Prothomalo:
2025-11-02@20:50:40 GMT

উপন্যাসের অন্দরে ইতিহাস

Published: 24th, April 2025 GMT

শিবব্রত বর্মণের শোধ উপন্যাসটির কাহিনিতে যা আছে, তা ইতিহাস আর উপন্যাসের দ্বৈততার সবচেয়ে ভালো সংশ্লেষিত রূপ হিসেবে জারি থাকবে বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণ প্রসঙ্গে। যে উপন্যাসের মূল বিষয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গৌরবময় অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অধিকৃত বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চল এবং এই অঞ্চলের কিছু মানুষকে নিয়ে। বিষয়টিকে এমন এক ‘নন-ভায়োলেন্স’ পদ্ধতিতে তিনি নিয়ে এলেন উপন্যাসে, যা ইতিহাস আর উপন্যাসের এক দারুণ সমন্বিত রূপ হয়ে উঠল।

উপন্যাসটিতে একদম শেষে কেবল কিছু ‘সহিংসতার মতো’ বিষয় এসে ধরা দিয়েছে। বিশেষভাবে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক কিংবা সাহিত্যিক বয়ানে এই বিষয় লক্ষ করা যায়: পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ভেতর যুদ্ধ। কিন্তু এই উপন্যাসে সে বিষয় নিয়ে আলাপ বেশ কমই হয়েছে। বরং এই উপন্যাসে এই প্রথাগত বয়ানের বাইরে গিয়ে একটি এলিট শ্রেণির রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাই প্রাধান্য পেয়েছে।

শোধ পড়ে শেষ করার পর একজন প্রকৃত পাঠক বলতে বাধ্য হবেন, ‘দুর্দান্ত একটা উপন্যাস পড়ে শেষ করলাম!’ ইতিহাস যে এভাবে কথাসাহিত্য হতে পারে, তা ঔপন্যাসিক ‘দাবা’ গল্পে আমাদের একটু জানান দিয়েছিলেন, কবছর আগে। সেটা এবার পুরোপুরি করে দেখালেন এই উপন্যাসে। কারণ, সুরাইয়া গল্পগ্রন্থের ‘দাবা’ গল্প যেখানে শুরু হয়েছিল, শোধ উপন্যাস সেইখানে প্রায় শেষ হয়েছে।

এই উপন্যাসটির প্লট এগিয়েছে দাবা খেলার সঙ্গে। উপন্যাসের সূচনা হয়েছে নিম্নোক্ত বাক্য দিয়ে, ‘দাবা এক হিংস্র খেলা। যে বোঝে সে জানে’। এই বাক্য দিয়ে শুরু হওয়ার ভেতর এক নতুন গন্তব্যের দিকে এগিয়ে গেছে দুজন দাবাড়ু। সঙ্গে এগিয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: আফসান চৌধুরী আর ফিরোজ বেগের ভেতর চলমান দাবার লড়াই পরবর্তী সময়ে এই জনযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে একই বিন্দুতে। ঔপন্যাসিক দৈশিক আর বৈদেশিক রাজনীতির নানা ঘটনাকেও একত্র করেছেন দাবার চালের সঙ্গে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আরও হলো, আফসান চৌধুরী দাবা খেলার বিষয়টি একান্তই নিজ থেকে শিখেছে। অপর দিকে ফিরোজ বেগ দাবা খেলা শিখেছে একটি প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির ভেতর দিয়ে। আর এই বিষয়টি ঔপন্যাসিক পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে মিলিয়েছেন। অর্থাৎ আফসান চৌধুরী যেমন দাবা খেলেছে একজন প্রশিক্ষিত ও পদকধারী ব্যক্তির বিপরীতে, ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতার জন্য যাঁরা যুদ্ধ করেছিলেন, তাঁরাও কোনো রাষ্ট্রীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কোনো প্রশিক্ষিত বাহিনী হিসেবে কাজ করেননি। কিন্তু তারপরও ফিরোজ বেগ দাবা খেলায় মার খেয়েছে আফসান চৌধুরীর কাছে। আর মুক্তিযুদ্ধে দারুণভাবে মার খেয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, এই অনিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বললে গেরিলাদের কাছে। এসব বিষয় আবার, মানে গেরিলাযুদ্ধ সম্পর্কে আফসান চৌধুরীর পড়ালেখাও ছিল। কারণ, ক্লজভিটাস পড়ার অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল বলেই ঔপন্যাসিক জানাচ্ছেন উপন্যাসে।

এই উপন্যাসের একটি ঐতিহাসিক সত্য ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত টর্চার সেলের অনুষঙ্গ। এ বিষয়ে জাহানারা ইমাম আমাদের জানিয়েছেন তাঁর একাত্তরের দিনগুলি শীর্ষক স্মৃতিকথায়। কিন্তু বিষয় তার চেয়ে আরও একটু এগিয়ে। এই উপন্যাসে আফসান চৌধুরী যা করেনি, তার জন্য ফিরোজ বেগের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, এমন সৈনিকদের দিয়ে তাকে টর্চার সেলে নিয়ে যায়। সেখান থেকে মুক্তিও পাবে বলে জানায় ফিরোজ বেগ, যদি আফসান চৌধুরী দাবা খেলায় তার কাছে হারতে রাজি থাকে। কিন্তু উপন্যাসের শেষে এসে দৃশ্যমান হয়, যে চালে ফিরোজ বেগ তাকে পাকিস্তান আর্মির হাতে তুলে দিয়েছিল, ঠিক সেই চালেই আফসান চৌধুরী আবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বেশ ভালোমতোই ভড়কে দিয়েছে। এই দুটি প্রধান কাহিনি ছাড়া, এই কম পরিসরের উপন্যাসে, ষাট-সত্তরের দশকের উঠতি ঢাকার নানা বিষয় গ্রন্থিত হয়েছে, যা সামাজিক ও ঐতিহাসিক কারণে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

