‘আমার চিত্রকর সত্তার মৃত্যু ঘটিয়েছি’
Published: 30th, January 2025 GMT
৭২ বছর বয়সী তুর্কি লেখক বলেছেন তাঁর বাবার শৈল্পিক পৃষ্ঠপোষকতা, মধ্যপ্রাচ্যে একজন নারীবাদী হওয়া, ইস্তাম্বুলের প্রতি তাঁর ভালোবাসা আর সরকারি দমনপীড়নভীতি ইত্যাদি বিবিধ প্রসঙ্গে। কথা বলেছেন হ্যানা নিউটন। অনুবাদ: আহসানুল করিম
আমি বেড়ে উঠেছি
একটি মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া সেক্যুলার পরিবারে। বাবার বড় একটি লাইব্রেরি ছিল। তিনি শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ছিলেন এবং প্রায়ই জঁ-পল সার্ত্রের কথা বলতেন। অন্যদিকে যখন আমার বন্ধুদের বাড়িতে যেতাম, দেখতাম তাদের বাড়িতে তেমন বেশি বইপত্র নেই। তাদের বাবারা চাইতেন তারা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা (পাশা), ধনী রাজনীতিবিদ, এমনকি ধর্মের পথে বীর হয়ে উঠুক। তারা কেউ কোনোদিন বলেনি: “একজন কল্পনাশক্তিসম্পন্ন লেখক কিংবা শিল্পী হও।” আমার বাবা ছিলেন ব্যতিক্রম।
আমার বাবা ছিলেন একজন স্বাপ্নিক মানুষ
যিনি কবি হতে চেয়েছিলেন। আমার মা ছিলেন বাস্তববাদী। তিনি বলতেন, “সোনা, যদি সত্যিই তুমি একজন ঔপন্যাসিক হতে চাও, তাহলে টাকাপয়সার মুখ দেখবে না। তারচেয়ে বরং একজন স্থপতি হও।”
২২ বছর বয়সে
আমি মাকে বলেছিলাম, “আমি চিত্রশিল্পী হব না। একজন লেখক হব।” এরপর আমি আমার ভেতরের চিত্রশিল্পীকে মেরে ফেললাম। আমি মনে করি, শেষমেশ একজন চিত্রধর্মী ঔপন্যাসিক হয়ে উঠেছি। যখন আঁকি, ঠিক স্নানঘরে গান গাওয়া একজন মানুষের মতো হয়ে উঠি। কে শুনছে মোটেই ভাবি না, কারণ কেউ আমার বাজে কণ্ঠটা শুনছে না। আমি সেখানে সুখী। কিন্তু যখন উপন্যাস লিখি, তখন আমার সঙ্গী কেবল নীরবতা। আমি যেন দাবাড়ুর মতো, শব্দগুলো তুলছি, মাথা চুলকাচ্ছি। তখন আমি অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত এবং মস্তিষ্কনির্ভর হয়ে উঠি।
আমার শিক্ষার্থীদের যদি বলি
“একটি সাদা কাগজ নাও আর লেখো,” তারা আতঙ্কিত হয়ে উঠবে। যদি বলি, “তোমার সবচেয়ে অপছন্দের জিনিস কী? আজ সকালে কী খেয়েছিলে?” এসব নিয়ে তখন তারা কল্পনা করতে পারবে। সেই জিনিসগুলোর ওপর মনোযোগ দাও যা তুমি জানো, তারপর তোমার কল্পনার লাগাম ছেড়ে দাও।
l৭ পৃষ্ঠার পর
আধুনিকতা বনাম ঐতিহ্য
এটা শুধু তুর্কি সমাজের সমস্যা নয়, বরং সারা বিশ্বের মানবতার একটি সমস্যা। তবে এটা বেশি দৃশ্যমান সেইসব দেশে; যেগুলোকে তৃতীয় বিশ্ব বা উত্তর-ঔপনিবেশিক দেশ বলা হয়ে থাকে। কারণ, সেখানে এই দ্বন্দ্ব আরও স্পষ্ট। মূলত প্রত্যেকেই আধুনিকতা চায়, কিন্তু একই সাথে স্থানীয় সংস্কৃতিকে সম্মান জানাতে চায়, যা আসলে অসম্ভব। আধুনিকতা অনেক ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করে ফেলে। আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে ভালোবাসি।
ইস্তাম্বুল আমার স্মৃতির সূচক
আমি আমার পুরো জীবন এখানেই কাটিয়েছি। এই শহরের সাথে আমার একটি শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে। কোনো ফোয়ারা বা সেতু পেরিয়ে যাওয়ার সময় আমি সেই সময়ের ঘটনাগুলো স্মরণ করি– ঈর্ষা, ব্যর্থতা, প্রেমে পড়ার মুহূর্ত অথবা প্রথম বই প্রকাশিত হওয়া আর বইয়ের দোকানের জানালায় সেই বই দেখতে পাওয়ার স্মৃতি। এই শহর শেষমেশ একটি যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়; যা স্মৃতিগুলো উস্কে দ্যায় আর তাদের বাঁচিয়ে রাখে।
অনেক কিছুই ভয় পাই
আমার বিরুদ্ধে প্রচারণা, শারীরিক হামলা, সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমার বই নিষিদ্ধ হওয়া। সারা জীবন আমি দমন আর বিপদের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলেছি। আমার সামান্য খ্যাতি আছে, তাই এমন কিছু কথা বলতে পারি, যা অন্যরা বলতে পারে না। এটি একটি বিশেষ সুবিধা।
সাহিত্য শুধু
দমননিপীড়ন লিপিবদ্ধ করার জন্য নয়, বরং এই নিপীড়নের তলদেশে যে মানবতা রয়েছে, তা আবিষ্কার করার জন্যও।
মানব চরিত্র কী?
