। এমনকি আমাদের ‘প্রতিবাদের ভাষার’ বয়ান বহুলভাবে, হয়তো অধিকাংশ সময় নিষ্ঠুরভাবে, প্রবল এথনোপোসেন্ট্রিক। প্রতিবাদের ভাষা বলতে আমরা কেবল ‘মানুষকেন্দ্রিক’ প্রতিবাদের ভাষা বুঝি। আড়াল ও অপর হয়ে যায় পাখি, মাছ, গাছ, পতঙ্গ প্রাণ-প্রকৃতি। সাফারিং পার্কের বন্দিদশা ভেঙে মুক্ত হওয়া নীলগাইয়ের প্রতিবাদের ভাষা বোঝার দায় ও দরদ এখনও আমাদের তৈরি হয় নাই। নির্বিচার বালু উত্তোলনের নামে নৃশংসভাবে ক্ষতবিক্ষত করা একটি মুমূর্ষু নদীর প্রতিবাদের ভাষা কী?...
    জলবায়ু পরিবর্তন এমন এক বিষয়, শুনলেই সাধারণত আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। অসময়ে বন্যা, তীব্র জলোচ্ছ্বাস, খরা, বাসযোগ্যহীন লোকালয় ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কাবু মানব জাতির চিত্র ফুটে ওঠে। মনে হয়, এক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই মানুষের এই দুর্দশা। বস্তুত এমন চিত্র তুলে ধরা হয়ে থাকে, যেন জলবায়ু পরিবর্তন এক বিরাট দানবীয় বিষয়। পৃথিবীর ‘সাজানো গোছানো পরিবেশ’ তছনছ করে দিচ্ছে। বৈশ্বিক এই ধারণার সঙ্গে বঙ্গীয় ব-দ্বীপে অবস্থিত আমাদের প্রিয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশও এই ধারণায় বিস্ময়করভাবে প্রভাবিত। প্রশ্ন হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে এই ধারণার দার্শনিক রূপরেখা কী? বৈশ্বিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনার মূলধারায় ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ শব্দটি চার দশক ধরে সাধারণত বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বৈজ্ঞানিক অনুমান ও অনুসন্ধানের ভিত্তিতে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন এটা ব্যবহারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এর সাধারণ ভাষ্য অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলের অবনতির মূল হোতা বায়ুদূষণের কারণে...
    শওকত আলী বাংলা কথাসাহিত্যে একজন শক্তিমান ও বিরলপ্রজ ঔপন্যাসিক। স্বতঃস্ফূর্ততা ও সাহসিকতার সঙ্গে তিনি তাঁর বক্তব্যকে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। ষাটের দশকে বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে প্রবেশ করেই তিনি তাঁর সক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রচলিত সাহিত্যাদর্শের সমান্তরাল ধারার বিষয়ে যেমন নিয়ে আসেন অভিনবত্ব, কলাকৌশলে নিয়ে আসেন বৈচিত্র্যময় টেকনিক, তেমনি ট্রিটমেন্ট ও পদ্ধতিগত ভিন্নতা। বাংলা কথাসাহিত্যের প্রবহমান ধারায় অঙ্গীভূত থেকে, অগ্রজদের সাহিত্যকর্মের নির্যাস আহরণ করে, সমকালীনদের  মধ্যে থেকেও শওকত আলী নির্মাণ করেছেন আপন শিল্পভুবন। সাতচল্লিশপূর্ব ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কাল, ষাটের দশকের নব্য ঔপনিবেশিক কাল, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা-পরবর্তী বাঙালি জীবন, ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থান, বিশ শতকের প্রযুক্তিযুগসহ দীর্ঘ পাঁচ দশকের বাঙালি জীবন তাঁর উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে স্বতন্ত্রধারায়। প্রথম উপন্যাস ‘পিঙ্গল আকাশ’-এ অভাজনের জীবনমথিত কান্না শোনা গেলেও এ উপন্যাসে শহর ও গ্রামকে তিনি একীভূত করেছেন। শওকত আলীর কথাসাহিত্যে...
    ৭২ বছর বয়সী তুর্কি লেখক বলেছেন তাঁর বাবার শৈল্পিক পৃষ্ঠপোষকতা, মধ্যপ্রাচ্যে একজন নারীবাদী হওয়া, ইস্তাম্বুলের প্রতি তাঁর ভালোবাসা আর সরকারি দমনপীড়নভীতি ইত্যাদি বিবিধ প্রসঙ্গে। কথা বলেছেন হ্যানা নিউটন। অনুবাদ: আহসানুল করিম আমি বেড়ে উঠেছি একটি মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া সেক্যুলার পরিবারে। বাবার বড় একটি লাইব্রেরি ছিল। তিনি শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ছিলেন এবং প্রায়ই জঁ-পল সার্ত্রের কথা বলতেন। অন্যদিকে যখন আমার বন্ধুদের বাড়িতে যেতাম, দেখতাম তাদের বাড়িতে তেমন বেশি বইপত্র নেই। তাদের বাবারা চাইতেন তারা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা (পাশা), ধনী রাজনীতিবিদ, এমনকি ধর্মের পথে বীর হয়ে উঠুক। তারা কেউ কোনোদিন বলেনি: “একজন কল্পনাশক্তিসম্পন্ন লেখক কিংবা শিল্পী হও।” আমার বাবা ছিলেন ব্যতিক্রম। আমার বাবা ছিলেন একজন স্বাপ্নিক মানুষ যিনি কবি হতে চেয়েছিলেন। আমার মা ছিলেন বাস্তববাদী। তিনি বলতেন, “সোনা, যদি সত্যিই তুমি একজন...
۱