সব ছাড়া, এই উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর থ্রিলারধর্মিতা। একটা টান টান উত্তেজনা পাঠক সব সময়ই নিজের উপলব্ধিতে অনুধাবন করতে পারবেন। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখিত বহু ক্লিশে উপন্যাসের চেয়ে এই উপন্যাস বেশখানিক ভিন্নতা আনতে পারবে। ঔপন্যাসিক দারুণ এক ভাষিক বয়ান-নির্মাণের মাধ্যমে উল্লেখিত প্রায় সবকিছুকে নির্মাণ করেছেন, বেশ সংহতভাবেই যা পাঠককে এই উপন্যাস একবসায় পাঠ করতে বাধ্যই করবে।

শোধ

শিবব্রত বর্মন

প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা; প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৫; প্রচ্ছদ: সব্যসাচী মিস্ত্রী; ৮৮ পৃষ্ঠা;

দাম: ২৭৫ টাকা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফস ন চ ধ র উপন য স র ঔপন য স ক

এছাড়াও পড়ুন:

‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’

সাপ্তাহিক ‘পঙক্তি’র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নারীর সমান অধিকার, সাংস্কৃতিক জাগরণ ও মুক্তচিন্তার বিকাশ ছাড়া বৈষম্যহীন সমাজ গঠন সম্ভব নয় এমন মত প্রকাশ করেছেন বক্তারা।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাপ্তাহিক পঙক্তির দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আরো পড়ুন:

‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’সহ ৩৮ দাবি সংবাদকর্মীদের 

‘সাম্য, মর্যাদা ও আলোকিত সমাজের স্বপ্নে ৭১ ও ২৪ এর তরুণরা’

অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, “নারীরা অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও পুরুষতান্ত্রিক নানা বৈষম্য ও হেনস্তার শিকার হন। আমরা দেখছি, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও নারী ও শিশুরা লাঞ্ছিত, নিপীড়িত হচ্ছে, এটি লজ্জার বিষয়। আমরা এমন সমাজ চাই না। আমরা চাই একটি সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত সমাজ, যেখানে নারী–পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত থাকবে।”

প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া বলেন, “আমরা বর্তমানে একটি সাংস্কৃতিকভাবে খারাপ সময় পার করছি। একটি নতুন রাজনৈতিক আন্দোলন বারবার ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে যে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, তাতে একমাত্র একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবই আমাদের জাতিকে রক্ষা করতে পারে।”

কবি ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান বলেন, “ফেসবুক–ইউটিউবের যুগে একটি সাহিত্য পত্রিকা টিকিয়ে রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। বর্তমানে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক ধরনের বৈরী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আক্রান্ত হচ্ছে মাজার, দরগা, শিল্পী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক তৎপরতা। এই আক্রমণ জাতিসত্তার উপর আক্রমণ, আমাদের শিল্প–সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সুকুমার ভিত্তির উপর আঘাত। এর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াই করতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে সাপ্তাহিক পঙ্ক্তির সম্পাদক কবি জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না ওরফে পান্না বেগম বলেন, “আজ আমি খুব আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত। আমি একজন সফল নারী বলে নিজেকে সম্মান করি। আমি ২৬ বছর ধরে কাজ করি। কারোর মুখাপেক্ষী হইনি। একটি পত্রিকা কারোর সহযোগিতা ছাড়া নিয়মিত প্রকাশ করা এতোটা সহজ নয়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আজকের এই জায়গাটি তৈরি হয়েছে।”

বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মফিজুর রহমান বাবু বলেন, “সাপ্তাহিক পঙ্ক্তি পত্রিকাটি নিয়ে প্রথম থেকেই আমার একটি চিন্তা ছিল। পত্রিকাটির নাম পঙ্ক্তি কেন? খুব চিন্তা করে এর দুইটি কারণ খুঁজে পেলাম। একটি হলো-এই পত্রিকাটির সম্পাদক একজন কবি ও সাংবাদিক। উনার কবিসত্তার চিন্তাধারা থেকে এই নামটি নির্ধারণ করেছেন। কারণ পঙ্ক্তি শব্দের অর্থ কবিতার লাইন বা সারি। আর দ্বিতীয়টি হলো- সম্পাদকের একমাত্র কন্যার নাম পঙ্ক্তি। সন্তানের প্রতি একজন মায়ের যে অসাধারণ ভালোবাসা, তারই বহিঃপ্রকাশ হলো সাপ্তাহিক পঙ্ক্তি।”

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক মানিক মুনতাসির, কবি ও সাংবাদিক বজলুর রহমান, কবি মোশাররফ হোসেন ইউসূফ, বাংলানিউজের সাংবাদিক তুলনা আফরিন প্রমুখ।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খুলনায় বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল, ভোলা সদরে কার্যক্রম স্থগিত
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলো কেন
  • বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা পুরস্কার এবং লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডের আবেদন করুন
  • নোবিপ্রবিসাসের বর্ষসেরা সাংবাদিক রাইজিংবিডি ডটকমের শফিউল্লাহ
  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • ১০০ কোটির সম্পদ, স্বামীর প্রতারণা, ৪৭ বছর বয়সেই মারা যান এই নায়িকা
  • তানজানিয়ায় ‘সহিংস’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী সামিয়া
  • শিল্পের আয়নায় অতীতের ছবি
  • সনদ বাস্তবায়নে আবারো কমিশনের সভা আয়োজনের দাবি