শেষ পর্যন্ত এটাই সব সাহিত্যের মূল বিষয়।
আমি রান্না করতে ভালোবাসি
একজন নারী অধিকার সমর্থক বা একজন নারীবাদী হতে হলে– যতটা নারীবাদী মধ্যপ্রাচ্যে একজন পুরুষ হতে পারে– আপনাকে রান্নাঘরে কাজ করতে হবে এবং নিজের পরিবারের জন্য রান্না করতে হবে। আমার ক্ষেত্রে এর মানে হলো স্ত্রীকে বলা, “আমি কিছুদিনের জন্য রান্নার দিকটা সামলাব।”
আমার বাবা অটোমান কবিতা আবৃত্তি করতেন। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল অসাধারণ। তিনি তুর্কি জাতীয় ব্রিজ দলের সদস্য ছিলেন। ব্রিজ খেলায় ভালো হওয়ার আসল উপায় হলো তীক্ষ্ণ স্বল্পমেয়াদি স্মৃতিশক্তি থাকা।
একজন হৃদয়বান লেখক, একজন ভালো মানুষ, যে ভালো কিছু বই লিখেছে এবং কিছু শিল্পকর্ম তৈরি করেছে .
সূত্র: গার্ডিয়ান
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহত হওয়ার ঘটনার পর দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এ ব্যাংকের অবস্থান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর অনেকেই স্কিন (চামড়া বা ত্বক) দান করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করছেন। স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীকেও বাঁচানো সম্ভব।
২১ জুলাই দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। গত সোমবার রাত ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৩৪ জন মারা গেছে। আর সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৪৫ জন। তাদের মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৩৩ জন।
দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।জীবিত ব্যক্তির শরীর থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা ত্বক মারাত্মকভাবে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া যে কেউ চাইলে মরণোত্তর ত্বক দান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দাতার মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মরদেহ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা হয়। পরে সেই ত্বক দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
ওজন কমানোসহ কিছু প্লাস্টিক সার্জারির পর বেঁচে যাওয়া ত্বক সংরক্ষণ করার মধ্য দিয়ে দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। আগে এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর বাড়তি ত্বক ফেলে দেওয়া হতো।
স্কিন ব্যাংকের সমন্বয়কারী ও জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে; বিশেষত অনেক নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করেছেন।
তবে সমস্যা হলো, আগ্রহী ব্যক্তিদের বেশির ভাগ চাইছেন, মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের শরীরে যাতে তাঁদের দান করা ত্বক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে প্রক্রিয়া শেষে কার দান করা ত্বক কার শরীরে ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া ত্বক দান করার ক্ষেত্রে স্ক্রিনিংসহ পুরো প্রক্রিয়া শুনে অনেকে আর আগ্রহ দেখাননি। এখন পর্যন্ত যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ জন ত্বক দান করতে চেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক মাহবুব হাসান।
ভবিষ্যতে দগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় ত্বক সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। ত্বক সংগ্রহের পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে সেই ত্বক পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।মাহবুব হাসান, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক।৩ জুলাই মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম আন্তর্জাতিক দগ্ধ ও আঘাতপ্রাপ্তদের সম্মেলন। এই সম্মেলনে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ফার্স্ট স্কিন ব্যাংক ইন বাংলাদেশ: দ্য ওয়ে অব ওভার কামিং দ্য চ্যালেঞ্জেস’ শিরোনামের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহবুব হাসান। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। আর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।
আপাতত রেজিস্ট্রেশন ও স্ক্রিনিংদেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংক উদ্বোধন করা হয় গত ৯ জানুয়ারি। তবে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাংকটিতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এই ব্যাংকে দুজন চিকিৎসক ও একজন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন।
স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যাংকে ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।
স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ত্বকদানের আহ্বান জানিয়ে অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ভুল তথ্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুনস্কিন ব্যাংক চালু হলো বাংলাদেশে, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত২৫ জুলাই ২০২৫মাইলস্টোনের ঘটনার পর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অনেকেই ত্বক দান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক সংরক্ষিত আছে।
এ বিষয়ে চিকিৎসক মাহবুব হাসান বলেন, এ মুহূর্তে ত্বকদানে আগ্রহী ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশন আর স্ক্রিনিং করে রাখার বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের কাছ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা যায়।
সংগ্রহ করা ত্বক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখলে পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে