Prothomalo:
2025-08-01@04:45:13 GMT

উপন্যাসের অন্দরে ইতিহাস

Published: 24th, April 2025 GMT

শিবব্রত বর্মণের শোধ উপন্যাসটির কাহিনিতে যা আছে, তা ইতিহাস আর উপন্যাসের দ্বৈততার সবচেয়ে ভালো সংশ্লেষিত রূপ হিসেবে জারি থাকবে বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণ প্রসঙ্গে। যে উপন্যাসের মূল বিষয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গৌরবময় অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অধিকৃত বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চল এবং এই অঞ্চলের কিছু মানুষকে নিয়ে। বিষয়টিকে এমন এক ‘নন-ভায়োলেন্স’ পদ্ধতিতে তিনি নিয়ে এলেন উপন্যাসে, যা ইতিহাস আর উপন্যাসের এক দারুণ সমন্বিত রূপ হয়ে উঠল।

উপন্যাসটিতে একদম শেষে কেবল কিছু ‘সহিংসতার মতো’ বিষয় এসে ধরা দিয়েছে। বিশেষভাবে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক কিংবা সাহিত্যিক বয়ানে এই বিষয় লক্ষ করা যায়: পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ভেতর যুদ্ধ। কিন্তু এই উপন্যাসে সে বিষয় নিয়ে আলাপ বেশ কমই হয়েছে। বরং এই উপন্যাসে এই প্রথাগত বয়ানের বাইরে গিয়ে একটি এলিট শ্রেণির রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাই প্রাধান্য পেয়েছে।

শোধ পড়ে শেষ করার পর একজন প্রকৃত পাঠক বলতে বাধ্য হবেন, ‘দুর্দান্ত একটা উপন্যাস পড়ে শেষ করলাম!’ ইতিহাস যে এভাবে কথাসাহিত্য হতে পারে, তা ঔপন্যাসিক ‘দাবা’ গল্পে আমাদের একটু জানান দিয়েছিলেন, কবছর আগে। সেটা এবার পুরোপুরি করে দেখালেন এই উপন্যাসে। কারণ, সুরাইয়া গল্পগ্রন্থের ‘দাবা’ গল্প যেখানে শুরু হয়েছিল, শোধ উপন্যাস সেইখানে প্রায় শেষ হয়েছে।

এই উপন্যাসটির প্লট এগিয়েছে দাবা খেলার সঙ্গে। উপন্যাসের সূচনা হয়েছে নিম্নোক্ত বাক্য দিয়ে, ‘দাবা এক হিংস্র খেলা। যে বোঝে সে জানে’। এই বাক্য দিয়ে শুরু হওয়ার ভেতর এক নতুন গন্তব্যের দিকে এগিয়ে গেছে দুজন দাবাড়ু। সঙ্গে এগিয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: আফসান চৌধুরী আর ফিরোজ বেগের ভেতর চলমান দাবার লড়াই পরবর্তী সময়ে এই জনযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে একই বিন্দুতে। ঔপন্যাসিক দৈশিক আর বৈদেশিক রাজনীতির নানা ঘটনাকেও একত্র করেছেন দাবার চালের সঙ্গে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আরও হলো, আফসান চৌধুরী দাবা খেলার বিষয়টি একান্তই নিজ থেকে শিখেছে। অপর দিকে ফিরোজ বেগ দাবা খেলা শিখেছে একটি প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির ভেতর দিয়ে। আর এই বিষয়টি ঔপন্যাসিক পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে মিলিয়েছেন। অর্থাৎ আফসান চৌধুরী যেমন দাবা খেলেছে একজন প্রশিক্ষিত ও পদকধারী ব্যক্তির বিপরীতে, ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতার জন্য যাঁরা যুদ্ধ করেছিলেন, তাঁরাও কোনো রাষ্ট্রীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কোনো প্রশিক্ষিত বাহিনী হিসেবে কাজ করেননি। কিন্তু তারপরও ফিরোজ বেগ দাবা খেলায় মার খেয়েছে আফসান চৌধুরীর কাছে। আর মুক্তিযুদ্ধে দারুণভাবে মার খেয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, এই অনিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বললে গেরিলাদের কাছে। এসব বিষয় আবার, মানে গেরিলাযুদ্ধ সম্পর্কে আফসান চৌধুরীর পড়ালেখাও ছিল। কারণ, ক্লজভিটাস পড়ার অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল বলেই ঔপন্যাসিক জানাচ্ছেন উপন্যাসে।

এই উপন্যাসের একটি ঐতিহাসিক সত্য ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত টর্চার সেলের অনুষঙ্গ। এ বিষয়ে জাহানারা ইমাম আমাদের জানিয়েছেন তাঁর একাত্তরের দিনগুলি শীর্ষক স্মৃতিকথায়। কিন্তু বিষয় তার চেয়ে আরও একটু এগিয়ে। এই উপন্যাসে আফসান চৌধুরী যা করেনি, তার জন্য ফিরোজ বেগের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, এমন সৈনিকদের দিয়ে তাকে টর্চার সেলে নিয়ে যায়। সেখান থেকে মুক্তিও পাবে বলে জানায় ফিরোজ বেগ, যদি আফসান চৌধুরী দাবা খেলায় তার কাছে হারতে রাজি থাকে। কিন্তু উপন্যাসের শেষে এসে দৃশ্যমান হয়, যে চালে ফিরোজ বেগ তাকে পাকিস্তান আর্মির হাতে তুলে দিয়েছিল, ঠিক সেই চালেই আফসান চৌধুরী আবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বেশ ভালোমতোই ভড়কে দিয়েছে। এই দুটি প্রধান কাহিনি ছাড়া, এই কম পরিসরের উপন্যাসে, ষাট-সত্তরের দশকের উঠতি ঢাকার নানা বিষয় গ্রন্থিত হয়েছে, যা সামাজিক ও ঐতিহাসিক কারণে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

সব ছাড়া, এই উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর থ্রিলারধর্মিতা। একটা টান টান উত্তেজনা পাঠক সব সময়ই নিজের উপলব্ধিতে অনুধাবন করতে পারবেন। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখিত বহু ক্লিশে উপন্যাসের চেয়ে এই উপন্যাস বেশখানিক ভিন্নতা আনতে পারবে। ঔপন্যাসিক দারুণ এক ভাষিক বয়ান-নির্মাণের মাধ্যমে উল্লেখিত প্রায় সবকিছুকে নির্মাণ করেছেন, বেশ সংহতভাবেই যা পাঠককে এই উপন্যাস একবসায় পাঠ করতে বাধ্যই করবে।

শোধ

শিবব্রত বর্মন

প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা; প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৫; প্রচ্ছদ: সব্যসাচী মিস্ত্রী; ৮৮ পৃষ্ঠা;

দাম: ২৭৫ টাকা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফস ন চ ধ র উপন য স র ঔপন য স ক

এছাড়াও পড়ুন:

‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।

আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।

আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।

সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।

রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট
  • পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না: আসিফ নজরুল
  • বিসিআইসির নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ
  • এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী প্রস্তুতি নিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন
  • ৪৪তম বিসিএস: মনোনীত প্রার্থীদের তথ্য চেয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
  • ‘আগামীর বাংলাদেশে মিডিয়াকে দালাল হিসেবে দেখতে চাই না’ 
  • ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
  • মাইলস্টোনে দগ্ধ ৩৩ জন এখনো ভর্তি, আইসিইউতে ৩
  • শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনলে বোঝা যায়, তাঁর এখনো প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা আছে: আইন উপদেষ্টা
  • দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে